আইন সচিব গোলাম সরওয়ারের ৩ বছর

ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া লেগেছে বিচার বিভাগে

শরিফ রুবেল প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২, ০১:৪১ এএম

মো. গোলাম সরওয়ার। বিচারক হিসেবে দীর্ঘ কর্মজীবন তার। বর্ণাঢ্য কর্মজীনের প্রতিটি পদে দক্ষতার ছাপ রেখেছেন। যেখানেই কাজ করেছেন, ন্যায়বিচারের মাধ্যমে প্রশংসিত  হয়েছেন। সততার প্রশ্নে কখনো আপস করেননি। সততা, নিষ্ঠা ও সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করায় তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ধাপে ধাপে পেয়েছেন পদোন্নতি। ফলে তার ওপরে আস্থা রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। তাকে করেছেন দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের পূর্ণ সচিব।

২০১৯ সালে আইন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব পদে দায়িত্ব পাওয়ার পর তার কাজের পরিধি বেড়ে যায়। বিচার বিভাগের আধুনিকায়নে একের পর এক নজির স্থাপন করেন তিনি। তার হাত ধরেই করোনায় বিচার বিভাগকে ঢেলে সাজানো হয়। ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া লাগে আইন-আদালতপাড়ায়। ফলে বিচারিক সেবা চলে আসে জনগণের হাতের মুঠোয়। এনালগ থেকে বিচার বিভাগ প্রবেশ করে ভার্চুয়াল যুগে।

আদালতে সশরীরে উপস্থিতি ছাড়াই চলে মামলার বিচারকাজ। আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা ঘরে বসেই ভার্চুয়ালি পাচ্ছেন বিচারিক সুবিধা। প্রযুক্তিনির্ভর ভার্চুয়াল আদালত চালু করে বিচারব্যবস্থাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেছেখেন তিনি। গত তিন বছরে আইনমন্ত্রীর পরামর্শ ও আইন সচিবের নেতৃত্বে বিচার বিভাগের নজিরবিহীন আধুনিকায়ন হয়েছে। অবসান হচ্ছে মান্ধাতা আমলের পদ্ধতি। বাস্তবায়িত হতে চলেছে ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্প।

ফলে শুধু ভার্চুয়াল কোর্টই নয়, আদালত ব্যবস্থাপনাই পেপারলেস হয়ে যাচ্ছে। মামলা দায়ের থেকে শুরু করে আদেশ বা রায়ের অনুলিপি— সবই মিলবে অনলাইনে। এতে কমবে মামলাজট, বাড়বে নিষ্পত্তির হার। জনগণ দ্রুত বিচার পাবে। কমবে নাগরিক ভোগান্তি। আর এসবের পেছনে থেকে নিজ হাতে কাজ করছেন আইন সচিব মো. গোলাম সরওয়ার।তার প্রচেষ্টায় আদালত ও বিচারকের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এছাড়া আদালতের ভাবমূর্তি উন্নত করা, বিচারকাজকে গতিশীল করা, আদালতগুলোতে মামলা নিষ্পত্তির হার বৃদ্ধি করা, বিচারব্যবস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত করা, বিচারকাজে স্বচ্ছতা আনা, বিচারক ও আইনজীবীদের স্বার্থে নতুন নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছেন তিনি। যার সুফলও মিলছে। সাক্ষ্য আইন যুগোপযোগী করা হচ্ছে। এ আইনের ১৫৫(৪) ধারা বাতিল করা হচ্ছে। এনআই অ্যাক্ট, ১৮৮১ সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এছাড়া আইন সচিবের সময়েই বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) ওপর জোর দেয়া হয়েছে। নিম্ন আদালতের বিচারকাজ ত্বরান্বিত করতে বিচারকদের পদোন্নতি দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে পদায়ন করা হচ্ছে। আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে অপরাধ দমনে সৃষ্টি করা হয়েছে নতুন নতুন আইন ও ট্রাইব্যুনাল। ব্যাপক হারে করা হয়েছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন। নিয়োগ দেয়া হয়েছে প্রয়োজনীয়সংখ্যক বিচারক ও সহায়ক জনবল। বিচার বিভাগের উন্নয়নে পুরোনো যেসব আইন ও বিচারব্যবস্থা বর্তমানের সঙ্গে খাপ খায় না, সেগুলো নিয়ে রিভিউ করা হচ্ছে।

এছাড়া বিচারপ্রক্রিয়া আগের মতো নথির মাধ্যমে না রেখে সেগুলো ডিজিটাল করারও তোড়জোড় চলছে। কিছু ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া লেগেছে। যেন অর্জনের শেষ নেই। এছাড়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আইন ও বিচার বিভাগকে এগিয়ে নিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। গেলো কয়েক বছরে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পাশাপাশি আইন মন্ত্রণালয় এবং বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। 

দায়িত্বশীল এই সচিবের নেতৃত্বের কারণেই এসব সম্ভব হয়েছে। তার প্রচেষ্টায় দেশের আদালতগুলোর চেহারায় এখন পুরোই পরিবর্তন এসেছে। প্রায় প্রতিটি জেলার নবনির্মিত ম্যাজিস্ট্রেসি ভবনের কাজ চোখে পড়ার মতো। বিচারপ্রার্থীদের মধ্যেও অনেকটা সন্তুষ্টি এসেছে। এরই মধ্যে রয়েছে দেশের বেশ কিছু বারের নতুন ভবন নির্মাণ, বার কাউন্সিলের ১৫ নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ, আইনজীবীদের কল্যাণ ফান্ড উন্নয়নের বিষয়েও বেশ আগ্রহী তিনি।

উল্লেখ্য, মো. গোলাম সরওয়ার দশম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে জুডিশিয়াল ক্যাডারে যোগদান করেন। ১৯৯১ সালের ১১ ডিসেম্বর ঢাকা জেলা জজ আদালতে প্রবেশনার সহকারী জজ পদে যোগদানের মাধ্যমে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর তিনি ১৯৯৮ সালে সিনিয়র সহকারী জজ, ২০০৩ সালে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ, ২০০৭ সালে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং ২০১৫ সালে জেলা ও দায়রা জজ পদে পদোন্নতি পান। তিনি ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী ও কিশোরগঞ্জ জেলায় বিচারক হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ২০১৫ সালের ডিসেম্বর হতে ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট পর্যন্ত আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।