বাণিজ্য ঘাটতি থেকে কোনোভাবেই বের হতে পারছে না দেশ। আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য রক্ষায় নানামুখী পদক্ষেপের পরও ঘাটতি কমেনি। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ৯৫৮ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে। দেশীয় মুদ্রায় এই অংক এক লাখ কোটি টাকার বেশি। একই সঙ্গে চলতি হিসাব ও সামগ্রিক লেনদেনেও ঘাটতি হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রপ্তানি আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় বেশি হওয়ায় এ বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এলসির পরিমাণ কমিয়ে বাণিজ্যে ভারসাম্য তৈরির যে প্রচেষ্টা বাংলাদেশ ব্যাংক চালিয়ে যাচ্ছে তার ফল পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, আমদানিতে বিগত যে বিশাল বকেয়া রয়েছে তার বড় চাপ তৈরি হয়েছে অর্থনীতিতে। ফলে আশঙ্কাজনক হারে চলতি হিসাবে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে দুই হাজার ৫৫০ কোটি ৫০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। তার বিপরীতে এক হাজার ৫৯১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এতে ৯৫৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এসময় সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতিও বেড়েছে। অক্টোবর মাস শেষে সেবা খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ২৯৭ কোটি ডলার।
অন্যদিকে সেবা খাতে ব্যয় হয়েছে ৪৩৩ কোটি ১০ লাখ ডলার। এ খাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৩৬ কোটি ১০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৯৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে চলতি হিসাবের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৫০ কোটি ১০ লাখ ডলার।
গত অর্থবছরে একই সময়ে এ ঘাটতি ছিল ৩৮৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ঘাটতি বেড়েছে ৬৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার। চলতি বছরের শুরু থেকেই দেশে ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়ে চাপ সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এতে ধারাবাহিকভাবে কমছে রিজার্ভ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে বর্তমানে রিজার্ভ প্রায় ৩৪ বিলিয়ন ডলার। আর বিনিয়োগ বাদ দিয়ে নিট রিজার্ভ ২৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। এসব সংকটের মধ্যেই বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান দুটি খাত প্রবাসী আয় ও রপ্তানিতে বড় ধাক্কা লেগেছে।