আবাসিকের পাশাপাশি সিএনজি স্টেশনগুলোতেও তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। সিএনজি স্টেশনে পর্যাপ্ত গ্যাস না থাকায় দুর্ভোগ আর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। এদিকে সংকটের অজুহাতে বাড়ছে যাত্রীভাড়া। যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি খরচ। রাজধানীসহ সিএনজি পাম্পগুলোতে চালকদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায় প্রতিনিয়ত। নষ্ট হয় কর্মঘণ্টা। পাচ্ছে না চাহিদা মতো গ্যাস।
গ্যাসের চাপ না থাকায় মগবাজার, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, মালিবাগ, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকার সিএনজি পাম্পগুলোতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় চালকদের। পাম্প এলাকায় যানবাহনের দীর্ঘ লাইন সৃষ্টি হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকে গ্যাস না পেয়ে ফিরে যাওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এতে ক্ষোভও জানিয়েছেন অনেকে। গ্যাস না থাকা নিয়ে আগাম কোনো নোটিসও দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন পরিবহন চালকরা।
এদিকে, সাভার ও গাজীপর ও সিলেটের বিভিন্ন সিএনজি স্টেশনেও গ্যাস সরবরাহ কম। সেখানেও ভোগান্তিতে পড়ে অসংখ্য গাড়িচালক।
সিএনজি পাম্প কর্তৃপক্ষ বলছে, বিপিসির সরবরাহ কম থাকায় রাজধানীতে গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এর আগে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তীব্র গ্যাস সংকট দেখা যায়। দেশের অন্যতম বৃহত্তম গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডে সমস্যা দেখা দেয়ার পরেই শুরু হয় জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ। প্রায় ৪৫ কোটি ঘনফুট উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্যাসের সরবরাহে বড় ধরনের সংকট দেখা দেয়।
সিএনজি স্টেশন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি ফারহান নূর বলেন, লাইনে একদম প্রেসার নেই। ১৫ পিএসআইর জায়গায় দুই-তিন পিএসআই চাপ মিলছে।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। দেশের অন্যতম বড় গ্যাসক্ষেত্র তিতাস অবস্থিত ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে। সোর্সের পাশে থেকেও শহরে গ্যাস মিলছে না, এটি কখনো হয়নি। আবাসিক ও পাম্পের গ্যাসের পাশাপাশি বিদ্যুৎ খাতও কম পাচ্ছে গ্যাস।
সূত্র মতে, সংকটে প্রায় চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। গ্যাসভিত্তিক সব বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে দিনে ১৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন হয়। তবে ঘাটতির কারণে পেট্রোবাংলা সর্বোচ্চ ১১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস দিতে পারে। এই সরবরাহও এখন ৭০ কোটি ঘনফুটে নেমে এসেছে।
পেট্রোবাংলার তথ্যমতে, সরকারের নানা উদ্যোগে কয়েক বছর আগে দেশের দৈনিক গ্যাস উৎপাদন বেড়ে ২৭০ কোটি ঘনফুটে পৌঁছেছিল। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা বিশেষ করে সমুদ্রে তেল- গ্যাস অনুসন্ধানে অচলাবস্থার কারণে বর্তমানে তা কমে ২৩০ কোটি ঘনফুটে নেমে এসেছে।
পেট্রোবাংলার সূত্র জানায়, সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি আছে। সারা বিশ্বেই গ্যাসের সমস্যা এখন। এ নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে চিন্তাভাবনা চলছে। দাম সহনীয় হলে এলএনজি আমদানি বাড়ানোর কথা ভাবতে পারে সরকার। এখন দেশি উৎস থেকে উৎপাদন বাড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
এদিকে হবিগঞ্জে গ্যাস সংকটের কারণে প্রায় ১২ হাজার সিএনজি অটোরিকশার চালক বিপাকে পড়েছেন। এতে যাত্রীদেরও গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। এ সংকট দেখা দিয়েছে জেলার সাতটি ফিলিং স্টেশনে। এক মাসের জন্য বরাদ্দ পাওয়া গ্যাস নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বিক্রি হয়ে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে।
গত শুক্রবার থেকে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে হবিগঞ্জ শহরের বহুলা এলাকার ‘এম হাই অ্যান্ড কোং`। এর ফলে হবিগঞ্জ সদর, লাখাই, শায়েস্তাগঞ্জ, বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ ও নবীগঞ্জ উপজেলায় চলাচলকারী অটোরিকশাগুলো গ্যাস পাবে না।
অটোরিকশার চালক মনির বলেন, এক সপ্তাহ গ্যাস পাওয়া যাবে না। রুটিরুজি বন্ধ হয়ে যাবে হয়তো। আমরা দিনে যা রুজি হয় তা দিয়েই সংসার চালাই।
কবির মিয়া নামের এক সিএনজিচালক বলেন, প্রায় এক মাস ধরেই গ্যাসের সংকট চলছে। এ জন্য নিয়মিত লাইনে গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় তিনি বিপাকে পড়েছেন। বানিয়াচং-হবিগঞ্জ রোডে চলাচলকারী অটোরিকশাগুলোতে যাত্রীদের কাছে থেকে দ্বিগুণ ভাড়া নিতে দেখা গেছে। এ কারণে যাত্রী ও চালকদের মধ্যে প্রায়ই বাকবিতণ্ডা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জেলায় ফিলিং স্টেশন রয়েছে আটটি। এর মধ্যে সাতটি ফিলিং স্টেশনই চলতি মাসের জন্য বরাদ্দ পাওয়া গ্যাস শুক্রবারের মধ্যে বিক্রি করে ফেলেছে। এ জন্য ফেব্রুয়ারি মাস শুরু হওয়ার আগে তারা আর গ্যাস বিক্রি করতে পারবেন না।
সিএনজি অটোরিকশা সমিতির এক নেতা জানিয়েছেন, প্রতি জেলায় নিবন্ধনভুক্ত সিএনজি আছে ১০ থেকে ১২ হাজার। অন্যদিকে নিবন্ধনহীন আরও অন্তত পাঁচ- সাত হাজার সিএনজি অটোরিকশা আছে।
এদিকে কেউ কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস বা এলপিজি দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন। এ কারণে তারা অনেকটা বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন।
জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড (জেজিটিডিএসএল), সিএনজি ফিলিং স্টেশন, সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকদের সূত্রে জানা গেছে, সিএনজি স্টেশনগুলোর জন্য গ্যাসের একটি মাসিক বরাদ্দ থাকে। সেই অনুযায়ী স্টেশন কর্তৃপক্ষ গ্যাস বিক্রি করে। এত দিন কড়াকড়ি না থাকায় কোনো কোনো সিএনজি ফিলিং স্টেশন বরাদ্দ থেকে বেশি গ্যাস বিক্রি করেছে। কিন্তু এখন সরকার গ্যাস সাশ্রয়ের নির্দেশ দেয়ায় বরাদ্দের বাইরে গ্যাস বিক্রির সুযোগ নেই।
এ পরিস্থিতিতেও মাসিক বরাদ্দের গ্যাস নির্ধারিত সময়ের আগে শেষ হয়ে যায়। সিএসজি চালকদের নানা ভোগান্তির কারণ দেখিয়ে বাড়তি ভাড়া হাঁকছে যাত্রীদের ওপর। সিএনজি ফিলিং স্টেশনে কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়ার যুক্তি দেখিয়ে যাত্রীপ্রতি ভাড়া ১০ থেকে ৫০টা বাড়িয়ে দিচ্ছেন চালকরা। এ নিয়ে চালক ও যাত্রীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা লেগেই আছে।
রাজধানীর নাভানা সিএনজি যোগাযোগ ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক মাসুদুর রহমান বলেন, গ্যাস সংকট তো রয়েছে। ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ চাপ পাওয়া যায়। এতে গাড়িতে গ্যাস দিতে সময় লাগে। গাড়ির লাইন পড়ে যায়।