রাজধানীর খালগুলো উদ্ধার এখনো অনেক দূরের কথা, দেড় বছর আগে ঢাকা ওয়াসা থেকে ঢাকার সিটি কর্পোরেশনগুলো খালগুলোর দায়িত্ব পেলেও এখনো পরিষ্কার অভিযানেই কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রয়েছে। বেদখল খাল উদ্ধারের কোনো উদ্যোগ নেই। কারণ এখনো খালগুলোর সীমানাই নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। আর সীমানা নির্ধারণ না হওয়ায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না। সিটি কর্পোরেশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) তালিকাভুক্ত খালের সংখ্যা ২৯টি। ওয়াসার কাছ থেকে ওসব খালের দায়িত্ব ডিএনসিসি ২০২০ সালে বুঝে পায়। তারপরই খাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হয়। ওই অভিযানে খালের ময়লা পরিষ্কারের পাশাপাশি খালের বেদখল হওয়া অংশও মুক্ত করার কথা ছিল। কিন্তু ডিএনসিসির কার্যক্রম গত দেড় বছরে কেবল খাল পরিষ্কারেই সীমাবদ্ধ ছিল। ওই সময়ের মধ্যে তালিকাভুক্ত একটি খালেরও অবৈধ দখলে থাকা অংশ উচ্ছেদ করা হয়নি।
সূত্র জানায়, বর্তমানে ডিএনসিসির আওতায় ছোট-বড় মিলিয়ে ২৯টি খাল মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কাঁটাসুর খাল, রামচন্দ্রপুর খাল, কল্যাণপুর খাল, রূপনগর খাল, দিয়াবাড়ি খাল, ইব্রাহিমপুর খাল, বাউনিয়া খাল, আবদুল্লাহপুর খাল, দ্বিগুণ খাল, বাইশটেকি খাল, সাংবাদিক কলোনি খাল, বেগুনবাড়ি খাল, শাহজাদপুর খাল ইত্যাদি। ওসব খালের মধ্যে একটিতেও গত দেড় বছরে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। তবে সাগুফতা খাল, রামচন্দ্রপুর খাল, ইব্রাহিমপুর খাল, গোদাগারি খাল, রূপনগর খালসহ ১৪টি খাল থেকে বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। আর বর্জ্য অপসারণের ফলে ওসব খালে পানিপ্রবাহও বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর খাল পরিষ্কার কার্যক্রমও অনেকটা ধীর।
সূত্র আরো জানায়, চলতি বছরের শুরুতে মোহাম্মদপুরের বসিলায় লাউতলা খাল উদ্ধার সাড়া ফেলেছিল। তখন বলা হয়েছিল প্রতিটি খালে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। কিন্তু ওই ঘোষণার দীর্ঘ সময় পরও একটি খালও অবৈধ দখলমুক্ত করা যায়নি। আর উদ্ধার করা লাউতলা খালটি ডিএনসিসির তালিকার বাইরে ছিল। তালিকাভুক্ত খাল উদ্ধার না করে তালিকার বাইরের খাল উদ্ধারের বিষয়টি নিয়ে সমালোচনাও হয়।
এ বিষয়ে ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, খাল পরিষ্কার ভালো কাজ হলেও এখনো আসল কাজ শুরু করা যায়নি। মূলত প্রথম কাজ হওয়া উচিত ছিল খালের সীমানা নির্ধারণ করে সব অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা। কিন্তু ওই কাজটি এখনো শুরু করা সম্ভব হয়নি। তালিকাভুক্ত প্রতিটি খালের মধ্যেই অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। দিয়াবাড়ি, সাঁতারকুল, আব্দুল্লাহপুর খালের ওপর বেসরকারি অফিস, বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন কার্যালয়, দোকান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ধরনের ভবন দাঁড়িয়ে রয়েছে। এভাবে দখল হয়ে যাওয়ায় অনেক স্থানে খাল সংকুচিতও হয়ে পড়েছে। ওসব দখল উচ্ছেদ করা খুবই জরুরি।
অন্যদিকে রাজধানীর খাল নিয়ে রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ জানান, ডিএনসিসির উচিত ছিল খালের দায়িত্ব বুঝে পাওয়ার পরই অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ শুরু করা। ওই কাজের জন্য দেড় বছর যথেষ্ট সময়। তবে এখনো সময় শেষ হয়ে যায়নি, আশা করা যায় তারা দ্রুত কাজ শুরু করতে পারবে।
সার্বিক বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা জানান, বেশ কিছু খাল উদ্ধার করা হয়েছে। তার মধ্যে লাউতলা খাল অন্যতম। সেখানে এখন নাব্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। অন্যান্য খালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে জোর দেয়া হয়েছে। তবে এখনো বাকি খালগুলোর সীমানা নির্ধারণ করা হয়নি। সীমানা নির্ধারণ না করে কোনো খালে দখল উচ্ছেদ করতে গেলে বিভিন্ন বাধার মুখে পড়তে হয়। সে জন্য আগে সীমানা নির্ধারণের কাজে হাত দেয়া হয়েছে। আর তা হয়ে গেলে সীমানার ভেতর যা কিছুই পড়বে তাই গুঁড়িয়ে দেয়া হবে। এ ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েই আগানো হচ্ছে।