পবিত্র মাহে রমজানে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম স্থিতিশীল রাখতে কঠোর হচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, কর্পোরেট সিন্ডিকেট ভাঙতে প্রতিযোগিতা কমিশনকে সক্রিয় করা হচ্ছে। প্রয়োজনে গত বছরের মতো মামলা করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে এমন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এর আগে মঙ্গলবার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ১৯ মার্চ ‘দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা’ সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের ষষ্ঠ সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের মধ্যে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে। টাস্কফোর্সের সভার সিদ্বান্ত অনুসারে, মুরগি ও ডিমের উৎপাদন মূল্য নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের যথাযোগ্য মনিটরিং করতে বলা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, মুরগি ও ডিমের দাম যেহেতু কর্পোরেট ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর হাতে চলে গেছে, প্রতিযোগিতা কমিশন বিষয়টি দেখছে। কারণ তারা গোষ্ঠীভুক্তভাবে দাম বাড়িয়ে থাকে। গত বছর কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। প্রয়োজন হলে এবারও সে পথে হাঁটবে কমিশন।
গত সপ্তাহে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ব্রয়লার মুরগির দাম পাইকারি পর্যায়ে কেজিতে ৩৫-৪০ টাকা কমিয়ে ১৯০-১৯৫ টাকা বিক্রি করতে বড় চারটি কোম্পানিকে রাজি করিয়েছিল। চারটি পোলট্রি কোম্পানি হচ্ছে কাজী ফার্মস, প্যারাগন পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, আফতাব বহুমুখী ফার্মস ও সিপি বাংলাদেশ। এ জন্য ঢাকার বাজারে গত কয়েকদিন ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি ১৬০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের বাদামি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানে ডিমের হালি এখন ৪৭-৪৮ টাকা। কোথাওবা ৫০ টাকাও রাখা হচ্ছে।
মুদি দোকান থেকে ডিম কিনতে আরও বেশি টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে। খুচরা দোকানে ডিমের হালি ৪৭-৪৮ টাকা, কোথাওবা ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ফার্মের মুরগির সাদা ডিম একটু কমে, প্রতি হালির দাম রাখা হচ্ছে ৪৫ টাকা। অন্যদিকে বাজারভেদে হাঁসের ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়।
খামারিদের সংগঠন পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, মুরগির দাম নির্ধারণ করতে বাধ্য হয়েছে কোম্পানিগুলো। কিন্তু ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয়নি। এই সুযোগে ডিমের দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা করা হচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশের পোলট্রি খাতে কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে হরিলুটের অভিযোগ তুলেছে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। সংগঠনটির দাবি, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো গত ৫২ দিনে মুরগি ও বাচ্চার দাম বাড়িয়ে ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সরকারি তদারকি না থাকায় প্রান্তিক খামারিদের পরিকল্পিতভাবে স্বাধীনভাবে উৎপাদন করা থেকে সরিয়ে দেয়ার অভিযোগ করেছে সংগঠনটি। তারা বলছে, দেশটির পোলট্রি খাত প্রতিনিয়ত কর্পোরেট কোম্পানিদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে।