বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে ব্যাংকগুলো। শতভাগ লক্ষ্য অর্জিত না হলেও আগের বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
বেশ কয়েকটি ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অনেকটা এগিয়েছে। বাকিরা নির্দেশনা মেনে বিনিয়োগ করলে এ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে, বিতরণকৃত মোট মেয়াদি ঋণের ন্যূনতম ৫ শতাংশ সবুজ অর্থায়ন করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স’ বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোর মোট সবুজ অর্থায়নের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। যা গত বছরের একই সময় ছিল এক হাজার ৫০৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে অর্থায়নের পরিমাণ বেড়েছে ৭৭.৬৪ শতাংশ। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো টেকসই প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে ৩১ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা।
এর মধ্যে ব্যাংকগুলো অর্থায়ন করেছে ৩১ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ। একই সময়ে পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুই হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা অর্থায়ন করেছে, যা মোট মেয়াদি ঋণের ৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
গ্রিন ফাইন্যান্স বা সবুজ অর্থায়নের মূল উদ্দেশ্য হলো পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখার পাশাপাশি প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ, পানি ও কাগজের খরচ কমানোর উপযোগী প্রতিষ্ঠান ও কারখানাগুলোকে ধরা হয় সবুজ শিল্প হিসেবে।
২০১১ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবুজ অর্থায়নের বিষয়ে নীতিমালা জারি করলেও সমপ্রতি সেটি সংশোধন করে নতুন করে জারি করা হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বিদ্যুতের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, বিকল্প উপায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন, তরল ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্য উৎপাদন, পরিবেশবান্ধব ইটভাটা ও স্থাপনা নির্মাণ, গ্রিন কৃষি ও এসএমইসহ বিভিন্ন খাতের ৬৮টি ব্যাংকিং প্রডাক্টে বিনিয়োগকে সবুজ অর্থায়ন হিসেবে বিবেচিত করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, গ্রিন ব্যাংকিং কার্যক্রমকে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুনঃঅর্থায়ন সহায়তাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই উদ্যোগের ফলাফল হিসেবে আশা করা যায়, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে টেকসই অর্থায়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। টেকসই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে কৃষি, সিএমএসএমই, পরিবেশবান্ধব কারখানা, সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল প্রকল্পে অর্থায়ন। যদিও মোট ঋণের ২০ শতাংশ টেকসই প্রকল্পে হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে সবুজ অর্থায়নে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ৯৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ অর্জন করেছে। বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণের তালিকায় দ্বিতীয় জনতা ব্যাংক ৫২.০২ শতাংশ। এরপর যথাক্রমে বিদেশি ব্যাংক স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া তাদের লক্ষ্যমাত্রার ৫০ দশমিক ৭৮, রূপালী ব্যাংক ৪৬ দশমিক ৮৯, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ৩২ দশমিক ২১, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ অর্জন করেছে।
আর টেকসই অর্থায়নে বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণের তালিকায় প্রথম ন্যাশনাল ব্যাংক শতভাগ অর্জন করেছে। এরপর আছে যথাক্রমে কৃষি ব্যাংক ৫৫ দশমিক ২৬, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ৫৪ দশমিক ৭৫, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ৪৫ দশমিক ১৯, বিদেশি ব্যাংক স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ৩১ দশমিক ৬৫, এনআরবি কমার্শিয়াল ২৮ দশমিক ৮৭, রূপালী ২৭ দশমিক ৭৯ এবং যমুনা ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার ২৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ বিতরণ করেছে।
প্রসঙ্গত, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গ্রিন ফাইন্যান্স বা সবুজ অর্থায়নের ওপর জোর দিচ্ছে অর্থনীতিবিষয়ক নীতিনির্ধারকরা। এর অংশ হিসেবে পরিবেশবান্ধব সবুজ অর্থায়নে জোর দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকও। ফলে ২০১১ সাল থেকেই দেশের ব্যাংকগুলোকে পরিবেশবান্ধব অর্থায়নে জোর দেয়ার তাগিদ দিয়ে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এজন্য পূর্ণাঙ্গ একটি নীতিমালা জারিও করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। এসব নির্দেশনার ফলে দিন দিন বাড়ছে এ খাতে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ।