ইসির বার্তা ইতিবাচক

আবদুর রহিম প্রকাশিত: এপ্রিল ৫, ২০২৩, ১২:৫৮ এএম
  • সংঘাত এড়াতে ইসির আগাম নির্বাচনের ঘোষণাকে স্বাগত 
  • ইভিএম হোঁচটের পর আগাম ভোটের সম্ভাবনা আরও বাড়ল

 

সংবিধানের সব নিয়ম মেনেই ইসি আগাম নির্বাচনের কথা বলেছে

—ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, সংবিধান বিশেষজ্ঞ

 

সংবিধানের ভেতরে নিয়ম মেনে আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে

—ড. শাহদীন মালিক, বিশিষ্ট আইনজ্ঞ

 

ইসি নিজেই জানে না কবে ভোট

ডিসেম্বর নাকি জানুয়ারি

—রুহিন হোসেন প্রিন্স, রাজনৈতিক বিশ্লেষক

 সংবিধানে নির্দিষ্ট সময়ের আগেও নির্বাচন হতে পারে— এমন প্রভিশন (বিধান) আছে। নির্দিষ্ট সময়ের দু’-এক মাস আগে ভোট হলেও নির্বাচন করার প্রস্তুতি যেন ইসির থাকে।’ গত বৃহস্পতিবার সমন্বয় সভায় কাজী হাবিবুল আউয়াল এমন ঘোষণা দেন। যদিও চলতি বছরের ডিসেম্বর কিংবা আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ রয়েছে ইসির। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির হঠাৎ এমন ঘোষণায় সংবিধান বিশেষজ্ঞরা ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে সংঘাত এড়াতে ইসি যেকোনো কৌশল নিতে পারেন বলেও মনে করছেন তারা। রক্তপাত, হাঙ্গামা রাজনৈতিক উত্তেজনা নিরসনে পরিস্থতি স্বাভাবিক রাখতে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি অনেক উদ্যোগই নিতে পারেন। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন থেকেই আগাম যে উত্তেজনার ইঙ্গিত মাঠ পর্যায়ে রয়েছে  সে ক্ষেত্রে ইসি যদি আগাম নির্বাচন করে একটা সঙ্ঘাতমুক্ত নির্বাচন উপহার দিতে পারেন সেটিকেও বিচক্ষণ ভূমিকা হিসেবে ধরে হচ্ছে। 

ইসির এমন ঘোষণায় ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন তারা যেকোনো সময় ভোটের জন্য প্রস্তুত। অন্যদিকে বিরোধীরা বলছে সরকার আবারও ক্ষমতায় আনতে কমিশন কারো অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে সংবিধানের ভেতর থেকে ইসি অবশ্যই আগাম নির্বাচন দিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে আগে সংবিধান ভেঙে দিতে হবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে এ বিষয়ে উপদেশ দেবেন। গত সোমবার ইসি থেকে নতুন বার্তা দেয়া হয়েছে। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ইভিএমে হবে না। ৩০০ আসনেই ব্যালটে ভোট হবে। এ থেকেও অনেকে ধারণা করছেন ইসি  ঘোষণা অনুযায়ী নভেম্বর কিংবা ডিসেম্বরের দিকেই ভোট আয়োজন সম্পূর্ণ করে ফেলতে পারেন। 

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর নতুন গঠিত আইনসভার প্রথম অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধানের ১২৩ (৩) (ক) অনুযায়ী মেয়াদ-অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে গেলে ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। সমপ্রতি একটি অনুষ্ঠানেজাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘আওয়ামী লীগ সবসময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। এ নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ক্ষমতায় টিকে থাকতে আ.লীগ ভিন্ন কৌশল হিসেবে আগাম নির্বাচন করতে চায়। ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে সচিবলায়কে নির্দেশনা দিয়েছে। ঘোষিত রোডম্যাপ থেকে প্রস্তুতি যেন পিছিয়ে না থাকে সে বিষয়ে সতর্ক করেন। নির্বাচনের টপ টু বটম, যেমন মালামাল ক্রয় থেকে শুরু করে ভোটকেন্দ্র স্থাপন পর্যন্ত সব বিষয়ের ওপর তারা রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্দেশনা দিয়েছেন।’

সশ্লিষ্ট বিষয়ে জানতে চাইলে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, ‘আগাম নির্বাচনের বিষয়ে কমিশন যেটি বলেছে তারা অবশ্যই সংবিধানের সব নিয়ম মেনেই বলেছে। আমি মনে করছি তারা সময়ের আলোকে এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত বলবেন। আমাদের অবশ্যই কমিশনের স্পষ্ট বক্তব্যে পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক আমার সংবাদকে বলেন, আগাম নির্বাচন দিতে হলে সংবিধানের ভেতর থেকে কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। প্রথমত বর্তমান সরকারের সংসদ ভেঙে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে উপদেশ দেবেন যাতে তিনি সংসদ ভেঙে দেন। তবে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক ঐকমত্যের কোনো বিকল্প নেই। দেশের বেশির ভাগ জনগণ বলতে হবে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়েছে।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এ বিষয়ে আমার সংবাদকে বলেন, ‘আসলে ইসি নিজেই জানে না কবে ভোট। ডিসেম্বর নাকি জানুয়ারি। নির্বাচনের আর মাত্র ৯ মাস বাকি। এখনো তারা চূড়ান্ত মাস সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। আমরা আগেই বলেছি এ কমিশন সরকারের পছন্দের। সরকারের নির্দেশ ব্যতিত তারাই কিছুই বলে না। সরকার আবারও ক্ষমতায় থাকার জন্য ইসিকে যেভাবে নির্দেশ দেবে ইসি সেই অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্যই চেষ্টা করবে। আওয়ামী লীগ জিতে আসার জন্য ইসিকে যেমন রোডম্যাপ দেবে ইসি তাই করবে। এই কমিশন দিয়ে কখনো জাতির প্রত্যাশা পূরণ হতে পারে না। আর  সুষ্ঠু নির্বাচন হবে তা চিন্তাও করা যায় না। আসলে এই কমিশনের অধীনে আদৌ নির্বাচন হয় কি-না সেটিই এখন বিষয়।’