‘এবারের জন্মদিন নিয়ে বিশেষ কোনো আয়োজন নেই। আমার মেয়ে এবং আমার কয়েকজন বন্ধু আসবে বাসায় বেড়াতে। বাসাতেই দিনটি বিশেষভাবে উদ্যাপনের চেষ্টা থাকবে। আর এখন তো প্রচণ্ড গরমও।
এই গরমে বাইরে বের হওয়াটা অনেক কষ্টের। যে কারণে জন্মদিনে কোনো চ্যানেলর আয়োজনেও যাওয়া হচ্ছে না। সবার কাছে দোয়া চাই আল্লাহ যেন ভালো রাখেন, সুস্থ রাখেন।’ নিজের জন্মদিন প্রসঙ্গে এমনই বলছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী, বাংলাদেশের গানের গর্ব জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন।
সাবিনা ইয়াসমিন এমনই একজন সংগীতশিল্পী— শুধু দেশের গানেই যে তার বিরাট অবদান, তা দিয়েই তিনি এই বাংলার বুকে বেঁচে থাকবেন শত শত বছর। বছরজুড়ে বিভিন্ন সময়ে তার গাওয়া দেশের গান আমাদের পুলকিত করে, অনুপ্রাণিত করে, আন্দোলিত করে।
আর দেশের বিভিন্ন জাতীয় দিবসে তার গাওয়া দেশের গানই যেন আগামী দিনে নতুন করে পথ চলার সাহস জোগায়। দেশের গান ছাড়াও চলচ্চিত্রে হাজার হাজার গান গেয়েছেন তিনি। আর এমনি করেই গানে গানে সাবিনা ইয়াসমিন হয়ে উঠেছেন এ দেশের তথা বাংলা ভাষাভাষীর অতি প্রিয় একজন শিল্পীতে, একজন জীবন্ত কিংবদন্তিতে।
জন্মদিন প্রসঙ্গে সাবিনা ইয়াসমিন আরও বলেন, ‘জন্মদিন এলেই আব্বা-আম্মা এবং আমার বোনদের খুব মিস করি। তারপর সবার ভালোবাসা পেয়ে আমি সে কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করি। ঈদ এলে যেমন নতুন জামা-কাপড় লুকিয়ে রাখতাম, জন্মদিন এলেও তা-ই করতাম। জন্মদিনে এসব কাপড় বের করতাম। এমন আনন্দটাই ছিল অনরকম।’
প্রয়াত বরেণ্য সুরকার-সংগীত পরিচালক রবিন ঘোষের সংগীত পরিচালনায়, এহতেশাম পরিচালিত ‘নতুন সুর’ সিনেমাতে ১৯৬২ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম গান করেন সাবিনা ইয়াসমিন।
তবে ১৯৬৭ সালে আমজাদ হোসেন ও নূরুল হক বাচ্চু পরিচালিত ‘আগুন নিয়ে খেলা’ সিনেমাতে আলতাফ মাহমুদের সংগীত পরিচালনায় ‘মধু জোছনা দীপালি’ গানটি গাওয়ার মধ্যদিয়ে প্লে-ব্যাক গায়িকা হিসেবে অত্মপ্রকাশ করেন। বরেণ্য এই সংগীতশিল্পী ১৯৮৪ সালে একুশে পদক, ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারসহ সর্বোচ্চ ১৪ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৭৫ সালে প্রমোদকার (খান আতাউর রহমানের ছদ্মনাম) পরিচালিত ‘সুজন সখী’ সিনেমাতে গান গাওয়ার জন্য প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে আমজাদ হোসেনের ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, চাষী নজরুল ইসলামের ‘চন্দ্রনাথ’, মইনুল হোসেনের ‘প্রেমিক’, বুলবুল আহমেদের ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’ , আমজাদ হোসেনের ‘দুই জীবন’, কাজী হায়াতের ‘দাঙ্গা’, মতিন রহমানের ‘রাধা কৃষ্ণ’, মোহাম্মদ হোসেনের ‘আজ গায়ে হলুদ’ ও চাষী নজরুল ইসলামের ‘দেবদাস’ চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৭১ সালে নঈম গহরের লেখা ও আজাদ রহমানের সুরে সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’ গানটি মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম প্রেরণা জুগিয়েছিলো। জীবনে প্রথম তিনি কবরী পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘এই তুমি সেই তুমি’র সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন।