যুগপৎ আন্দোলনে ১০ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আগামী ১৩ ডিসেম্বর গণমিছিল, ২৪ ডিসেম্বর জনতার মিছিল কর্মসূচি পালিত হবে। এসময় তিনি বলেন, আজকের সমাবেশ জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছে। এ জন্য আমি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষ থেকে দেশের জনগণসহ আমাদের নেতাকর্মীদের অভিনন্দন জানাই এবং তার সাথে আল্লাহর প্রশংসা করছি। আপনারা জানেন, আজকে যিনি এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, তাকে গভীর রাতে আটক করা হয়েছে। কিন্তু আপনারা প্রমাণ করেছেন— নেতার জন্য নয়, আপনারা দেশের জন্য রাজনীতি করেন।
এই সমাবেশ বানচাল করার জন্য প্রশাসন ত্রাস সৃষ্টি করেছিল। আমাদের এক নেতা পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। আরো শতশত আহত হয়েছেন গুলিতে, আমাদের দলীয় কার্যালয়ের সব ডকুমেন্ট পুলিশ নিয়ে গেছে। পুরো কার্যালয় তছনছ করে গেছে। গতকাল বিকেলে রাজধানীর গোলাপবাগ গণসমাবেশে এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, এই সরকার এখন জনতার ভয়ে ভীতু। এ জন্য আমাদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। সভা-সমাবেশ করা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার, কিন্তু সেখানেও বাধা। কারণ আমরা মানুষের ভোটের অধিকারের কথা বলছি, নিরাপত্তার কথা বলছি। আমরা জানি, এই দেশের মানুষ আর সরকারকে ভয় পায় না। মানুষ এখন শেখ হাসিনার বিদায় চায়। খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল পর্যন্ত লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছে। এতে মানুষ কি বার্তা দিচ্ছে! মানুষ এখন সরকারকে সরে যেতে বলছে। মানুষ আর হাসিনা সরকারকে দেখতে চাচ্ছে না। মানুষ এখন নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র নেতৃত্ব চাচ্ছে। এই সরকারকে এখন আর বিশ্বাস করে না কেউ।
মোশাররফ বলেন, বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিক দিক থেকে খাদের কিনারায় পড়ে গেছে। দেশ থেকে ব্যাংকের টাকা লুট হয়ে গেছে। তারা বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করে ফেলেছে। যার কারণে বেগম জিয়া মুক্তি পাননি। অন্যায়ভাবে তারেক রহমানকে সাজা দিয়েছে। আজকের সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করছে। যার উদাহরণ পুলিশ আমাদের পার্টি অফিসে যা করেছে। হাসিনার পক্ষে আর দেশ চালানো সম্ভব নয়। আজকে দেশের জনগণ শুধু গরিব হচ্ছে। ২০ শতাংশ গরিব এখন ৪০ শতাংশে পৌঁছেছে। এই সরকারের এখন বিদায় চায় মানুষ।
তাই এই সরকারকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে। ১০ দফা উপস্থাপন করে তিনি বলেন, যারা যুগপৎ আন্দোলন করবে তাদের সাথেও আলোচনা করেছি। সংসদ ভেঙে দিতে হবে, নির্বাচন হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে, ভোট হবে ব্যালটে। বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আইসিটি মামলা বাতিল করতে হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম কমাতে হবে। নিত্যপণ্যের বাজার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে। শিশুশ্রম বন্ধ করতে হবে। দুর্নীতির বিচারে কমিশন গঠন করতে হবে। বিচার বিভাগ স্বাধীন রাখতে হবে।
১৩ ডিসেম্বর গণমিছিল, ২৪ ডিসেম্বর জনতার মিছিল কর্মসূচি : সমাবেশের প্রধান অতিথি বিএনপি স্থায়ী কমিটি সদস্য ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আগামী ১৩ ডিসেম্বর দলের সব নেতার মুক্তির দাবিতে ঢাকাসহ সারা দেশে গণমিছিল কর্মসূচি পালন করা হবে এবং আগামী ২৪ ডিসেম্বর ১০ দফা বাস্তবায়নে ঢাকাসহ সারা দেশে জনতার মিছিল পালন করা হবে।
১০ দফায় যা রয়েছে : ১. বর্তমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। ২. ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ’-এর আলোকে একটি দলনিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার-অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন। ৩. নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকার-অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বর্তমান অবৈধ নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, ওই নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের অনিবার্য পূর্বশর্ত হিসেবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা। ৪. খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক ও আলেমদের সাজা বাতিল, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দিদের অনতিবিলম্বে মুক্তি, দেশে সভা-সমাবেশ ও মত প্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা, সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দলের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা, স্বৈরাচারী কায়দায় বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনো মামলা ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার না করা। ৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ ও বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪-সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালাকানুন বাতিল করা। ৬. বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস ও পানিসহ জনসেবা খাতে মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল। ৭. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেটমুক্ত করা। ৮. গত ১৫ বছর ধরে বিদেশে অর্থ পাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ার বাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন-দুর্নীতি চিহ্নিত করে অতি দ্রুত যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। ৯. গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার ও বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর ও সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করা। ১০. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়া।
পদত্যাগের ঘোষণা বিএনপির সাত এমপির : বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে সাত এমপি সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। বিএনপির সাত এমপি হলেন— ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আবদুস সাত্তার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের হারুনুর রশীদ, বগুড়া-৬ আসনে গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, বগুড়া-৪ আসনে মোশাররফ হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে আমিনুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে জাহিদুর রহমান জাহিদ ও সংরক্ষিত মহিলা আসনে রুমিন ফারহানা। এর মধ্যে হারুন অর রশিদ দেশের বাইরে থাকায় ই-মেইলে পদত্যাগ করেছেন।
এ বিষয়ে সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম বলেন, আজকে আমরা আমাদের নেতা তারেক রহমান, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সাক্ষ্য রেখে আমরা বিএনপির সাত এমপি অবৈধ সরকারের সংসদ থেকে পদত্যাগ করলাম। আজ থেকে আমরা আর সংসদে নেই। রুমিন ফারহানা বলেন, বিএনপি এখনো খেলা শুরুই করেনি। উত্তর থেকে দক্ষিণ মানুষ আর মানুষ। বিএনপি সাধারণ মানুষের দল। আওয়ামী লীগ নামক আর কোনো দল নেই। এত মানুষকে খুন করে, আমাদের কর্মীর বাবাকে পিটিয়ে মারলেন। তবুও আমাদের আটকাতে পারেননি। তাই আজ বলতে হচ্ছে— সংসদে থাকা আর না থাকার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আমি এই সংসদ থেকে পদত্যাগ করলাম। ইতোমধ্যে আমি মেইলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছি। কালকে হাতে হাতে পৌঁছে দেবো। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেছেন, এই সমাবেশ এখন মহাসমাবেশে রূপ নিয়েছে। দেড় কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেছে। মতিঝিল, মুগদা, যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত লোক হয়েছে। এই সমাবেশে প্রমাণ করে— শেখ হাসিনা আর এক মিনিটও ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। আমাদের শীর্ষ নেতাদের আটক করেছে। এই সরকার এখন বিএনপিকে ভয় পায়। তিনি জানেন, ভোট চুরি করে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। ভোট চুরির সংসদে এখন আর কেউ থাকতে চান না। এখন প্রয়োজন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সেংশন। তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনার ক্ষমতার দিন শেষ। এখন আমাদের শুধু মুক্তির আন্দোলন। তারেক রহমানকে দেশে আনার আন্দোলন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার বলেন, বিএনপি আইনের শাসনে বিশ্বাসী, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। এই সরকার এখন খালেদা জিয়াকে ভয় পায়। এখন ভোট হয় বেঈমানির। ১২টার মধ্যে ভোট হয়ে যায়। সুষ্ঠু ভোট দেন, মানুষ বেছে নেবে সরকার। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ১০ ডিসেম্বর বিজয়ের মাস। এই দিনে জিয়াউর রহমানের নির্দেশে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। আমরা ৯টি খেলায় জিতেছি, দশম খেলাতেও। হাসিনা সরকার এমন কোনো চেষ্টা করেনি আটকাতে। তাণ্ডব চালালো আমাদের দলীয় কার্যালয়ে। কিন্তু সফল হয়নি। গাড়ি চলে না, দোকান খুলে না। এটি কে সৃষ্টি করল, করেছে শেখ হাসিনা। আমরা আজকে জানাব সরকার কোন পথে যাবে। আমরা যুদ্ধ করতে জানি। আবার করব। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। তারেক রহমান আমাদের সামনে নেই, তাতেই এত ভয়। তিনি আমাদের প্রেরণা। এই সরকার ভোট চোর, এখন খিচুড়ি চোর। এখন আমাদের খিচুড়িও চুরি করে নিয়ে গেছে। দেশের সব অর্থ নিয়ে এখন আমাদের খিচুড়িও নিয়ে গেল। দেশের ভোট, গণতন্ত্র সব খেয়ে ফেলল। বিএনপি অফিসে কাঁধে করে বোমা নিয়ে যায় কার্যালয়ে। কিছুই করতে পারেনি। এর প্রতিবাদে আমরা সংসদে সাতটার বোমা নিক্ষেপ করলাম। ক্ষমতা ছেড়ে দেন। নিরপেক্ষ ভোটের ব্যবস্থা করুন। নির্বাচন কমিশনকে বলব, সম্মান নিয়ে কেটে পড়ুন। শেখ হাসিনার সময় শেষ।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, কেউ জোর করে ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। হাসিনাও পারবে না। গণতন্ত্রের জন্য যুগে যুগে অনেকে রক্ত দিয়েছে, আবারও দিতে হবে। সারা দুনিয়ার মানুষ জানে আওয়ামী লীগ দিনের ভোট রাতে দেয়। এবার আর তা করতে দেবো না। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশনায় হাসিনা সরকারকে সরিয়ে দিতে হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সবাই জীবন দিয়ে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে এই সমাবেশে এসেছে। আজকে বাংলাদেশে হরতাল পালিত হচ্ছে। কে ডেকেছে, সরকার ডেকেছে। সব গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় অস্ত্র নিয়ে মাঠে নেমেছে। আমাদের শীর্ষ নেতাদের আটক করেছে। পুলিশ দিয়ে সরকার বোমা নাটক করেছে। যে সরকার ভয়ে হরতাল ডাকে, তাদের মাটি সরে গেছে। পরিষ্কার কথা— তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া নির্বাচন হবে না। সকারের মুখে সংবিধানের কথা মানায় না। যে সরকার পুলিশকে দিয়ে রাষ্ট্র চালায়, শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা দেয়, সেই দেশে সংবিধান আছে? নেই। আমাদের সব সমাবেশে তারা হরতাল ডেকেছে। এগুলো সংবিধানে আছে? তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনা জাতির সাথে প্রতারণা করেছেন। আজকে দেশের মানুষ রায় দিয়েছে, নির্বাচন হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে। আমরা সরকারকে বাধ্য করব দাবি মানতে। আজকের মতো সব সময় রাস্তায় থাকতে হবে। প্রয়োজনে বুকের রক্ত দিতে হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, আমাদের শীর্ষ নেতাদের ধরে নিয়ে গেছে তবুও আমাদের নেতাকর্মী কিংবা জনগণ ভয় পায়নি। আমাদের ১১ জন নেতাকে খুন করা হয়ছে। পুলিশ ভয় পেয়ে এই সমাবেশ নষ্ট করতে চেয়েছে, পারেনি। আজকে এই সমাবেশ যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল ও মুগদা পর্যন্ত চলে গেছে। মানুষ রাস্তায় নেমে গেছে। আর পেছনে ফিরে তাকাবে না। এক দফার আন্দোলনে সবাই একমত।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আজ থেকে চার মাস আগে ঢাকার সমাবেশের সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু এতেই সরকার পাগল হয়ে যায়। আমাদের ওপর চালানো হয় হামলা-মামলা। আমাদের সব সমাবেশে বাধা দিয়ে একটিও আটকাতে পারেনি। সরকার ব্যর্থ। তার পায়ের মাটি সরে গেছে। ওবায়দুল কাদের কি বলে— ‘খেলা হবে’। আমরা তাদের সাথে খেলতে চাই না। শুধু খেলা দেখলাম। যারা প্রজতন্ত্রের চাকর তারা কিভাবে আমাদের দলীয় কর্মীদের ওপর হামলা চালাল। ’৭১ সালের কায়দায় পুলিশ গুলি চালায়। তাদের গুলিতে আমাদের পার্টি অফিসের সামনে একজন মারা যান। পুলিশ দিয়ে রাজনীতির খেলা হয় না। রাজনীতির খেলা রাজনীতি দিয়ে খেলতে হয়। পুলিশ দিয়ে আমাদের দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ অনেক নেতাকে ধরে নিয়ে গেছে। তারপর ও এই সভা বন্ধ করা যায়নি। মানুষ রাস্তায় নেমে গেছে। তাদের আটকে রাখা যায়নি। আমরা আসরের সময় অনুমতি পেয়েছি। কিন্তু মাগরিবের মধ্যে তা পূর্ণ হয়ে যায়। স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, এই সমাবেশে সরকার বাধা দিয়েছে। দেশ দেখেছে, বিশ্ব দেখেছে। কিন্তু সফল হয়নি। বাংলাদেশের মানুষ এই সরকারকে বিশ্বাস করে না। এই সরকার দেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। এই সরকার গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। আমরা আবার তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেবো। এই সরকার শেয়ার বাজার লুট করেছে। সব খেয়ে ফেলছে। বানরে গান গায়— এটি যেমন বিশ্বাস হয় না, তেমনি হাসিনা সরকারকেও মানুষ বিশ্বাস করে না। প্রতিদিন জিনিসের দাম বাড়ছে। শিক্ষা ব্যবস্থা শেষ। আজ থেকে দেশ বাঁচাতে মাঠে থাকব।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আওয়ামী লীগকে মাফ করে দেন। ওদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। উন্মাদ হয়ে গেছে। এই দলের নেতারা শেখ মুজিবের জাহান্নাম কামনা করে। কারণ উন্মাদকে পাগল করা ভালো। আমরা দেখছি, ওবায়দুল কাদেরকে স্বাভাবিক দেখছি না। এদের কিছু কিছু নেতা জাহান্নাম নসিবের জন্যও দোয়া করেন। এরা ঠিক আছে? বলেন। এ জন্য বলছি, মাফ করে দেন। আমরা লগি-বৈঠার আন্দোলন করব না। আমরা কোনো নারীর কাপড় খুলব না। আমরা গান পাউডার দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারব না। আমরা মাঠে নেমে গেছি। এই সরকারের পতন হবে। শেখ হাসিনার বিচার বাংলাদেশে হবে। কোনো মাফ হবে না। আজকে দেশ চালাচ্ছে পুলিশ। কাউকে মাফ করা হবে না। যারা চিহ্নিত তাদের বিচার হবে। খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, আজকে বাংলা দেশের যে রাজনীতি তা হচ্ছে বাকশালী রাজনীতি। আজকে দেশে যে সংকট তা শুধু বিএনপির নয়, দেশের সব মানুষের সংকট। মুক্তিযুদ্ধের মতো আরেকটি লড়াই করতে হবে। একটি দেশের প্রধানন্ত্রী কিভাবে বলেন— ‘হাত পা ভেঙে দিতে’। তিনি সন্ত্রাসীর মতো কথা বলেন। তাই এই সরকারকে এখনই সরিয়ে দিতে হবে। খালেদা জিয়াকে সামনে রেখে আবারো দেশ ঠিক করতে হবে। আজকে আমাদের শীর্ষ নেতারা সবাই কারাগারে। তাদের অপরাধ— তারা রাজনীতি করেন। আজকে যদি মির্জা আব্বাস রাজনীতি না করতেন, তিনি অনেক ভালো থাকতেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, বাকশালের আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ছিল। কল্যাণরাষ্ট্র তৈরি করেছেন জিয়াউর রহমান। অর্থনৈতিক চাকা তার হাত ধরেই। তারেক রহমানের নির্দেশে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তা আর থামবে না। মানুষ শেখ হাসিনার হাত থেকে মুক্তি চায়। আজকে সমাবেশে যে কর্মসূচি আসবে তা পালনে প্রস্তুত থাকতে আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী আটক। গত কয়েক দিনে পাঁচ শতাধিক আটক। তাদের উদ্দেশ্যে ছিল— সমাবেশ যেন বাস্তবায়ন না হয়। যত রকম চক্রান্ত সব হয়েছে। কিন্তু সফল হয়নি। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ আজম খান, ১০ নম্বর সতর্কতা শুরু হয়ে গেছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, খেলা হবে। কাউকে কাদের বলেন, খেলা হবে। আমাদের সাতজন এমপি পদত্যাগ করেছেন। জাতীয় পার্টির নেতাদের বলব আমরা কালকের মধ্যে পদত্যাগ করুক। জনগণের কাতারে চলে আসুন। আসুন সবাই মিলে সরকারের বিরুদ্ধে খেলব। আপনারা পদত্যাগ করেন তাহলে খেলা শুরু হয়ে যাবে। শেখ হাসিনা বিদায় হয়ে যাবে। বিএনপি সরকার গঠন করবে। তারেক রহমান দেশে আসবে। প্রস্তুত হয়ে যান। সমাবেশে অন্যান্য বক্তারা আরো বলেন, সরকার বিএনপির কাছে আত্মসমর্থন করবে। তারেক রহমান দেশে আসবে, নেতৃত্ব দেবে। তখন অনেকের কাপড় ভিজে যাবে। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য এসেছি। তারেক রহমানকে দেশে আনতে এসেছি। লুটপাট হওয়া দেশকে রক্ষা করার জন্য এসেছি । অসুস্থ দেশকে বাঁচাতে এসেছি। এখন ফ্যাসিবাদ থেকে বাঁচানোর লড়াই। বিএনপি এখনো খেলা শুরুই করেনি। উত্তর থেকে দক্ষিণ— মানুষ আর মানুষ। বিএনপি সাধারণ মানুষের দল। আওয়ামী লীগ নামক আর কোনো দল নেই। এত মানুষকে খুন করে, আমাদের কর্মীর বাবাকে পিটিয়ে মারলেন, তবুও আমাদের আটকাতে পারেননি। সংসদে থাকা আর না থাকার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এ দেশের মানুষ এখন খেয়ে বাঁচতে চায় ।শেখ হাসিনা থেকে মুক্তি চায়। সরকার বেসামাল হয়ে গেছে। ভোট চোরের দিন শেষ জেগে উঠেছে বাংলাদেশ। আটক শীর্ষ নেতাদের মুক্তি দিতে হবে। ঢাকার রাজপথ বিএনপির দখলে। এক দফার আন্দোলন দেন। হাসিনা সরকারকে মানি না। তারেক রহমান আসবেন। আবার নেতৃত্ব দেবেন। মির্জা ফখরুল, মির্জা আব্বাসকে আটক করে লাভ হবে না। ওবায়দুল কাদের উসকানিদাতা। তার কারণে শীর্ষ নেতারা আটক। কাদেরকে দ্রুত আটক করেন। না হয় পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। নির্বাচন হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। এ ছাড়া নির্বাচন নয়। বিএনপি পরাজিত হবে না। বিএনপি আবার সরকার গঠন করবে, বাংলাদেশ জেগে ওঠেছে। মানুষ সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। মানুষ হাসিনার পতন চায়। ঘরে ঘরে কান্নার আওয়াজ, গুম খুন করা হচ্ছে। সন্তান হারা মা বুঝতে পারে।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি সদস্য সচিব আমিনুল হক এবং রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন ফরহাদ হালিম, মাহবুব উদ্দিন খোকন, জয়নাল আবেদীন, রুমিন ফারহানা, হারুন অর রশীদ এমপি, মোশাররফ হোসেন, গোলাম মুহাম্মদ সিরাজ এমপি, আবদুস সালাম আজাদ, ড. আসাদুজ্জামান খান রিপন, সালাউদ্দিন আহমেদ, কায়সার কামাল, মীর শরাফত আলী সফু, শিরিন সুলতানা, আবুল কালাম আজাদ, নজরুল ইসলাম আজাদ, কাজী আবুল বাশার, মীর নেওয়াজ আলী, আফরোজা আব্বাস, হুমায়ুন কবির খান, আশরাফ উদ্দিন, সাইফুল আলম নীরব, সালাউদ্দিন বাবু ও রওনুকুল ইসলাম শ্রাবণ।
বিএনপির সঙ্গে একসাথে গণমিছিল করার ঘোষণা জামায়াতের : ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে আগামী ২৪ ডিসেম্বর গণমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর কিছুক্ষণ পর একই দিনে একই কর্মসূচি দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির আমীর ডা. শফিকুর রহমান যুগপৎ আন্দোলনের লক্ষ্যে ১০ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। জামায়াত আমীর বলেন, ‘বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ থেকে প্রতিনিয়ত নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। জনগণের অধিকার বাস্তবায়ন করতে গেলে পুলিশ বাধা দিচ্ছে। ২০১১ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামীর কার্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে। আদালতে ন্যায়বিচারের পরিবেশ নেই।’ ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘দেশকে আজ ভয়াবহ সংকট থেকে উদ্ধারের জন্য জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করা দরকার। এ জন্য অবিলম্বে দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রয়োজন। জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করছি। এ ছাড়া কর্মসূচি সফল করতে সবাইকে আহ্বান জানান তিনি।