কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছেন কূটনীতিক কাজী আনারকলি

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২২, ১২:৩৭ এএম

বাসায় মাদক রাখার অভিযোগে ইন্দোনেশিয়া থেকে ফিরিয়ে আনা বাংলাদেশি কূটনীতিক কাজী আনারকলির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। দেশের ভাবমূর্তির সঙ্গে জড়িত এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ প্রশাসনিক শাস্তির কথা বলেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে ওএসডি হওয়া এই কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুতির ইঙ্গিতও দেয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটির চাহিদার প্রেক্ষাপটে মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সভাপতি মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়া ফেরত ওই কূটনীতিকের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি আমাদের দেশের ভাবমূর্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ও কঠোর অবস্থানে। ইতোমধ্যে তাকে ওএসডি করা হয়েছে। এছাড়া একটি কমিটি কাজ করছে। ওই কর্মকর্তার অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ প্রশাসনিক শাস্তি হতে পারে।’

ইন্দোনেশিয়ায় কী ঘটেছিল সেটা জানার জন্য দেশটির সরকারের কাছেও চিঠি দিয়ে অনুরোধ করা হয়েছে বলেও জানান কমিটির সভাপতি। বাসায় নিষিদ্ধ মাদক মারিজুয়ানা রাখার অভিযোগে নাইজেরিয়ান বন্ধুসহ সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ায় আটক হয়েছিলেন বাংলাদেশি কূটনীতিক কাজী আনারকলি। প্রায় ২৪ ঘণ্টা তিনি আটক ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের ডিটেনশন সেন্টারে। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে কূটনৈতিক প্রচেষ্টায়, বিশেষত ইন্দোনেশিয়া সরকারের বদান্যতায় তিনি মুক্তি পান।

পরে তাৎক্ষণিকভাবে ওই কর্মকর্তাকে ঢাকায় ফেরত আনা হয়। বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশ মিশনে এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে ইতোপূর্বে কতজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, কমিটির পক্ষ থেকে তা জানতে চাওয়া হবে উল্লেখ করে ফারুক খান বলেন, ‘গত ১০ বছরে বিভিন্ন মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কী ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তার তথ্য চাওয়া হবে। আমরা ওই তথ্য সব মিশনে পাঠানোর সুপারিশ করব।’

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র সফরকালে গত ৭ আগস্ট বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমিনের বৈঠকে ৯৯ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্য ও সেবা বিনাশুল্কে চীনে প্রবেশাধিকারের সিদ্ধান্ত এসেছে। ইতোপূর্বে ৯৮ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্য ও সেবা বিনাশুল্কে প্রবেশাধিকারের পরিবর্তে এক শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।

গতকাল বুধবার সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ তথ্যটি কমিটিকে অবহিত করা হয়। পরে কমিটি যে এক শতাংশ পণ্য ও সেবা শুল্ক দিয়ে প্রবেশ করতে হবে, সেই তথ্য জানতে চেয়েছে।
এ বিষয়ে ফারুক খান বলেন, ‘৯৯ শতাংশ পণ্য বিনাশুল্কে যাবে এটা ভালো কথা। কিন্তু কোন কোন পণ্যগুলো শুল্ক দিয়ে রপ্তানি করতে হবে, সেই তালিকাটি আমরা জানতে চেয়েছি।

কারণ, দেখা যাবে ওই এক শতাংশের মধ্যেই রয়েছে আমাদের রপ্তানিযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ পণ্যগুলো।’ রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন ও আসিয়ান দেশগুলোর সর্বশেষ অবস্থানের কথা উল্লেখ করে ফারুক খান বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের দিকে সমর্থন বেড়েছে।’

এদিকে সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বৈঠকে প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী আমদানির ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশকেও বিকল্প হিসেবে রাখার জন্য পরামর্শ প্রদান করা হয়। সংসদ সদস্যদের বিভিন্ন দেশের ভিসা প্রাপ্তিতে জটিলতা নিয়ে আলোচনা হয় এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের সুপারিশ করা হয়।

এছাড়া বৈঠকে প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তি সহজীকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। ফারুক খানের সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, মো. হাবিবে মিল্লাত, নাহিম রাজ্জাক ও নিজাম উদ্দিন জলিল (জন) অংশগ্রহণ করেন।