বিএনপির আন্দোলনে নমনীয় নয় আওয়ামী লীগ। দলটির রাজপথের অবস্থান ক্ষমতাসীন দল কঠোরভাবেই মোকাবিলা করবে। ছাড় দেয়া বা নরম হওয়া পথে হাঁটবে না। বিএনপির যেমন অবস্থান তেমনি আওয়ামী লীগ সেভাবেই রাজপথে মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। বিশেষ বৈঠকের এমন বার্তা সাংগঠনিক নেতাদের মাধ্যমে তৃণমূলেও পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াত, হেফাজতসহ অনেকগুলো ধর্মীয় দলও বিএনপির সাথে জোট বেঁধেছে। এমন ইঙ্গিতে সরকারও শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেছে বলে আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তি, নেতাকর্মী হত্যার প্রতিবাদ, লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণ, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধিসহ বেশ কিছু ইস্যু সামনে রেখে ধারাবাহিকভাবে বিভাগীয় সমাবেশে ব্যস্ত সময় পার করছে বিএনপি। এছাড়া সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্ব্বাবধায়ক সরকারের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর দাবিতে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশ করবে দলটি।
তবে বিএনপির এমন আন্দোলনের মধ্যেই আলোচনায় দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবরণের বিষয়টি। তাকে সর্তসাপেক্ষে মুক্তি দিলেও আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ফের তাকে কারাগারে পাঠাতে পারে সরকার। বিষয়টি নিয়ে উত্তাপ ছাড়াচ্ছে দেশের দুই বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনায় সভায় অংশ নিয়ে দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া অসুস্থ ও বয়োবৃদ্ধ। তার বোন, ভাই, বোনের জামাই আমার কাছে এসেছেন, আবেদন করেছেন। আমরা তার সাজাটা স্থগিত করে তাকে বাড়িতে থাকার সুযোগ দিয়েছি। মানবিক কারণেই দিয়েছি। কিন্তু যদি বিএনপি বেশি বাড়াবাড়ি করে, তবে খালেদা জিয়াকে আবারও জেলে পাঠানো হবে।’ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর দেশের রাজনীতিতে ফের আলোচনায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে প্রমাণ হয়েছে— তিনি প্রতিহিংসাপরায়ণ। তিনি গণতন্ত্র ও বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানোর প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বলে মনে করেন বিএনপির নেতারা।
এ বিষয়ে গতকাল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যখন দেশে একটি গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন শুরু হয়েছে, যখন মানুষ তাদের অধিকারের জন্য আন্দোলন করছে, কথা বলছে, যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে— দেশের অভ্যন্তরে চরম অব্যবস্থাপনা এবং চরম অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে, রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে, সেই সময়ে তার (প্রধানমন্ত্রী) এ ধরনের হুমকি গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ব্যাহত বা দমন করার ইঙ্গিত।’
এদিকে আ.লীগের শীর্ষ নেতাদের দাবি— আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল। বিএনপিসহ সরকার বিরোধীরা রাজনৈতিক দলগুলো যদি শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম, মিছিল-মিটিং, সভা-সমাবেশ করে। তাহলে তাতে কোনো ধরনের বাঁধা দেয়া হবে। কিন্তু বিএনপি যদি আন্দোলনের নামে আগুন-সন্ত্রাস, পেট্রোল নিক্ষেপ, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ করে। তাহলে বিরোধীদের সেই আন্দোলন কঠোরভাবে দমন করবে আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনের বিরুদ্ধে বলেননি।
তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বলেছেন, বিরোধীদল আন্দোলন করছে, করুক বাধা দেবে না। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বাধা দেয়া হচ্ছে না এবং হবে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আমরা মেনে আন্দোলন করতে দিচ্ছি।’
তথ্য মতে, দীর্ঘদিন ধরেই কারামুক্ত বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসাসেবা নেয়ার শর্তসাপেক্ষে তাকে মুক্তি দিয়েছে সরকার। এর মধ্যেই হটাৎ আলোচনায় বেগম খালেদা জিয়ার কারাবরণের বিষয়টি। মূলত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াত, হেফাজতসহ অনেকগুলো ধর্মীয় দলও বিএনপির সাথে জোট বেঁধেছে। তারা ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারবিরোধী বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে চায়।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছে, কারামুক্ত খালেদা পুরোদমে বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত। বিএনপির চলমান আন্দোলন ও বিভাগীয় সমাবেশে নেতাদের পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। খালেদার জিয়ার থেকে বিএনপি যেন বিশেষ সুবিধা নিতে না পারে। সে জন্য তার কারাবরণ ইস্যুতে কঠোর অবস্থানে থাকবে আওয়ামী লীগ।
বিএনপি প্রতিহিংসাপরায়ণ ও গণতন্ত্র এবং বিচারব্যবস্থায় স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক আমার সংবাদকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক বিবেচনায় বেগম খালেদা জিয়াকে বাসা থেকে চিকিৎসাসেবা নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। যে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি বিগত দিনে আগুন-সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। অসহায় ও সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। খুন-গুম ও রাহাজানি করেছে। গাড়িতে আগুন দিয়ে অসহায় যাত্রীদের হত্যা করেছে। সেই খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিগত দিনের সেই পুরোনো পথেই হাঁটছে বিএনপি। একজন দোষী ঘরে বসে পরামর্শ দিয়ে ফের অরজকতা করতে চাইবে তা তো করতে দেয়া হবে না। তাকে আবার জেলে যেতে হবে। কারণ তাকে মানবিক কারণে মুক্তি দেয়া হয়েছিল।’