প্রার্থী চূড়ান্তে লন্ডন কৌশল

আবদুর রহিম প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৩, ১২:৪১ এএম
  • শীর্ষ ১৩০০ নেতার সিভি তারেক রহমানের দপ্তরে 
  • ২৫০ আসনে প্রার্থী তালিকার খসড়া তৈরি
  • তৃণমূলে সফল আন্দোলনে চূড়ান্ত মনোনয়ন 
  • মনোবল চাঙ্গায় ভোট পর্যন্ত চলবে সিরিজ কর্মসূচি 
  • জেলা ও নির্বাহী সদস্যরা তৃণমূল কর্মসূচিতে অতিথি

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে প্রার্থী দিতে সমস্যা হবে না -আবদুল আউয়াল মিন্টু
আমাদের আন্দোলন ভোটের প্রস্তুতিতে ভূমিকা পালন করবে -সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স

ভোটের প্রস্তুতিতে চলছে বিএনপির সিরিজ কর্মসূচি। ঢাকাসহ সব বিভাগে গণঅবস্থান, গণমিছিল ও গণপদযাত্রা শেষে লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি ইউনিয়নে ইউনিয়নে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ৩০০ আসনে দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। ঢাকায় থাকা নেতাদের যেতে হবে মাঠে। জেলা নেতাদের ভূমিকা দেখাতে হবে একেবারে তৃণমূলে। জেলা ও নির্বাহী কমিটির সদস্যরা ইউনিয়নে ইউনিয়নে কর্মসূচিতে থাকবেন অতিথি হয়ে। হামলা-মামলা নির্যাতনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সব সময় প্রথম সারিতে রয়েছে মাঠপর্যায়ের কর্মীরা। এখন যে সব প্রার্থীরা ওই নেতাকর্মীদের কাছে যেতে পারবেন তাদের বিষয়ে মৌলিকভাবে চিন্তা করা হবে। বেলাশেষে আন্দোলনে সফল ব্যক্তিদের ভাগ্য খুলবে।

দলের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রের তথ্য বলছে, মাঠ থেকে প্রায় ১৩শ নেতার সিভি তারেক রহমানের দপ্তরে গেছে। এর মাধ্যমে ২৫০ আসনে প্রার্থী তালিকার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। সম্ভাবা প্রার্থীদের আমলনামা বিশ্লেষণ করছেন তিনি। অতীতে ব্যবসায়ী ও সম্পদশালী ব্যক্তিরা নানা ফাঁকফোকরে দলের চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়ে যেতেন। এবার আর এর সুযোগ নেই। 

তারেক রহমানের নির্দেশে ইতোমধ্যে একটি টিম দেশের প্রায় সব জেলায় সফর করেছে। মাঠ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। প্রার্থীদের যোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে জেলায় জেলায় সুশীল ও গ্রহণযোগা ব্যক্তিদের কাছ থেকেও মতামত নেয়া হয়েছে। সব কিছু বিবেচনায় রেখে এখন আন্দোলনের মাধ্যমে চূড়ান্ত কৌশল নেয়া হয়েছে। দেশের প্রতিটি আসনে তিন থেকে ১০ জন পর্যন্ত প্রার্থী রয়েছেন যারা নির্বাচনে আগ্রহী। এ জন্য এবার তৃণমূলে আন্দোলনের দিকে মনোযোগী হয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। যারা মাঠ পর্যায়ে ভূমিকা দেখাতে পারবেন, আন্দোলনের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পারবেন তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত আমলনামা তারেক রহমান থেকে দেয়া হবে। 

বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ জোরেশোরে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। জনসভায় গিয়ে প্রকাশ্যে নৌকায় ভোট দিতে নেতাকর্মীদের ওয়াদা করাচ্ছেন। বিষয়গুলো মাথায় রেখে বিএনপিও মাঠ ছেড়ে দিচ্ছেন না। ধারাবাহিক কর্মসূচির মাধ্যমে নিজদের প্রার্থীর দক্ষতা ও যোগ্যতা যাচাই-বাছাই করে নিচ্ছেন। নেতার সাথে কর্মীর সম্পর্ক নোট করে নিচ্ছেন। জাতীয় ইস্যুগুলোর মাধ্যমে কৌশলে ভোটের প্রস্তুতিও নিয়ে নিচ্ছেন। অনেক সময় দেখা গেছে শীর্ষ নেতারা না থাকলে আন্দোলনের গতি পাওয়া যায় না। এ জন্য এখন কেন্দ্রীয় নেতাদের উপজেলা ও জেলায় জেলায় কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য চূড়ান্ত ছক আঁকা হয়েছে। আবার অন্যদিকে জেলা উপেজেলা নেতাদের একেবারে ইউনিয়নে ইউনিয়নে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর এ কৌশল অব্যাহত থাকবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট পর্যন্ত। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া তারা ভোটে যাবেন না। এ জন্য ১০ দফার আন্দোলন এবং ২৭ দফার মাধ্যমে দেশ সংস্কারের কথা বলছে। 

তবে ভোটের আগে-পরে অনেক দৃশ্যপট তৈরি হতে পারে। সে জন্য প্রয়োজন ভোটের মাঠে টিকে থাকা। কর্মীদের উজ্জীবিত রাখা। চাঙ্গা মনোবল ও ভোটের প্রস্তুতি অনেক কিছুই বদলে দিতে পারে।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু আমার সংবাদকে বলেন, নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে এখনো আমাদের মধ্যে বৃহৎ কোনো আগ্রহ নেই। আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা সবসময় চাঙা। আমাদের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। যদি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় আমাদের প্রার্থী দিতে কোনো সমস্যা হবে না। ইতোমধ্যে আমাদের ২০০-২৫০ আসনের প্রার্থী মোটামুটি ঠিক রয়েছে। আর এগুলো পূর্বনির্ধারিত থাকে। হয়তো কয়েকটি আসনে মাঠের পরিস্থিতিতে ভিন্নতা আসে। সেগুলো আমাদের দলের চেয়ারম্যান ঠিক করে থাকেন। বিএনপি এখন মানুষের অধিকার নিয়ে ভাবছে, নির্বাচনে লড়াইয়ের কথা খুব চিন্তা করছে না।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে তারেক রহমানের নির্দেশে বিএনপি আন্দোলন করে যাচ্ছে। আমাদের প্রতিটি আন্দোলনে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা অনেক বেড়েছে। তৃণমূল পর্যায়ের আন্দোলনে এখন আমাদের নতুন গতি সঞ্চারিত হবে। আন্দোলন নতুনরূপে বেগবান হবে। তৃণমূল পর্যায়ের আন্দোলন থেকে সরকার পতনের নিশ্চিত বার্তা আসবে বলেও তিনি মনে করেন। এসব আন্দোলনের মাধ্যমে বিএনপিতে কোনো। 

ভোটের প্রস্তুতি রয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখেন বিএনপি জনগণের সমর্থন নিয়ে তিনবার রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। দেশের প্রতিটি এলাকাতেই ১০ জন, ১৫ জন লিডার হওয়ার মতো উপযুক্ত লোক আছে। দেশের মানুষ এখন বিএনপির পক্ষে। জনগণ এখন সরকারের অনাচার, দুর্নীতি এবং গণতন্ত্রহীনতার বিপক্ষে। যদি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচন হয় তাহলে এই আন্দোলনগুলো আমাদের বড় সাহায়ক হবে বলে মনে করছি।

দলটির আরেক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। নির্বাচনে গিয়েই দেশের নেতৃত্ব দিয়েছি আমরা। ভবিষ্যতে তারেক রহমানের নির্দেশে আবারো নেতৃত্ব দেবো। তবে বর্তমানে 'অগণতান্ত্রিক' সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাওয়ার কথা ভাবছে না বিএনপি। যদি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় তাহলে প্রস্তুতির বিষয় নিয়ে বিএনপি ভাবনা রয়েছে, তা সময়ের আলোকে প্রকাশ পাবে। বিএনপি দেশের জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছে। আগামি ১১ ফেব্রুয়ারি তৃণমূলে যে আন্দোলন ঘোষণা হয়েছে এতে করে আমাদের নেতাকর্মীরা অনেক বেশি উজ্জীবিত হবে। 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স আমার সংবাদকে বলেছেন, 'আন্দোলনের বেশ কিছু ব্যাকরণ রয়েছে। কখন বড় থেকে ছোট হবে, আবার ছোট থেকে বড় হবে। এভাবেই আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে যাবে। বিএনপি এখন জনগণের চাহিদা ও দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে। জনগণের দাবি এখন বিএনপির আন্দোলনে ফুটে উঠেছে। নিত্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। গ্যাসের দাম বেড়েছে এক লাফে প্রায় ৩০০ টাকা। এসব ইস্যুতে আন্দোলন বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়। দেশের সব মানুষের জন্য। তৃণমূলে কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে আন্দোলন নতুন গতি পাবে। 

আন্দোলনের পাশপাশি বিএনপিতে ভোটের প্রস্তুতি রয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ! নির্দলীয় সরকারের অধীনে যদি নির্বাচন হয় তাহলে আমাদের এই আন্দোলনগুলো তখন ভোটের প্রস্তুতিতে অনেক ভূমিকা পালন করবে।