প্রতিবন্ধীদের উন্নত জীবন নিশ্চিতে কাজ করছে সরকার: সমাজকল্যাণমন্ত্রী

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৪, ২০২২, ০১:২৯ এএম

১৯৯২ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস। শারীরিকভাবে অসম্পূর্ণ মানুষদের প্রতি সহমর্মিতা ও সহযোগিতা প্রদর্শন এবং তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতি সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যেই সূচনা হয় দিবসটির। 

তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল শনিবার রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গণে পালন করা হয় ৩১তম আন্তর্জাতিক ও ২৪তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য পরিবর্তনমুখী পদক্ষেপ : প্রবেশগম্য ও সমতাভিত্তিক বিশ্ব বিনির্মাণে উদ্ভাবনের ভূমিকা’।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে পাঁচদিনব্যাপী প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উন্নয়ন মেলা ও আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু ও বিশেষ অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) রুহুল আমিন খান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর পর প্রতিবন্ধীদের জন্য যদি কোনো শাসক কাজ করে থাকেন; সেটা বর্তমান সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নত জীবন নিশ্চিতে শেখ হাসিনা সরকার নিরলস কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধীবান্ধব সরকারপ্রধান।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যে সরকারগুলো এসেছিল তাদের মধ্যে জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী খালেদা জিয়া কী করেছিল প্রতিবন্ধীদের জন্য— এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, জেনারেল এরশাদ ৯ বছর দেশ শাষণ করেছিল, তারা প্রতিবন্ধীদের জন্য কি করেছিল? বঙ্গবন্ধুর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তারই সুযোগ্যকন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল প্রতিবন্ধীদের জন্য যে কাজগুলো করেছে তা বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছে। প্রতিবন্ধীদের জন্য সারা বিশ্বে কাজ করে যে খ্যাতি ইতোমধ্যে তিনি অর্জন করেছেন, আজকের এই প্রতিবন্ধী দিবসে সে জন্য তাকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন।

প্রতিবন্ধী ভাই ও মা-বোনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধীদের জন্য যা কিছু করেছেন তা ইতোমধ্যে সারাবিশ্বে নজির সৃষ্টি করেছে। প্রতিবন্ধী মানুষকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সুশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এবং বিভিন্নভাবে কাজে লাগিয়ে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং এ বিষয়ে তার যে চিন্তা-চেতনা তা ভাবতেই অবাক হয়ে যেতে হয় আমাদের।

বিগত তিন বছর করোনায় দেশকে অনেকটাই পিছিয়ে দিয়েছে। আজকে প্রধানমন্ত্রী প্রতিবন্ধী ভাই-বোনদের কাছে আসতে পারছেন না। আমি আশ্বস্ত করতে চাই, তিনি শিগগিরই প্রতিবন্ধীদের মধ্যে আসবেন এবং তিনি আসার পর প্রতিবন্ধীদের সমস্যাগুলো জানাতে পারব। আমি আশা করি, তিনি সমস্যাগুলো শুনে দ্রুত সমাধান করবেন। যদিও আমরা প্রতিবন্ধীদের সমস্যাগুলো ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ সনদের আলোকে বাংলাদেশ সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার মর্যাদা এবং সামজিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে আসছে।

তিনি বলেন, আমরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ফিজিওথেরাপি সেবা এবং কৃত্রিম অঙ্গ সরবরাহের জন্য ৬৪ জেলা ও ৩৯ উপজেলায় মোট ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও ওয়ানস্টপ থেরাপি সার্ভিস চালু করেছি। এগুলো পর্যায়ক্রমে সব উপজেলায় চালু করা হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিতকরণের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় প্রতিবন্ধী সম্পর্কিত সমন্বিত বিশেষ শিক্ষা নীতি-২০১৯ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ নীতিমালার আওতায় ৭৪টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়, ১২টি স্পেশাল স্কুল ফর স্টুডেন্ট পরিচালিত হচ্ছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, একসময় প্রতিবন্ধিতা নিয়ে কুসংস্কার প্রচলিত থাকলেও বর্তমান সরকারের বিবিধ কর্মসূচির ফলে এখন প্রতিবন্ধীরা সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারছে। এর আগে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন,  সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল।

শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলীপ কুমার ঘোষ, বার্ডোর’র নির্বাহী পরিচালক সাইদুল হক, প্রতিবন্ধী নাগরিক সংগঠন পরিষদের চেয়ারপারসন সালমা মাহবুব, অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মহুয়া পাল, উইমেন উইথ ডিজইব্যালিটিজি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহর মিষ্টি, চাকরিপ্রত্যাশী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী গ্রাজুয়েট পরিষদের আহ্বায়ক আলী হোসাইন।

সবশেষে মন্ত্রী বিভিন্ন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও সংগঠনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন এবং পাঁচদিনব্যাপী আয়োজিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উন্নয়ন মেলার উদ্বোধন এবং বিভিন্ন পণ্যের স্টল পরিদর্শন করেন।