পুঁজিবাজারে যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে সে অনুপাতে বিনিয়োগ করছে না তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো। এতে তারল্য সংকটে রয়েছে পুঁজিবাজার। বর্তমানে সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানসহ তালিকাভুক্ত ৩১ ব্যাংকের বিনিয়োগ রয়েছে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও ৩৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এই টাকা বিনিয়োগ হলে দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে পুঁজিবাজার। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে। একই সাথে বাজার থেকে দূর হবে তারল্য সংকট।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি সময় পর্যন্ত পুঁজিবাজারে ৩৪টি ব্যাংক ও তার সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩১ ব্যাংক ও সাবসিডিয়ারির পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ রয়েছে ২২ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। নিয়ম অনুসারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে ৭০ হাজার ৭৮৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা। ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে আরও ৩৫ হাজার ৩৯২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে পারে। ৩১টি ব্যাংকের সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের মধ্যে পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে এবি, ইস্টার্ন, আইএফআইসি, ন্যাশনাল, পূবালী, সাউথইস্ট, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ও আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংক। আর সব চেয়ে কম বিনিয়োগ করেছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ব্র্যাক ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ওয়ান, ঢাকা, এক্সিম, উত্তরা, প্রাইম, গ্লোবাল ইসলামি, সাউথবাংলা ও ইউনিয়ন ব্যাংকের ইত্যাদি।
এদিকে ব্যাংকের একক বিনিয়োগ হিসেবে ৩১ জানুয়ারি সময়ে ৩১টি ব্যাংকের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ছিল ১৩ হাজার ৫৬৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। নিয়ম অনুসারে বিনিয়োগের সুযোগ ছিল ১৭ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। সেই হিসাবে আরও অন্তত চার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারত। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সীমা বাজার মূল্যের পরিবর্তে ক্রয়মূল্যে বিনিয়োগের সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হয়েছে ২০২২ সালে। সেই নিয়ম অনুসারে ব্যাংকগুলো মূলধনের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে ব্যাংকগুলো। আর সাবসিডিয়ারিসহ একটি ব্যাংক তার রেগুলেটরি মূলধনের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে।
২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩১ ব্যাংকের সমন্বিত মূলধনের পরিমাণ হচ্ছে ৭০ হাজার ৭৮৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে তালিকাভুক্ত ৩১ ব্যাংক পুঁজিবাজারে ৩৫ হাজার ৩৯২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকগুলোর সমন্বিত বিনিয়োগ সীমার ৬৩ দশমিক ৭২ শতাংশ বিনিয়োগ রয়েছে। পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ রয়েছে পূবালী ব্যাংক। সাবসিডিয়ারিসহ ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এই ব্যাংকের মোট বিনিয়োগ হলো এক হাজার ৪৪২ কোটি টাকা। যা ব্যাংকটির রেগুলেটরি মূলধনের ৪০ দশমিক ৮২ শতাংশ। এই তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক। এই ব্যাংকটির মোট বিনিয়োগ রয়েছে এক হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা। যা তার রেগুলেটরি মূলধনের ২৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ইস্টার্ন ব্যাংকের বিনিয়োগ রয়েছে এক হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক। এই ব্যাংকের বিনিয়োগ রয়েছে এক হাজার ১৮০ কোটি টাকা।
এবি ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের বিনিয়োগ রয়েছে এক হাজার ১৫৩ কোটি টাকার করে। আল-আরাফা ব্যাংকের মোট বিনিয়োগ রয়েছে এক হাজার ১৪৬ কোটি টাকা। এ ছাড়াও সাউথইস্ট ব্যাংকের মোট বিনিয়োগ ছিল এক হাজার ৬৬ কোটি টাকা। যা রেগুলেটরি মূলধনের প্রায় ৪২ শতাংশ। অপর দিকে, একই সময়ে সবচেয়ে কম বিনিয়োগ রয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান ডাচ-বাংলা ব্যাংক ও তার সাবসিডিয়ারির। এ ব্যাংকটির পুঁজিবাজারে মোট বিনিয়োগ রয়েছে ২০৫ কোটি টাকা। যা ব্যাংকটির রেগুলেটরি মূলধনের মাত্র ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ। প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ থাকা ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের মোট বিনিয়োগ রয়েছে ৭৫৯ কোটি টাকা। এ ছাড়াও গ্লোবাল ইসলামি, সাউথ-বাংলা, এক্সিম, ব্র্যাক, ইউনিয়ন, প্রাইম, ওয়ান, ঢাকা, উত্তরা, যমুনা ও সিটি ব্যাংকসহ বাকি ব্যাংকগুলোর একই অবস্থা। এগুলোর বিনিয়োগের পরিমাণ অনেক কম।