চরিত্র মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। মানুষের আচার-আচরণ, চিন্তাচেতনা ও দৈনন্দিন কাজকর্মের মধ্য দিয়ে যে উত্তম স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয় তা-ই উত্তম চরিত্র। একজন আদর্শ মানুষকে অবশ্যই উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। কুরআন ও হাদিসে চরিত্র গঠনের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রাসূল সা. বলেন, ‘কারো সন্তান জন্মগ্রহণ করলে সে যেন একটি সুন্দর নাম রাখে এবং উত্তমরূপে তাকে আদব-কায়দা ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়।’ (বায়হাকি)
মহানবী সা. ছিলেন সব মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। তার জীবনচরিত ছিল খুবই অসাধারণ। আল্লাহ তায়ালা রাসূল সা.-এর উত্তম চরিত্রের প্রশংসা করেছেন। তার চরিত্র সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সূরা কলম-৪) অন্যত্র মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ নিহিত রয়েছে।’ (সূরা আল-আহজাব-২১)
এ কারণেই মানুষকে উত্তম চরিত্র শিক্ষা দেয়ার জন্য মহান আল্লাহ তার প্রিয় রাসূলকে প্রেরণ করেছেন। এ সম্পর্কে রাসূল সা. বলেন, ‘আমাকে উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা সাধনের জন্যই প্রেরণ করা হয়েছে।’ (মুসনাদে আহমদ) বস্তুত মহানবী সা. ছিলেন উত্তম চরিত্রের জীবন্ত উদাহরণ। তিনি মোটেও কঠোর বা রুক্ষ ছিলেন না। তিনি কখনো কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করেননি। রাসূল সা. জন্মগতভাবে বা ইচ্ছাপূর্বক অশ্লীলভাষী ছিলেন না। তার মুখ থেকে কখনো অশ্লীল শব্দ নিঃসৃত হয়নি। চরিত্রবান মানুষদের তিনি ভালোবাসতেন। তার আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমেই আমরা সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে পারি।
উত্তম চরিত্র মানবজীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে উত্তম চরিত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের বাহ্যিক আচার-আচরণ তার মনের আলোকেই সম্পাদিত হয়। দার্শনিক ইমাম গাজালির মতে, যেমন গুণাবলি মানব মনে জাগরূক থাকে তারই প্রতিফলন তার বাহ্যিক কাজকর্মে প্রকাশিত হয়। মূলত উত্তম চরিত্রের ওপরই সমাজের শান্তি, শৃঙ্খলা ও সফলতা নির্ভর করে।
একজন উত্তম স্বভাবের অধিকারী ব্যক্তি যেমন সমাজে শ্রদ্ধাভাজন ও ভালোবাসার পাত্র হয়ে থাকেন, তেমনি মহান আল্লাহ ও তার রাসূলের কাছেও তিনি প্রিয় হয়ে থাকেন। উত্তম চরিত্রের মাধ্যমেই মানুষ মনুষ্যত্বের চূড়ান্ত মানে উন্নীত হতে পারে। অপরদিকে একজন অসৎ ও মন্দ চরিত্রের লোক সমাজে ঘৃণার পাত্র ও আল্লাহর কাছে অপ্রিয় হয়ে থাকে।
উত্তম চরিত্র হলো মৌলিক মানবীয় গুণাবলির সমষ্টি। এটি মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। একজন মু’মিন লোকদের সাথে সর্বদা শালীন ও মার্জিত আচরণ করে। সে কখনো অশ্লীল ভাষায় গালাগালি, কারো সাথে অশোভন ও নিষ্ঠুর আচরণ করে না। মূলত সদাচরণের মাধ্যমে মানুষ পরস্পর আন্তরিক হয়ে ওঠে; একে অপরের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। জীবন হয়ে ওঠে মধুময়।
সদাচারীদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত সদাচারীদের নিকটবর্তী।’ (সূরা আরাফ-৫৬) রাসূল সা. বলেন, ‘সদাচরণ ও সচ্চরিত্র প্রবৃদ্ধি নিয়ে আসে। দুশ্চরিত্র আনে দুর্ভাগ্য। পুণ্য হায়াতকে প্রলম্বিত করে। আর সাদকাহ তথা দান-খয়রাত কুৎসিত মৃত্যু থেকে রক্ষা করে।’ (মুসনাদে আহমাদ) আখিরাতে কল্যাণ লাভও উত্তম চরিত্রের ওপর নির্ভর করে। এর মাধ্যমে পরম পুণ্য অর্জন করা যায়। উত্তম চরিত্র হলো পরকালে মুক্তির উপায়।
ইসলামে অপরিহার্য ফরজ তথা সালাত-সিয়াম পালন করা সত্ত্বেও পরকালে জাহান্নাম থেকে নাজাত ও জান্নাত লাভের জন্য আখলাক তথা উত্তম চরিত্রের কোনো বিকল্প নেই। আয়েশা সিদ্দিকা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল সা.-কে ইরশাদ করতে শুনেছি ‘একজন মু’মিন ব্যক্তি তার উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে নিয়মিত দিনের বেলায় রোজাপালনকারী ও রাত জেগে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়কারীর সমান মর্যাদা লাভ করতে পারে।’