সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে কলেজের সিটবাণিজ্য ও চাঁদাবাজি অভিযোগ তুলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগ। শাখার সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও রাজিয়া সুলতানাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে ছাত্রলীগের একাংশ।
তাদের দাবি, ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে রমরমা সিটবাণিজ্যে ব্যস্ত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। তাদের এই অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই নির্যাতনের মুখোমুখি করা হয়। মোবাইল ফোনে ধারণ করা হয় আপত্তিকর ছবি এবং ভিডিও। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগীরা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে অভিযোগ করেও সমাধান পায়নি।
এদিকে দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর ঢাকা মেডিকেলে (ঢামেক) ইডেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা (২৮) ও ছাত্রলীগ কর্মী সুমি আক্তার (২৪)। গতকাল রোববার দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর রাত ৮টা ৫০ মিনিটে পুলিশি প্রহরায় তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে নেয়া হয়।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হওয়ার পর থেকে ক্ষমতা রাজত্ব করছে তামান্না জেসমিন রিভা ও রাজিয়া সুলতানা। কলেজের সিটবাণিজ্য, সিট নিয়ন্ত্রণ, সিট দখল, ওয়াইফাই প্রোভাইডার, ক্যান্টিন থেকে চাঁদা আদায়, মোবাইল ফোনে শিক্ষার্থীদের ‘অশালীন’ ছবি ও ভিডিও ধারণ এবং সংগঠনের নেত্রীদের সাথে মতবিরোধ হলেই দল বল নিয়ে মারপিট করার অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে।
একাধিক ছাত্রীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ একটি সিন্ডিকেটে আয়ের প্রধান উৎস চাঁদাবাজি। তারা কলেজের ছয়টি হলের মোট ৩৮টি কক্ষ রিভার দখলে রয়েছে। কক্ষগুলোতে টাকার বিনিময়ে ছাত্রীদের রাখছে।
এরমধ্যে হলের প্রতিটি কক্ষে কমপক্ষে আটজন করে মোট ৩২০ জন ছাত্রীকে রাখা হচ্ছে। এ জন্য ছাত্রীদের থেকে কমপক্ষে দুই হাজার টাকা করে নিয়ে থাকেন। যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই টালমাটাল মহিলা ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতি। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে এমন নির্যাতন এবং চাদাবাজির অভিযোগ তুললে পড়তে হয় নির্যাতনের মুখে। বিষয়গুলো নিয়ে ভুক্তভোগীরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে অভিযোগ দিয়েও লাভ হয়নি।
এমন অবস্থায় গত শনিবার মধ্যে রাতে হটাৎ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ। সংগঠনের দুই গ্রুপের অবস্থানে উত্তেজিত হয়ে ওঠে পুরো কলেজ ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ-সন্ধ্যা রাতে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। পরে কলেজ ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের গ্রুপের সাথে সহ-সভাপতিসহ আরেকটি গ্রুপের শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি অবস্থান নেয়।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল দুপুরে শহীদ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছাত্রীনিবাস প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলন করেন ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের ২৫ নেত্রী। এসময় তারা তাদের দাবি মেনে নিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। এই ২৫ নেত্রী কলেজ ছাত্রলীগ কমিটির সহ-সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদধারী।
সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্যে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখি বলেন, শনিবার রাতে মারধরের ঘণ্টাখানেক আগে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী নেতাকর্মীরা জান্নাতুল ফেরদৌসের রুমে হামলা চালায়। এ সময় তার রুমে থাকা ল্যাপটপসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়।
পরে হামলার সময় সহ-সভাপতি আয়েশা সিদ্দিকা মিম, রোকসানা জান্নাতুল ফেরদৌস ও তার সাথে থাকা ছোট বোনের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে সভাপতির হাতে তুলে দেয় তারা। গলা থেকে স্বর্ণের চেইন, ব্যাগে থাকা নগদ ১৫ হাজার টাকা ও ছোট বোনের হাতের আংটিও কেড়ে নেয় হামলাকারীরা।
এ ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে সঠিক সমাধান টানতে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এতে দায়িত্ব দেয়া হয় বেনজির হোসেন নিশি ও তিলোত্তমা সিকদারকে। যদিও এই তদন্ত কমিটি বিষয়ে আপত্তি তুলেছেন বিক্ষুব্ধরা। মূলত এর আগে ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভার অডিও ফাঁস তদন্ত কমিটির দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তাদের।
সেই তদন্ত কমিটির আর কোনো আলোর মুখ দেখেনি। বারবার অপরাধ করেও কেন্দ্র থেকে ইডেন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এবার যদি কোনো ব্যবস্থা নেয়া না হয় তাহলে আমরা এখানে উপস্থিত ২৫ জন একসাথে পদত্যাগ করব বলে সতর্ক বার্তা দেয়া হয়।
এর মধ্যে বিষয়গুলো নিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন ডাক দেন ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা। তাদের সংবাদ সম্মেলনের মধ্যেই শুরু হয় ছাত্রলীগের দুপক্ষে সংঘর্ষ। এতে ছাত্রলীগের প্রায় ১০ জন নেত্রী আহত হন। ছাত্রলীগের সংঘর্ষ সামাল দিতে সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ। এ ঘটনায় পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে কলেজ কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসন। এর আগে দফায় দফায় সংঘর্ষে জরিয়ে পড়ে ইডেন ছাত্রলীগের দুই পক্ষ।