এখনও কার্যকর হয়নি চিনির দাম

রেদওয়ানুল হক প্রকাশিত: মার্চ ১৮, ২০২৩, ১২:৪৬ এএম
  • নির্ধারিত দামের চেয়ে ১৫ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে ভোক্তাকে
  •  রমজান সামনে রেখে অস্থিরতা বাড়ছে, নিয়মিত বাজার তদারকি হচ্ছে —ভোক্তা অধিকার
  •  শুল্ক হ্রাসের পর আমদানিকৃত চিনি বাজারে এলে দাম কমবে —সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন

চিনি নিয়ে ব্যবসায়ীদের ছলচাতুরি থামছেই না। পবিত্র মাহে রমজানে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা পণ্যটির দাম স্থিতিশীল করতে গত কয়েক মাস ধরে কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। শুল্ক হ্রাসসহ সব ধরনের সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের সাথে দফায় দফায় আলোচনা করে গত মাসের শেষ দিকে কেজিতে পাঁচ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি তখন জানান, বাধ্য হয়ে দাম বাড়াতে হয়েছে। কারণ দাম না বাড়ালে বাজারে চিনি পাওয়া যাবে না। এখন নিজেদের নির্ধারিত দামও মানছে না চিনি ব্যবসায়ীরা। গত মাসের ১ তারিখ থেকে নতুন দাম কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও দেড় মাসেও তা হয়নি। উল্টো প্যাকেট চিনি সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে মিলাররা। কারণ প্যাকেটজাত এক কেজি চিনির নির্ধারিত দাম ১১২ টাকা, আর খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৫ টাকায়। যদিও খোলা চিনির নির্ধারিত দাম কেজি ১০৭ টাকা। এরপর শুল্ক হ্রাস করা হয় তবুও দাম কমছে না। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে কেজিপ্রতি সাত টাকা এবং পরিশোধিত চিনি থেকে ১০ টাকা শুল্ক প্রত্যাহার হয়।

বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা কামাল আমার সংবাদকে বলেন, ‘আগে থেকেই বাজারে চিনির দাম অনেক বাড়তি ছিল। কারণ দেশে চিনির চাহিদার তুলনায় সরবরাহ সংকট রয়েছে। তাই গৃহীত সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া সরকার আমদানি শুল্ক কমালেও কম দামের চিনি এখনো দেশে আসেনি। এখন যা আছে তা আগের বেশি দামে কেনা। শুল্ক ছাড়ের চিনি দেশে আসলে পরিস্থিতির উত্তরণ হবে।’ দাম নির্ধারণের সময় এসব বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হয়তো হয়েছে, আমি বৈঠকে ছিলাম না। আমাদের প্রতিনিধি হয়তো ছিল। আমি দেশের বাইরে আছি।’ যে দাম একদিনের জন্যও কার্যকর হয়নি তা নির্ধারণ করার কি প্রয়োজন ছিল— এ প্রশ্ন করতেই তিনি কলটি কেটে দেন। দাম বৃদ্ধির পরপরই জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জানিয়েছিলেন, গ্যাস ও এলসি সমস্যা

সমাধান হয়েছে। ব্যবসায়ীরা যেহেতু নিজেরাই দাম নির্ধারণ করেছে, তাই ১ ফেব্রুয়ারি থেকেই নজরদারি বাড়ানো হবে। রমজানে দাম স্থিতিশিল রাখতে প্রয়োজনে অভিযান হবে।’ কিন্তু দেড় মাসেও দাম কার্যকর হয়নি। এ ক্ষেত্রে সংস্থাটির তেমন কোন তৎপরতা চোখে পড়েনি। তবে গত বুধবার অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার আমার সংবাদের কাছে দাবি করেন, ‘দাম কার্যকরে নিয়মিত অভিযান হচ্ছে। চিনি ব্যবসায়ীরা আবারো দাম বৃদ্ধির আবেদন করেছে। বাজারে এর প্রভাব তৈরি হয়েছে। প্যাকেট চিনি ঠিক দামেই বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু খোলা চিনির ক্ষেত্রে কিছু ব্যবসায়ী কারসাজি করার চেষ্টা করছে।’ বাজার থেকে প্যাকেট উধাও হয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুরোপুরি ঠিক নয়, বড় মুদি দোকানে প্যাকেট পাওয়া যাচ্ছে।’ দোকানিরা বলছেন, প্যাকেটের সরবরাহ নেই বললেই চলে। 

সুপার শপ ও বড় মুদিদোকানিরা কিছু পেলেও ছোট দোকানি যারা পরািমাণে কম কিনেন তাদেরকে প্যাকেট চিনি দেয়া হয় না। কমলাপুর এলাকার দোকানি রাজু জানান, বাজারে প্যাকেট চিনির চেয়ে খোলা চিনির দাম বেশি। তাই আমাদের নিয়মিত ক্রেতারা প্যাকেট চিনি আনতে চাপ দেয়। কিন্তু পাইকাররা সরবরাহ না করলে আমরা পাবো কই। তাই বাধ্য হয়ে খোলা চিনিই বিক্রি করতে হচ্ছে।’ নির্ধারিত দাম ১০৭ টাকা হলেও ১২০ টাকা কেন চাচ্ছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দাম ১০৭ টাকা এটি শুধু পত্রিকায় দেখেছি। বাজারে এমন দাম কেউ শুনেনি। বেশি দামে কিনে লোকসান দিয়ে বিক্রি সম্ভব নয়।’ এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি খোলা চিনির দাম পাঁচ টাকা ও প্যাকেট কেজিতে চার টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করে চিনি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন।

১ ফেব্রুেয়ারি থেকে তা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। সে হিসাবে বর্ধিত দামসহ এক কেজি খোলা চিনির দাম হওয়ার কথা ১০৭ টাকা। আর এক কেজি প্যাকেটের দাম হওয়ার কথা ১১২ টাকা। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যমতে, গত বছরের ২৬ জুন এককেজি চিনির সর্বোচ বাজার দর ছিল ৮২ টাকা। সংস্থাটির প্রকাশিত গতকালের বাজার দর অনুযায়ী এক কেজি চিনির সর্বোচ্চ দাম ১২০ টাকা। সে হিসাবে চলতি অর্থছরের আট মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম বেড়েছে কেজিতে ৩৮ টাকা বা ৪৬ শতাংশ। যদিও গতকাল বাজারে দাম আরও বেশি ছিল। খোলা চিনি ১২৫-১৩০ টকা আর প্যাকেটজাত চিনি ব্র্যান্ড ভেদে ১২০-১৪০ টাকা এবং দেশি মিলগুলোর আখের চিনি ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে। সর্বশেষ গত বছরের ১৭ নভেম্বর প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনির দাম ১৩ টাকা বাড়িয়ে ১০৮ টাকা করা হয়। আগে দাম ছিল ৯৫ টাকা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, দেশে বছরে চিনির চাহিদা ১৮ থেকে ২০ লাখ টন। এর মধ্যে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত মিলগুলোতে ৩০ হাজার টন চিনি উৎপাদিত হয়। বাকি চিনি আমদানি করতে হয়।