১৪ বছর ধরে সরকার সাংবাদিকদের নির্যাতন করছে : মির্জা ফখরুল
সাংবাদিক শামসুজ্জামানের কী দোষ : ড. মোশাররফ
ফাইনাল খেলব, বাঁশি বাজানোর অপেক্ষা করব না : ফারুক
শিগগিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রোববার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা জানান।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে দমন করার জন্য গত ১৪ বছর ধরে তারা একই কায়দায় সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ করছে, হত্যা করছে, নির্যাতন করেছে, গ্রেপ্তার করছে মিথ্যে মামলা দিচ্ছে। বিশেষ করে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ব্যবহার করে তারা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সংবাদ মাধ্যমের যে স্বাধীনতা এটি তারা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের লিয়াজোঁ কমিটির সাথে বৈঠকে বিশেষ করে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল করার বিষয়ে একমত হয়েছি; বলেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, চলমান আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সাথে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে কিভাবে সম্পর্ক উন্নয়ন, আরো দৃঢ় করা যায় এবং আন্দোলন সংগ্রামকে সামনে এগিয়ে নেয়া যায় সে বিষয়গুলো নিয়ে কথা হয়েছে। আশা করি যুগপৎ কর্মসূচির আন্দোলন আরো বেগবান হবে। অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলের সংখ্যা আরো বাড়াতে পারব এবং আন্দোলনকে আরো বেগবান করে এই ভয়াবহন দানবীয় সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকারকে প্রতিষ্ঠা করতে পারব।
ফখরুল বলেন, আমরা একমত এই আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবো না। এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চের সাথে আমাদের কোনো ছন্দপতন নেই। অনেক কর্মসূচি আছে এটি যার যার দল থেকে করতে পারে। আবার গণতন্ত্র মঞ্চের ব্যানারেও করতে পারে। মূল দাবি অর্থাৎ এই সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে দাবি একই সঙ্গে রাষ্ট্রের যে সংস্কারের কথাগুলো রয়েছে সে দাবিগুলোতে আমরা একমাত্র রয়েছি।
বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। অপরদিকে গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান।
শামসুজ্জামানের কী দোষ? দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি —ড. মোশাররফ : অপরদিকে আরেকটি অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আজকের বাংলাদেশ এমন অবস্থা, পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৈষম্য। ধনী সবচাইতে ধনী আর গরিব সবচাইতে গরিব। গতকাল রোববার দুপুরে ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম এর উদ্যোগে নওগাঁয় সুলতানা জেসমিনকে হত্যা ও সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ‘বিনা বিচারে হত্যা-গুম ও নির্যাতন, আর কতকাল সইবে বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। নওগাঁ সরকারি কর্মকর্তা জেসমিন আক্তারের মৃত্যুর ঘটনা তুলে ধরে ড মোশাররফ বলেন, এই সরকার স্বেচ্ছাচার ও স্বৈরাচার। স্বেচ্ছাচারী ও স্বৈরাচারী আচরণ সব পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। না হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না।
সাংবাদিক শামসুজ্জামানের কি দোষ? এ দেশে তো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। তিনি বলেন, সরকার সব দিক থেকে ব্যর্থ হয়ে তারা আজ দিশাহারা। এ জন্য বুঝতে পারতেছে না কখন কী করতে হবে। এ সরকারের অধীনস্থ যে কর্মকর্তারা তারাও কিন্তু অত্যন্ত হতাশ ও দিশাহারা। এ অবৈধ স্বৈরাচারী সরকারের হুকুমে তারা যে অন্যায়গুলো করেছে, ভবিষ্যতে তাদেরকে তো জবাবদিহি করতে হবে। এ জন্য তারা নার্ভাস। এই সরকারের নির্দেশে র?্যাব গুম করেছে ৬০০ বেশি নেতাকর্মীকে। হত্যা করেছে হাজারের বেশি। মিথ্যা ও বানোয়াট মামলার কোনো অভাব নেই।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, আমাদের দেশে এমন কিছু হয়েছে, যার কারণে আমেরিকা স্যাংশন দিতে বাধ্য হয়েছে। র?্যাবের ওপর স্যাংশন দেয়া হয়েছে। তবুও র?্যাব কি পরিমাণ বেপরোয়া হয়ে জেসমিনকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুন রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ, জাতীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য নাসের মো. রহমতুল্লাহ প্রমুখ।
ফাইনাল খেলব, বাঁশি বাজানোর অপেক্ষা করব না —ফারুক : বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দেশের সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করবে জানিয়ে দলটির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক বলেছেন, তারপর আমরা ফাইনাল খেলা খেলব। বাঁশি বাজানোর অপেক্ষা বিএনপি করবে না। তিনি বলেন, সেই ফাইনাল খেলার আগে অনুরোধ জানাব, আপনারা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতা ছেড়ে দিন, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করুন, সংসদ ভেঙে দিন, অথর্ব নির্বাচন কমিশনকে পদত্যাগ করতে বলুন।
গতকাল দুপুরে বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আয়োজিত এক অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করে গণতন্ত্র ফোরাম। জয়নুল আবেদীন ফারুক বলেন, ২০১৪ সালে বাসে আগুন লাগিয়ে, মিছিলে বোমা ফাটিয়ে আপনার (আওয়ামী লীগ) মামলা দিতেন বিএনপির নেতকর্মীদের ওপর। এখন আর পারবেন না। আমাদের চোখ সামনে দুটি, কপালে দুটি।
তিনি আরো বলেন, এই সরকার নির্লজ্জভাবে আইনের তোয়াক্কা না করে স্বাধীনভাবে সাংবাদিকদের লেখার কারণে শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করেছে। তাকে কতক্ষণ কাশিমপুর রাখে তো কতক্ষণ কেরানীগঞ্জে নিয়ে যায়। প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের একটি বার্তা পৌঁছে দিতে চায় অগণতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদী সরকার। যে আপনারা আর লেখালেখি করবেন না, সত্য কথা বলবেন না। কারণ আপনারা লিখলে তারা আসন্ন নির্বাচন আর করতে পারবে না। জনগণ তাদের আর ভোট দেবে না।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সব নেতার পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই সরকার ১৭ জন নিরীহ বিএনপি নেতাকর্মীকে চাইনিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। তারা আজকে গণতন্ত্রকে হাতের মুঠোয় রেখে আবার ২০১৪, ২০১৮ এর মতো আরেকটি নির্বাচন করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তাই ১৭ জনের জায়গায় ১৭ হাজার নেতাকর্মীকেও যদি চাইনিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করলেও আমরা (বিএনপি) রাজপথ ছাড়ব না। কারণ, আমরা চাই না এই সরকার ক্ষমতায় থাকুক।