পাচার হচ্ছে বিপুল টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২২, ১২:৪৫ এএম

অনলাইন জুয়ায়  দেশ থেকে পাচার হচ্ছে বিপুল টাকা। সবার চোখের সামনে অনলাইন জুয়া অবাধে চললেও খুব বেশি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ওই জুয়ার সাইটগুলো ফেসবুক আইডি, পেজ, গ্রুপ, ওয়েবসাইট ও মোবাইলভিত্তিক এনক্রিপ্টেড অ্যাপ দিয়ে চলছে। এতদিন বিদেশি আয়োজনে ওসব জুয়ার সাইট চললেও এখন তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশীয় অনেক প্রতিষ্ঠান। দেশজুড়েই তরুণ-তরুণীরা ওসব জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছে এবং বিপুল পরিমাণ টাকা খোয়াচ্ছে।

তবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সম্প্রতি ৩৩১টি জুয়ার সাইট বন্ধ করছে। সিআইডির অনুসন্ধানে বিগো লাইভ নামে অনলাইন জুয়ায় গত ২০ মাসে ১০৯ কোটি টাকা সিঙ্গাপুরে পাচারের তথ্য উঠে এসেছে। মূলত ক্রেডিট বা ডেভিড কার্ড সহজলভ্য হওয়ায় অনেকেই অনলাইন জুয়ায় ঝুঁকে পড়েছে। আর ওই সুযোগে অপরাধী চক্র কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। সিআইডি এবং বিটিআরসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ ঘিরেও দেশি ও বিদেশি জুয়ার বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে মূলত ২০১৬ সাল থেকে ক্রিকেটকে ঘিরে অনলাইনে জুয়ার আগ্রহ বাড়তে থাকে। তখন ওয়েবসাইট খুলে মানুষকে যুক্ত করে বেটিংয়ে অংশ নিতে আহ্বান জানানো হতো।

পরবর্তীকালে নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সাইট থেকে ব্যবহারকারীদের অ্যাপে শিফট করা হয়। অ্যাপের নিয়ম অনুযায়ী খেলার চিপস কিনতে নগদ অর্থ, ক্রেডিট বা ডেভিড কার্ড প্রয়োজন পড়ে। সেগুলোর মাধ্যমেই অপরাধী চক্র দেশ থেকে টাকা পাচার করে থাকে। মোবাইল অ্যাপ ছাড়াও অপরাধীরা বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা ডোমেইনের মাধ্যমেও সরাসরি অনলাইন গেম বা জুয়া খেলায় অংশগ্রহণ করে থাকে। সে জন্য দেশে এবং বিদেশে হোস্টকৃত বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রথমে অ্যাকাউন্ট খুলে নিবন্ধন করা হয়। তারপর নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্য কার্ড বা অন্য কোনো মাধ্যমে জমা দিয়ে জুয়ায় অংশ নিতে হয়।

অনলাইন জুয়াড়িরা বিকাশ, রকেট, নগদসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা শাওন ও আব্দুল আলিমসহ গুম-খুন-হামলা-মামলা, দুর্নীতি-দুঃশাসনের প্রতিবাদে ও  বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে এসব ঘটনা ঘটে।

সমাবেশে বিএনপির নেতারা বলেছেন, তারা নতুন সাহস নিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন। তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া কোনো নির্বাচন আর ভবিষ্যতে হবে না। বিদেশিরা বুঝে গেছে, আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসের দল। হামলা করে ক্ষমতায় টিকে আছে।  তত্ত্বাবধায়ক সরকারে নির্বাচন দিলে আওয়ামী লীগের চিহ্ন থাকবে না ১০টার বেশি আসন পাবে না।

তাই আদালত ঠিক করতে কমিশন গঠন করবে তারা। সরকারকে  সেইফ এক্সিট দিয়ে পালি যেতেও অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, এই সরকার খুব বেশি দিন নেই। এ বছর যায় কি যায় না। আমাদের নেতাকর্মীরা অনেক কষ্ট করেছেন। আর বেশি দিন কষ্ট করা লাগবে না। অনতিবিলম্বে এই সরকার পদত্যাগে বাধ্য হবে।

কেয়ারটেকারের (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) অধীনে নির্বাচন হবে এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসবেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এর বাইরে অন্য কিছু হতে দেয়া হবে না। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না।

তিনি নেতাকর্মীদের বলেন, সরকার বাধা দিয়েছে। আপনারা সেই বাধা উপেক্ষা করে কষ্ট করেছেন, ভালোবাসা দেখিয়েছেন এতে স্পষ্ট সামনে সব আন্দোলন সফল হবে। সরকার এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, যদি সত্যিকারের ইলেকশন (নির্বাচন) হয়, আপনারা ১০টার বেশি আসন পাবেন কি-না সন্দেহ আছে। সময় থাকতে বেগম জিয়াকে মুক্তি দেন। তারেক রহমানকে সসম্মানে দেশে আসার সুযোগ দেন। যারা জেলে আছে মুক্তি দেন। এক লাখ মামলায় যে ৩৬ লাখ আসামি করেছেন, সেসব মামলা প্রত্যাহার করেন। না হলে আজ জনতা বিচারের জন্য তৈরি আছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামতে হবে। না নামলে যেভাবে নামতে বাধ্য হয় সেভাবে নামানো হবে। তিনি বলেন, আমরা নেতাকর্মীর কাছে কৃতজ্ঞ, যারা এই সভাকে জনসমুদ্র বানিয়েছেন। কালকে আমি আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য খোন্দকার মোশাররফ হোসেনকে বলেছি রাতেই সমাবেশ শুরু করা যায়। আসলে রাতেই শুরু হয়েছে এই সমাবেশ এখনো চলছে। বিএনপির সমাবেশে বাধা দিয়ে সম্ভব হয়নি আমাদের আটকাতে। হানাদার বাহিনী জিয়ার কাছে হার মেনেছে । আর এই সরকার হানাদাদের চাইতেও খারাপ। এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামতে হবে। না নামলে যেভাবে নামতে বাধ্য হয় সেভাবে নামানো হবে ।

তিনি পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশে বলেন, যে সব পুলিশ বাহিনী আজ বাধা দিচ্ছে তাদের বিচার হবে। আমরা পুলিশের বাহিনীর বিরুদ্ধে নই তা বুঝতে হবে। পুলিশ শেখ হাসিনার চাকর নয়। অন্যায় আদেশ পালন করবে না। জনগণের বিপক্ষে দাঁড়াবেন না। যদি দাঁড়ান জনগণ প্রথমে আপনাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এখন থেকে একটাই স্লোগান হাসিনা তুই এখন যাবি। এ নিয়ে আমরা রাজপথে থাকব।

পুলিশের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, পুলিশ চোরকে পাহারা দেয়ার জন্য নয় চোর ধরার জন্য নয়। সেদিন সব হিসাব নেয়া হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান বলেছেন, বিএনপির এখন ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করছে না। বিএনপি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা চায়। তিনি বলেন, এই সরকার কোটি টাকা লুট করেছে। গরিবের রক্তচুষে অপশাসন চালাচ্ছে। তা আর  মেনে নেবো না। আমরা রাজপথে নেমেছি নেমেছি, রাজপথে থাকব, অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হবে ততক্ষণ মাঠ ছাড়ব না।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। দেশের জন্য আন্দোলন চলবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আমরা ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করি না। স্বৈরাচারী সরকারকে হটিয়ে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে এটিই আমাদের আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এখনো সময় আছে নিরাপদে সরে যান, না হয় পালানোর পথ খুঁজে পাবেন না। তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন দিলে আওয়ামী লীগের চিহ্ন থাকবে না।

খুলনাবাসীকে অভিবাদন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সভা প্রতীক মাত্র। খালেদা জিয়ার চেয়ার খালি। তিনি গৃহবন্দি। তার স্মরণে এই চেয়ার খালি। জনতার সৈনিক, জনগণের অধিকার ফিরিয়ে নিয়ে আসো। এই দেশকে নরকে পরিণত করেছে সরকার। সব অর্জন ধ্বংস করে ফেলেছে। অবৈধ ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে এসব করছে সরকার। একবার ভোট ছাড়া, আরেকবার নিশি রাতে। ২০২৩ সালে নির্বাচন একইভাবে করার পাঁয়তারা।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই নির্বাচন কমিশন নিজেদের ভালো দেখানোর জন্য কৌশল নিয়েছে। কমিশনকে তো ডিসি-এসপিই মানে না। তাই আমরা নির্বাচন কমিশন নিয়ে কথা বলছি না। তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া কোনো নির্বাচন নয়। তাই এই সরকারকে বিদায় জানাতে হবে।

মামলা হামলায় বিএনপিকে দমানো যাবে না বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল খুলনার সমাবেশে বলেন, নতুন সাহস নিয়ে আন্দোলন করছে বিএনপি। সরকার বলছে দুর্ভিক্ষের পদধ্বনির কথা। কারণ তারা লুটপাট করছে। সরকার বলছে সমাবেশে সহায়তার কথা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি সহায়তা করেছেন, রেলস্টেশনে গ্রেপ্তার হামলা করা হয়েছে। আপনারা দমিয়ে রাখতে পারবেন না। বিএনপি নতুন সাহসে বলীয়ান, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের বয়স হয়েছে তারপরও লড়াই করছি। মূল দায়িত্ব তরুণদের ওপর, লড়াইয়ে জিততে হবে। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করছি, সহিসংসতা করছি না। আমাদের ওপর হামলা করে পার পাবেন না। বিদেশিরা বুঝে গেছে, আপনারা সন্ত্রাসের দল। হামলা করে ক্ষমতায় টিকে আছেন।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আমাদের সামনে আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নেই। এই সরকারকে পরাজিত করে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সরকার পদত্যাগ করুন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারে নির্বাচন দিলে আওয়ামী লীগের চিহ্ন থাকবে না ১০টার বেশি আসন পাবে না। গণঅভ্যুত্থানে এ সরকারকে বিদায় জানাতে হবে। আমাদের দেশকে গণতন্ত্রের পথে ফেরাতে চাই। ফায়সালা হবে রাজপথে। আদালত ঠিক করতে কমিশন গঠন করব। এখনো সময় আছে সেইফ এক্সিট নেন। পালাবার পথে খুঁজে পাবেন না।

তিনি আরো বলেছেন,  খুলনাবাসী বীর সেনানি। তারা অসাধ্যকে সাধ্য করেছেন। তারা বীরের পরিচয় দিয়েছে। তিনদিন সব বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বাস ট্রাক লঞ্চ সব বন্ধ করেও আটাকাতে পারেনি। প্রমাণ হলো ন্যায়ের পথে বাধা দেয়া যায় না। তিনি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষ থেকে খুলনার সমাবেশ সফল হওয়ায় নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানান।

ফখরুল বলেন, হাজারো নেতাকর্মী আহত, এত মানুষ আটক হলো, গ্রেপ্তার হলো এই সমাবেশ সরকার বন্ধ করতে পারেনি। তাই  বলবো আজকের এই ঐতিহাসিক সমাবেশ চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।