কুয়াশায় বিপজ্জনক মহাসড়ক

নুর মোহাম্মদ মিঠু প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৯, ২০২২, ১১:৫৫ এএম
  • ঘন কুয়াশায় সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে পার্কিং করা গাড়ি
  • বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চালকরা মানছেন না নিয়ম অসচেতনতায় ঘটছে দুর্ঘটনা
  • মহাসড়কে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ হাইওয়ে পুলিশের
  • ঘন কুয়াশায় শাহজালালে নামতে পারেনি সাতটি ফ্লাইট

ঘন কুয়াশা আর চালকদের অসচেতনতায় শীতের শুরুতেই বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে সড়ক-মহাসড়ক। হাইওয়ে পুলিশের দেয়া পরামর্শ উপেক্ষা করে চালকদের বেপরোয়া যান চলাচলে দেশের একাধিক স্থানে সৃষ্ট দুর্ঘটনায় ইতোমধ্যেই ঘটেছে প্রাণহানির ঘটনাও।

এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন যাত্রীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাতাসে থাকা জলীয় কণার সঙ্গে ধুলাবালি মিশেই তৈরি হচ্ছে ঘনকুয়াশা। সামপ্রতিক সময়ে অত্যধিক পরিবেশদূষণের কারণে বাতাসে ধোঁয়া ও ধুলাবালির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বাড়ছে কুয়াশার ঘনত্বও।

যে কারণে কয়েক ফুটের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে দৃষ্টিসীমা। এসময়ে রাস্তায় থাকা কোনো গাড়ি যখন কয়েক ফুট দূরের অন্য আরেকটি গাড়িকে আকস্মিক দেখতে পায়, তখন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘটাচ্ছে দুর্ঘটনা। শুধু বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ির সাথেই সংঘর্ষই নয়, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের সাথেও ঘটছে সংঘর্ষের ঘটনা। ধাক্কা লাগছে সেতুর রেলিংয়ের সাথে। সড়কে পার্কিং করা গাড়িতেও ধাক্কা দেয়ার ঘটনা ঘটছে।

গত সপ্তাহের বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে অন্তত ৪০টি যানবাহন। নিহত হয় ১৬ জন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। দেশের পশ্চিমাঞ্চলের ৯টি জেলায় ঘটে যাওয়া এসব দুর্ঘটনার মূল কারণই ছিল ঘনকুয়াশা।

গাইবান্ধা, টাঙ্গাইল, যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মাগুরা, সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও বাগেরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘটে যাওয়া এসব দুর্ঘটনায় সড়কে চলাচলে পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। একইভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও  ঘনকুয়াশার প্রভাবে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে কয়েকগুণ। 

শুধু তাই নয়, ঘন কুয়াশায় বন্ধ থাকছে ফেরি চলাচল, রাতের ঘাট ও ফেরিতে থাকা যাত্রীদেরও পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। হাইওয়ে পুলিশের বিভিন্ন রিজিয়নের কর্মকর্তারা বলছেন, ঘনকুয়াশায় হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। গতিও অত্যন্ত সীমিত রাখতে হয়, যাতে দু-এক ফুটের মধ্যে গাড়ি থামানো যায়। কিন্তু বেশির ভাগ চালকরাই এসব নিয়ম মানছেন না। 

আবার রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকগুলোতেও জ্বলছে না বাতি। গাছ, সেতুর রেলিং, পিলার কিংবা আরও অনেক কিছু থাকে, যেগুলোতে বাতি থাকে না। সেসব গাড়ির সঙ্গেই দ্রুত গতির যানবাহনের আচমকা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। পুলিশ বলছে, এখনি গতি সীমিত না করলে এবারের শীতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বাড়বে।

এদিকে সড়কে কোনো কোনো গাড়ি চলছে হেডলাইট ছাড়াই, কোনো কোনো গাড়ি চলছে অতিরিক্ত গতিতে, সেগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য রাস্তায় ট্রাফিক বা হাইওয়ে পুলিশকেও এত ঘন কুয়াশার মধ্যে তেমন সক্রিয় দেখা যায় না। অবশ্য ঘন কুয়াশায় পুলিশেরও দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ফলে এ মুহূর্তে অতিরিক্ত ঘনকুয়াশায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

চালকরা বলছেন, সড়ক-মহাসড়কে ঘন কুয়াশার কারণে অর্ধেক গতিতেও গাড়ি চালানো যাচ্ছে না; রাস্তা ফাঁকা থাকলেও দুর্ঘটনা এড়াতে সতর্ক থাকতে হচ্ছে, চলতে হচ্ছে কম গতিতে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পথেও বেড়েছে ঘন কুয়াশার আধিপত্য। এ পরিস্থিতিতে মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে ব্যস্ততম এ মহাসড়কেও যান চলাচলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে। ফগ লাইট ব্যবহার করেও সামনের পথ দেখতে পারছেন না চালকরা।

হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সঠিক নিয়ম মেনে গাড়ি চালালে ঘন কুয়াশায় খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা না। এছাড়া আমাদের দেশের চালকরা ঘনকুয়াশায় গাড়ি চালাতে অভ্যস্ত। এরপরও হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে পরিবহনের মালিক ও চালকদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরাও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে দিন-রাত মাঠে কাজ করছেন।’

গতকাল রোববার সকালেও মহাসড়ক ধরে কুমিল্লার প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হেড লাইট জ্বালিয়ে ধীর গতিতে চলাচল করছে বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ সব ধরনের যানবাহন। তবে সকাল ৯টার পর কুয়াশার তীব্রতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ আরও বলেন, ঘন কুয়াশার মধ্যে সব যানবাহনে ফগলাইট ব্যবহারে গুরুত্ব দিয়ে এবং গতি নিয়ন্ত্রণে রেখে গাড়ি চালাতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি গাড়িকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করতে হবে। চালকদের মনে রাখতে হবে সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।

ঘন কুয়াশায় শাহজালালে নামতে পারেনি সাতটি ফ্লাইট : হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঘন কুয়াশার কারণে ফ্লাইট ওঠানামা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। রোববার ভোরের দিকে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন রুটের ৭টি ফ্লাইট ঘন কুয়াশার কারণে নামতে পারেনি। দীর্ঘক্ষণ আকাশে অপেক্ষা করেও অনুমতি না মেলায় ফ্লাইটগুলো সিলেট ও কলকাতা বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

তবে সকাল ৯টা ১০ মিনিটের দিকে কুয়াশা কমে গেলে ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক হয় বলে জানিয়েছে বিমানবন্দর এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল বিভাগ। এ ছাড়া সিলেট ও কলকাতায় অবতরণ করা বিমানগুলো যাত্রীদের নিয়ে ঢাকায় ফিরে আসছে। বর্তমানে বিমানবন্দরের ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এদিকে, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত চলমান ঘন কুয়াশা আরও দু-তিনদিন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।