ক্রাইসিস সৃষ্টি করে আ.লীগ ১০ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে : গয়েশ্বর
বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন না করলে গণভবন ঘেরাও : সাইদুর রহমান
ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেটসহ ১৩টি মহানগরীর ১২৮টি থানায় এবং সব উপজেলা মিলে ৬৫০টি জায়গায় একযোগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। এ ছাড়া ভিন্নভাবে বিএনপি জোটের নেতারাও কর্মসূচি পালন করেন। ঢাকায় মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি ৫০টি থানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা, দলের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলার শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি ২৬টি থানায় এবং দক্ষিণ বিএনপি ২৪ থানায় অবস্থান কর্মসূচি পালন হয়।
বিভিন্ন জায়গায় কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা করেছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। বিএনপি জানিয়েছে, উত্তরের কর্মসূচি রামপুরা থানার খিলগাঁও পল্লীমা সংসদের বিপরীতে হয়। এতে নেতৃত্ব দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। বাড্ডা হাইস্কুলের সামনে ছিলেন উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান। গুলশানে সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিকবিষয়ক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন আহম্মেদ উজ্জ্বল, এফডিসির পশ্চিম পাশের রেলগেটের পাশে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার কর্মসূচিতে ছিলেন যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন।
এ ছাড়া মহানগর দক্ষিণের পল্টন ও সবুজবাগ থানার অবস্থান কর্মসূচির নেতৃত্বে দেন উত্তরের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, পল্টন ও খিলগাঁও থানায় রফিকুল আলম, শ্যামপুর থানায় বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, ডেমরায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক কর্নেল (অব.) জয়নুল আবেদীন, ওয়ারীতে ইশরাক হোসেন, বংশালে মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত উপস্থিত ছিলেন।
ক্রাইসিস সৃষ্টি করে আ.লীগ ১০ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে —গয়েশ্বর : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় অভিযোগ করে বলেছেন, এই যে তেলের দাম বৃদ্ধি, গ্যাসের দাম বেড়েছে একদম অকারণে। এই যে বিদ্যুতের ক্রাইসিস, এটি তাদের (আওয়ামী লীগ) সৃষ্ট। এর মধ্য দিয়ে তারা বহু কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে, যার পরিমাণ প্রায় ১০ লাখ কোটি টাকা। যার কারণে আজ দেশের অর্থনীতির এই অবস্থা।
গতকাল দুপুরে আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায় আশুলিয়া থানা বিএনপি কর্তৃক আয়োজিত সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, প্রশাসনের যারা আছেন, তাদের বলব, তারা দেশের প্রশাসন, তারা এই রাষ্ট্রের প্রশাসনেরই কর্মকর্তা। তারা আমাদের মতোই দেশের নাগরিক। পার্থক্য হলো, আমরা রাস্তায় থাকি, তারা অফিসে কাজ করেন। সুতরাং জনগণের বিরুদ্ধে যাওয়া তাদের কাজ না। যদি প্রশাসন জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় তাহলে অবস্থা কী হতে পারে? তাহলে পরিস্থিতি হতে পারে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের মতো।
ভোলায় হামলা, কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা নয়নসহ আহত ২০ : ভোলায় বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত অবস্থান কর্মসূচিতে হামলার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। হামলায় কেন্দ্রীয় যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি নুরুল ইসলাম নয়নসহ ২০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আহতদের মনপুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও গুরুতর আহত অ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন প্রিন্সকে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, বেলা ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন মনপুরা উপজেলায় এসে সকালে ডাকবাংলোয় অবস্থান নেয়।
নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে পুলিশ নয়নসহ নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয়। এ সময় ডাকবাংলো থেকে নেতাকর্মীরা হাজিরহাটের উত্তর পাশের রাস্তায় এলে ছাত্রলীগ নেতা সুমন ফরাজী ও যুবলীগ নেতা জাবেদ ফরাজীর নেতৃত্বে হামলা করলে বিএনপির মনপুরা উপজেলা আইনবিষয়ক সম্পাদক সালাউদ্দিন প্রিন্স, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক সামসুদ্দিন আহাম্মেদ মোল্লাহসহ ২০-এর অধিক নেতাকর্মী আহত হন। পরে ভোলা সদরে এসে সংবাদ সম্মেলন করেন নুরুল ইসলাম নয়ন। তিনি বলেন, কেন্দ্র থেকে আজকের অবস্থান কর্মসূচির জন্য আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সকালে ঢাকা থেকে আমি মনপুরা ডাকবাংলোতে উঠি। সেখানে পুলিশ এসে আমাকে মনপুরা ত্যাগ করতে বলেন।
এ সময় পুলিশ তাদের প্রোটেকশন দেয়ার কথা বলে বের করে আনলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পুলিশের সামনেই আমাদের উপর দফায় দফায় হামলা করে। যুবদলের আহ্বায়কের ঘর ভেঙে ফেলা হয়েছে। আমি জীবন বাঁচাতে স্পিডবোটে করে ভোলা সদরে আসছি। এখনো বিএনপির অনেক নেতাকর্মী মান্নান চেয়ারম্যানেরর বাসায় অবরুদ্ধ রয়েছেন। তিনি এই ঘটনার নিন্দা, দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিও জানিয়েছেন সংবাদ সম্মেলনে।
বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন না করলে গণভবন ঘেরাও —সাইদুর রহমান : বিদ্যুৎ, তেল ও গ্যাসসহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, দেশব্যাপী বিরোধীদলীয় ৩৬ লাখ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, সংসদ ভেঙে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ নেন সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট।
অবস্থান কর্মসূচিতে সভাপতির বক্তব্যে সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোটের প্রধান সমন্বয়কারী ও বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি মুহাম্মদ সাইদুর রহমান বলেন, দেশের সর্বত্র আজ চরম অব্যবস্থাপনা ও নৈরাজ্য বিরাজ করছে। ফায়ার সার্ভিসের ব্যর্থতার ফলে বঙ্গবাজার পুড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। কাছাকাছি অবস্থান সত্ত্বেও ১০ ঘণ্টায়ও ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। এই ব্যর্থতা সরকারের। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অবিলম্বে পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, যদি রমজানের মধ্যে সকল ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীকে পুনর্বাসিত ও ক্ষতিপূরণ দেয়া না হয়, তাহলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে গণভবন ঘেরাও করা হবে।
বরগুনায় বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা : কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বরগুনার বামনা উপজেলা বিএনপি ১০ দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালনে পুলিশ বাধা দিয়েছে। গতকাল বেলা ১১টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে অস্থায়ী কার্যালয়ে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গেলে পুলিশ তাতে বাধা দেন। বামনা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ রানার সভাপতিত্বে অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেন বরগুনা জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এ জেড এম সালেহ ফারুক। বক্তব্যের শুরুতে তিনি পুলিশের বাধা পাওয়া ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এ সময় বক্তারা আরো বলেন, বিদ্যুতের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, চাল-ডাল-তেল-কৃষি উপকরণ ও শিক্ষা উপকরণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ এবং বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। যতক্ষণে আমাদের এই দাবি মেনে নেয়া না হবে, ততদিন এ আন্দোলন চলবে।