মাতুয়াইল শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট হাসপাতাল

নিম্ন আয়ের মানুষের আস্থা

মাহমুদুল হাসান প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৩, ১২:৫৪ এএম
  • ২০ টাকায় মা ও নবজাতকের মিলছে চিকিৎসা
  • প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে বিনামূল্যে
  • প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছে প্রায় দুই হাজার মানুষ
  • ঢাকার আশেপাশের জেলা থেকেও রোগী আসছে
  • সেবার সঙ্গে রয়েছে গবেষণা ও প্রশিক্ষণে অবদান

 

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকার বাসিন্দা আজমত আলী (৩২)। পেশায় রিকশাচালক। দুই সন্তানের জননী আজমতের প্রসূতি স্ত্রী রাবেয়া (২৫) হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে এই দম্পতি মাতুয়াইল শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে এসেছেন। তাদের সঙ্গে আজমতের শাশুড়িও এসেছেন। গত শনিবার সকালে স্ত্রী ও শাশুড়ি চিকিৎসকের কক্ষে কথা বলছেন। আর আজমত জরুরি বিভাগের সামনে পায়চারি করছেন। মাতুয়াইল শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের সামনে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আজমত আলীর কথা হয়। প্রসূতি স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে আসার কথা জানালেন। বাড়ির পাশের বেসরকারি ক্লিনিক থাকতে কেন এসেছেন? এ প্রসঙ্গে আজমত বলেন, ‘মাতুয়াইল মেডিকেল (শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট) আমাদের গরিব মানুষের ভরসার জায়গা। যেই চিকিৎসা করতে হাজার হাজার টাকা লাগে সেইটা আমরা এখানে ফাও করি/কম টাকায় করতে পারি। এই এলাকার আমরা বেশিরভাগ মানুষ গবির। মেডিকেলটা এইখানে না থাকলে আমাদের মত গরিব মানুষের আর উপায় ছিল না।’

শুধু আজমত-রাবেয়া দম্পতি নয়, এমন অনেক নিম্ন আয়ের মানুষের ভরসার প্রতিষ্ঠান রাজধানীর মাতুয়াইল শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিউিট। প্রায় দুই দশক ধরে ঢাকা দক্ষিণের মাতুয়াইলে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, মাতুয়াইল, সানারপাড়, সাইনবোর্ড, ডেমরাসহ আশপাশের জেলার প্রসূতি মা ও নবজাতক শিশুর চিকিৎসায় প্রথম পছন্দ। দুই দশকের এই লম্বা সময়ে শিশু ও মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট অর্জন করে নিয়েছে মাতুয়াইলসহ আশপাশের নিম্ন আয়ের মানুষের আস্থা। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, মানুষের মৌলিক অধিকার চিকিৎসা। চিকিৎসাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে সবার সমান সুযোগ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। আউট অব পকেট এক্সপান্ডিচার বেড়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যতিক্রম। সরকারি হাসপাতালে সেবার ব্যাপ্তি আরও বাড়াতে হবে। নয়তো ২০২৩ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন বাধাগ্রস্ত হবে। কারণ সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে দেশে মাতৃ মৃত্যুহার ও শিশু মৃত্যুহার এখনও এসডিজি অনুসারে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। এজন্য মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আরও জোর দিতে হবে।

ইনস্টিটিউটের তথ্য বলছে, শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট হাসপাতাল সেবার পাশাপাশি নানা রোগের গবেষণা ও প্রশিক্ষণেও অবদান রাখছে। সদ্যজাত থেকে নানা বয়সি শিশুর কলকাকলিতে সকাল শুরু হয় ঢাকার মাতুয়াইল শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের। মাতুয়াইল ও এর আশপাশের লাখো মানুষের আস্থার জায়গা এই শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট। বিশেষায়িত ইনস্টিটিউটের বহির্বিভাগে ২০ টাকার বিনিময়ে শিশু ও মায়েরা স্বাস্থ্য সেবা নিতে পারেন। নিম্ন আয়ের মানুষদের বিনামূল্যে ওষুধসহ বিভিন্ন সেবার সুযোগ রয়েছে। এজন্য শুধু ঢাকা নয় নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী এমনকি কুমিল্লা থেকেও রোগীরা আসেন সেবা নিতে। প্রতিদিন গড়ে ইনস্টিটিউটে ইনডোর ও আউটডোর সব মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার থেকে দুই হাজার রোগীকে সেবা দেন এখানকার চিকিৎসকরা। ইনস্টিটিউটের সূত্র জানিয়েছে, শিশু ও মাতৃ স্বাস্থ্যসেবায় অনন্য নজির স্থাপন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ১০ একর জায়গার ওপর ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন গবেষণাও পরিচালনা করা হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ডা. বেনজীর আহমেদ বলেন, প্রসূতি সেবা, নিরাপদ মাতৃত্ব ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারি-বেসরকারি আরও উদ্যোগ বাড়াতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক সন্তান জন্মদান যেন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে না হয় এ জন্য শিশু ও মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট আরও বাড়াতে হবে। চালুকৃত প্রতিষ্ঠানের সেবার পরিধি বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলে সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা পাওয়ার সুযোগ বৃদ্ধি হবে। তাহলে নিম্ন আয়ের মানুষ সেবা নিতে আগ্রহী হবে। নয়তো অর্থের অভাবে অনেকেই সেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবে।