বাংলাদেশ বিমান তীব্র বৈমানিক সংকটে ভুগছে। ফলে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করতে গিয়ে বৈমানিকদের বাড়তি চাপ নিতে হচ্ছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরে যতগুলো উড়োজাহাজ রয়েছে ওই তুলনায় বৈমানিক নেই।
এমন পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করতে গিয়ে প্রায়ই বৈমানিকরা শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে ছুটিতে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। আর তাতে নিয়মিত ফ্লাইট সিডিউল ঠিক রাখতে বিমানকে বৈমানিক সংকটে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরে বর্তমানে উড়োজাহাজের সংখ্যা ২১টি। তার মধ্যে ১৬টি নিজস্ব ও পাঁচটি লিজ নেয়া। নিজস্ব বাহনগুলোর মধ্যে বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর চারটি, বোয়িং ৭৮৭-৮ চারটি, বোয়িং ৭৮৭-৯ দুটি, বোয়িং ৭৩৭ দুটি ও ড্যাশ-৮ চারটি।
নিয়ম অনুযায়ী বিমানের বহরে থাকা উড়োজাহাজগুলো পরিচালনায় অনুমোদিত ২৮০ জন বৈমানিক প্রয়োজন। কিন্তু মাত্র ১৫০ বৈমানিক সার্ভিসে রয়েছে। ওই কারণে অপারেশন বিভাগকে প্রায় সব বৈমানিককে দিয়েই অধিক ফ্লাইট পরিচালনা করতে বাধ্য হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ইতোপূর্বে অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনার চাপে আকাশেই হার্ট অ্যাটাক করে এক বৈমানিক মারা যায়। সম্প্রতি একই কারণে বিমানের আরও চার বৈমানিকের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বৈমানিকদের অভিযোগ, ফ্লাইট পরিচালনায় নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে বেশি সময় ফ্লাইট পরিচালনা তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ করছে। নিয়ম অনুযায়ী বিশ্রামও দেয়া হচ্ছে না। লম্বা একটি ফ্লাইট শেষ করে আসার পর অল্প বিশ্রামের পর আবারো আরেক ফ্লাইটে পাঠানো হচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, সম্প্রতি বৈমানিক অসুস্থ হয়ে পড়ায় বিমান কর্তৃপক্ষকে মদিনা ও টরন্টো ফ্লাইট নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। হঠাৎ করেই শারীরিক অসুস্থতা বোধ করায় বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজের চার বৈমানিক ছুটিতে যায়। তার প্রভাবে বিমানের মদিনাগামী ফ্লাইট সিডিউল বিপর্যয়ে পড়ে। বিমানের অন্য ফ্লাইটেও তার প্রভাব পড়ে।
তাছাড়া ঢাকা থেকে ইস্তাবুল হয়ে টরন্টোগামী ফ্লাইটের একজন বৈমানিকও অসুস্থতাজনিত ছুটি নিয়েছে। তার আগে একই কারণে ছুটিতে যায় বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজের অন্য এক বৈমানিক। বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজের আরেক বৈমানিক অসুস্থ হয়ে প্রায় পাঁচ মাস ধরে ফ্লাইটে যেতে পারছে না। ফলে বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজগুলোতেও বৈমানিক স্বল্পতার প্রভাব পড়েছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের এক বৈমানিক জানান, ইউরোপিয়ান এভিয়েশন সেফটি এজেন্সি (ইয়াসা) এবং ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএএ) নিয়ম অনুযায়ী একজন বৈমানিককে মাসে বা বছরে যতক্ষণ ডিউটি এবং ফ্লাইট করানো যায় তার থেকে বাংলাদেশের বৈমানিকদের ২০-৩০ শতাংশ বেশি ফ্লাইট পরিচালনা করানো হচ্ছে। অন্যান্য দেশে যেখানে বছরে একজন বৈমানিক সর্বোচ্চ ৯০০ ঘণ্টা ফ্লাই করেন, সেখানে বাংলাদেশের বৈমানিকদের বছরে এক হাজার ঘণ্টার বেশি ফ্লাইটে থাকতে হচ্ছে।