রাজপথে সংঘাতের কোনো আশঙ্কা নেই -অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম প্রেসিডিয়াম সদস্য, আওয়ামী লীগ
আ.লীগ ভীত তাই পালটা কর্মসূচি দিচ্ছে -ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য
রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় শহরে আজ পালটাপালটি শোডাউন করবে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। মিছিল সমাবেশের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দল ও রাজপথের প্রধান বিরোধী দল নিজেদের অবস্থান জানান দেয়ার চেষ্টা করবে। পালটাপালটি কর্মসূচিতে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ারও শঙ্কা রয়েছে।
যদিও দুই দলই সংঘাত এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিরোধী দল বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা সব সময়ই বলে আসছেন, তারা গণতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করবেন।
অপরদিকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও বলছেন, তারাও শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখেই দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, একই দিনে সমাবেশে হলেও অপ্রীতিকর ঘটনার ঘটার কোনো সম্ভাবনা নেই। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ ঢাকাসহ দেশের সব বিভাগীয় শহরে সমাবেশে করবে বিএনপি। খালেদা জিয়াসহ বিএনপির বন্দি নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি, গ্যাস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে গত ১০ ডিসেম্বর ঘোষিত ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে আজ ৪ ফেব্রুয়ারি দেশের সব বিভাগীয় শহরে এ সমাবেশ পালিত হচ্ছে। গত ২৫ জানুয়ারি বিকেলে নয়াপল্টনে আয়োজিত এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
এদিকে একই দিন ঢাকাসহ সারা দেশের শান্তি সমাবেশ পালন করবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আজ বেলা ৩টায় রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর ৩১ শয্যার সরকারি হাসপাতাল মাঠে শান্তি সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। এ সমাবেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথি থাকবেন।
এ ছাড়াও দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা অংশ নেবেন। এই কর্মসূচি সফল করতে দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা বর্ধিত সভা করে প্রয়োজন সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। কামরাঙ্গীরচর সরকারি হাসপাতাল মাঠে শান্তি সমাবেশ ছাড়াও শনিবার রাজধানীতে সতর্ক পাহারায় থাকবে আওয়ামী লীগ।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ অবস্থান করবে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকার মধ্যে যাত্রাবাড়ী, শ্যামলী, ফার্মগেট, মিরপুর, গাবতলী, শাহবাগ, পল্টন, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ সংলগ্ন এলাকা, মগবাজার, মালিবাগ, রামপুরা, পুরান ঢাকার নয়াবাজার, জজকোর্ট এলাকা অবস্থান নেবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগর নেতাকর্মীরা রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেবেন। এ ছাড়াও পাড়া-মহল্লায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সতর্ক পাহারায় থাকবেন।
থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, তারা শান্তির পক্ষে, কেউ যেন শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক অবস্থানের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্যই এই সতর্ক পাহারা। জানা গেছে, আজ রাজধানীর ২৪ থানার মূল পয়েন্ট কিংবা মোড়ে থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি- সাধারণ সম্পাদকরা অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি তদারকি করবেন। কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে প্রয়োজনীয় দিকনিদের্শনা দেবেন। ওয়ার্ড ও থানায় অবস্থান তদারকি করতে মহানগর নেতাদের এলাকা ভাগ করে দেয়া হয়েছে। সতর্ক অবস্থানের অংশ হিসেবে সব থানা, ওয়ার্ডগুলোতে নেতাকর্মীকে নিয়ে পাহারা বসানো হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে নিজ নিজ থানা ও ওয়ার্ড সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে অবস্থান নেবেন দল ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বিএনপি ও তার মিত্রদের আগের কর্মসূচি ঘিরে সম্ভাব্য নৈরাজ্য ঠেকাতে মাঠে অবস্থান ছিল তাদের। ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশ, ৩০ ডিসেম্বরের গণমিছিল, ১১ জানুয়ারির গণঅবস্থান এবং পরে চার দিনের পদযাত্রাসহ সব কর্মসূচি ঘিরে সর্বাত্মক পাহারায় ছিলেন তারা। সেই ধারাবাহিকতায় আজ শনিবারও একই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ থাকবে। বিশেষ করে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশের এলাকায় বেশি সতর্ক থাকবে আওয়ামী লীগ।
জানা গেছে, ঢাকা ছাড়াও দেশের অন্য বিভাগে শান্তিসমাবেশ ও সতর্ক অবস্থানে থাকবে আওয়ামী লীগ।
অপরদিকে, ১০ দফা দাবি আদায়ে বিএনপি ঘোষিত যুগপৎ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারা দেশে আজকের বিভাগীয় সমাবেশ কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেবেন।
বিএনপির দপ্তর থেকে জানানো তথ্য অনুযায়ী, শনিবার দুপুর ২টায় নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একইদিন জেএসডি সভাপতি আ স ম রবসহ গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারাও রাজধানীতে সমাবেশ করবে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বেলা সাড়ে ১১টায় সমাবেশ করবে ১২ দলীয় জোট। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারসহ জোটের নেতারা বিজয় নগর পানির ট্যাংক পাম্প সংলগ্ন এলাকায় থাকবেন। বেলা ১১টায় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের কর্মসূচিতে এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদসহ জোট নেতারা পুরানা পল্টন আলরাজী কমপ্লেক্স প্রিতম ভবনের উল্টো দিকে অবস্থান করবেন।
এদিকে কুমিল্লা বিভাগীয় সমাবেশ হবে কুমিল্লা টাউন হল ময়দানে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। রাজশাহী বিভাগে থাকবেন বিএনপি স্থায়ী কমিটি সদস্য মির্জা আব্বাস। খুলনা বিভাগে থাকবেন বিএনপি স্থায়ী কমিটি সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
বরিশালে থাকবেন স্থায়ী কমিটি সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। চট্টগ্রাম বিভাগে থাকবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ময়মনসিংহে প্রধান অতিথি আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সিলেটে প্রধান অতিথি সেলিমা রহমান, ফরিদপুরে ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, রংপুরে ভাইস- চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এমপি এ প্রসঙ্গে আমার সংবাদকে বলেন, একই দিন দুই দলের সমাবেশ হলেও সংঘর্ষ বা সংঘাতের কোনো আশঙ্কা নেই। বিএনপির তাদের বিভাগীয় সমাবেশ করবে, আমরাও আমাদের সমাবেশে করব। এখানে অপ্রীতিকর কিছু ঘটনার কোনো আশঙ্কা করছেন না সাবেক এই মন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, 'আওয়ামী লীগ ভীত। বিএনপির কর্মসূচিতে তারা ভীত হয়ে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করছে। এমন পাল্টা কর্মসূচি কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি হতে পারে না।'
তিনি বলেন, আমরা কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করলেও আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে। তারা কোনো কর্মসূচি পালন করতে চাইলে একদিন আগে বা পরে করতে পারে। একই দিন কর্মসূচি ঘোষণাকে আওয়ামী লীগের প্রতিহিংসামূলক ও অরাজনৈতিক কর্মসূচি বলেও মন্তব্য করেন বিরোধী দলের এই অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা।