করোনা ভাইরাস! কয়েক বছর ধরে অদৃশ্য এক আতঙ্কের নাম। যদিও দেশের কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু বিদায়ী বছরের শুরুতে ছিল করোনার দাপট। গত জানুয়ারিতে অতিমারির নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রভাবে সংক্রমণ চূড়ায় পৌঁছায়।
সাত মাসের রেকর্ড ভেঙে শুধু ২৪ জানুয়ারি এক দিনে প্রায় ১৬ হাজারেরও বেশি নমুনায় ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে যা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হতে শুরু করে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন, আবশ্যিক মাস্ক পরিধান এবং কোভিড টিকায় জোর দেয় সরকার। ফেব্রুয়ারি থেকে পাল্টাতে শুরু করে কোভিড সংক্রমণ।
মার্চের শেষ দিকে পরিস্থিতির উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। কোভিড যখন নিয়ন্ত্রণে আসে ঠিক তখনই ডেঙ্গুজ্বর মাথাচাড়া দেয়। মশাবাহিত ডেঙ্গু গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ভোগাচ্ছে। সরকারি হিসাব মতে, চলতি বছর ডেঙ্গুতে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়। সাধারণত শীত মৌসুমে ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার কমতে শুরু করে কিন্তু এ বছর এর ব্যতিক্রম। এখনও ডেঙ্গুতে মৃত্যু হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবারও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। গোটা বছর ছিল ভাইরাসের দাপট। এতে ব্যাহত হয়েছে জনস্বাস্থ্যের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সেবা।
বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্য সমস্যার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ওমিক্রন-ডেঙ্গু দুই জ্বরের প্রকোপে কেটেছে একটি বছর। সাধারণ মানুষ দুই জ্বরে ছিল নাস্তানাবুদ। ওমিক্রন-ডেঙ্গু মোকাবিলায় ব্যস্ত থাকায় ব্যাহত হয়েছে নানা জটিল রোগের চিকিৎসা। এদিকে আসছে বছর করোনা ভাইরাস ফের চোখ রাঙাচ্ছে। ভাইরাসটির একটি নতুন ধরন ফের চীন ও প্রতিবেশী ভারতে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতির কারণে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ করোনা প্রাদুর্ভাবের মুখোমুখি হয়ে উঠেছে চীন।
পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে, চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ করোনা আক্রান্তের তথ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। গত সোমবার চীনা নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশের সময় চারজনের নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। প্রতিবেশী ভারতের সাথেও রয়েছে ঘনিষ্ঠ যাতায়াত। বাংলাদেশ ফের কোভিড সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, সারাবিশ্বে কোভিড মহামারি বেড়ে গেছে। চীনে অসংখ্য মানুষ আবারও আক্রান্ত হচ্ছে। টিকা না নেয়া ব্যক্তিদের জন্য ভয় বেশি। তাই সবাইকে টিকা নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরের মাঝামাঝি আঘাত হানা ডেঙ্গুতে সরকারি হিসাবে গতকাল মারা যাওয়া তিনজনকে নিয়ে দেশে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর চলতি বছরের শুরু থেকে গতকাল (২৭ ডিসেম্বর) পর্যন্ত সারা দেশে ৬২ হাজার ১৮৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে ১৭৩ জন মারা গেছে রাজধানীতে। ঢাকার বাইরে মৃত্যু হয়েছে ১০৮ জনের। এ বছর সর্বোচ্চ রোগী ভর্তি হয়েছে অক্টোবরে। অক্টোবর মাসে ২১ হাজার ৯৩২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
আর সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে নভেম্বরে। তখন ১১৩ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চলতি মাসের গত ২৭ দিনে চার হাজার ৮৩১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। অধিদপ্তরের কোভিড বিষয়ের হিসাব মতে, দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৪৬ জনে। তার মধ্যে সুস্থ হয়েছে ১৯ লাখ ৮৭ হাজার ৪৪৭ জন। আর মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৯ হাজার ৪৩৯ জন।