ফেসবুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে জিম্মি করে টাকা আদায়

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২২, ০৪:২৩ এএম

ফেসবুকে উচ্চবিত্ত ও ধনীদের আইডি টার্গেট করে বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠাতেন। এরপর পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব। মন দেয়া-নেয়া। প্রেমের একপর্যায়ে প্রেমিকের আবদার একান্তে সময় কাটানোর। ঠিকানা প্রেমিকার বাসা।

আর সে বাসায় গিয়েই ঘটে যত বিপত্তি। প্রেমিকারূপে থাকা ওই নারীর সঙ্গে আপত্তিকর ছবি তুলে ও ভিডিও ধারণ করে জিম্মি করে দাবি করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা। সব শেষে মানসম্মান রক্ষায় তাদের চাহিদা পূরণ করেই মুক্তি মেলে প্রতারণার শিকার প্রেমিকদের।

এভাবেই দুই নারী সম্পর্কের ভিত্তিতে গত দুই বছরে বাসায় ডেকে এনে প্রায় ৫০ ধনাঢ্য ও করপোরেট ব্যক্তির ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। চক্রের হাতে প্রতারণার শিকার এমন এক ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও দক্ষিণখানে অভিযান চালিয়ে দুই নারীসহ চক্রের সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।

গ্রেপ্তাররা হলেন মো. আল মাহমুদ ওরফে মামুন, মো. আকরাম হোসেন ওরফে আকিব, মাস্তুরা আক্তার প্রিয়া, তানিয়া আক্তার, মো. রুবেল, মো. মহসীন ও মো. ইমরান। অভিযানে তাদের কাছ থেকে অশ্লীল ছবি ও গোপন ভিডিও ধারণকাজে ব্যবহূত ১৪টি মোবাইল ফোন এবং দুটি ল্যাপটপ জব্দ করা হয়।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন র্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।

আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্রে ব্ল্যাকমেইলিং ও পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে চাঁদাবাজির অভিযোগে চক্রের মূল হোতা ও দুই নারীসহ সাতজনকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা এবং দক্ষিণখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সম্প্রতি এক ভুক্তভোগী র্যাব-১-এ অভিযোগ করেন, গত ২২ জুলাই ভুক্তভোগীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে মাস্তুরা আক্তার প্রিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ হয়। গত ১০ আগস্ট ভুক্তভোগীকে মাস্তুরা আক্তার প্রিয়া কৌশলে রাজধানীর একটি অভিজাত আবাসিক এলাকায় তার বান্ধবীর বাসায় নিয়ে যান। রুমের ভেতরে প্রবেশ করার পর পূর্বপরিকল্পিতভাবে প্রিয়া ও তার সহযোগীরা ভুক্তভোগীকে বিবস্ত্র করে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করেন। পরে এসব ভিডিও দেখিয়ে ভুক্তভোগীর কাছে মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন।

একপর্যায়ে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে এক লাখ টাকা এবং ব্যাংক চেকের মাধ্যমে চার লাখ টাকা আদায় করে এই চক্র। লোকলজ্জার ভয়ে ভুক্তভোগী ওই সময়ের ঘটনাটি একটি স্পর্শকাতর ও বিচ্ছিন্ন ঘটনা ভেবে কোথাও কোনো অভিযোগ না করে নীরব থাকেন।

কিন্তু এ ঘটনার এক সপ্তাহ পর আবারও আল মাহমুদ ওরফে মামুন ভুক্তভোগীর কাছে আরও দুই লাখ টাকা দাবি করেন। দাবি করা দুই লাখ টাকা না দিলে ধারণকৃত ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখান।

এসময় ভুক্তভোগী নিরুপায় হয়ে র্যাব-১-এর কাছে  একটি লিখিত অভিযোগ করে আইনগত সহায়তা চান। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে ছায়াতদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায় র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর ভাটারার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও দক্ষিণখানে অভিযান চালিয়ে র্যাব পর্নোগ্রাফি ও চাঁদাবাজচক্রের মূল হোতাসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে।

আব্দুল্লাহ আল মোমেন আরও বলেন, গ্রেপ্তাররা অভিনব প্রতারণাচক্রের সদস্য। এই চক্রের মূল হোতা আল মাহমুদ ওরফে মামুন ও তার নারী সহযোগী তানিয়া আক্তার এবং মাস্তুরা আক্তার প্রিয়া।

এ দুই নারী সদস্যের ছবি ও ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রলোভন দেখিয়ে নির্দিষ্ট কোনো আবাসিক ফ্ল্যাট বা হোটেলে আমন্ত্রণ জানানো হতো। ভুক্তভোগীরা ওই স্থানে গেলেই পূর্বপরিকল্পিতভাবে অন্য সদস্যরা ভয়ভীতি দেখিয়ে তার কাছ থেকে অর্থ আদায় করত।

এ কৌশল অবলম্বন করে চক্রটি গত দুই বছরে প্রায় ৫০ জনের বেশি ভুক্তভোগীর কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। গ্রেপ্তাররা রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় প্রতারণার মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ ব্যয় করে বিলাসবহুল জীবনযাপন করে আসছিল। গ্রেপ্তার দুই নারী সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার আল মাহমুদ ওরফে মামুনের স্ত্রী তানিয়া আক্তার। তারা দুজনে পরিকল্পিতভাবে এ কাজে জড়িত।

এছাড়া গ্রেপ্তার মাস্তুরা আক্তার প্রিয়া একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। এ সময় ফেসবুকে বন্ধুত্বের ডাকে সাড়া দিয়ে অপরিচিত কিংবা নির্জন স্থানে না যাওয়ার পরামর্শ দেন র্যাবের এই কর্মকর্তা।