ডলার সংকটে ঋণপত্র খুলতে না পারায় বারবার উৎপাদন বন্ধ হচ্ছে : বিদ্যুৎ বিভাগ
সপ্তাহখানেকের মধ্যে আবারও উৎপাদনে যাবে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র
—আনোয়ারুল আজিম
ডিজিএম, রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র
আলোচিত-সমালোচিত রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি কয়লার অভাবে বারবার বন্ধ হচ্ছে। এতে বিরাট প্রভাব ফেলে জাতীয় গ্রিডে। চার মাস আগে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়া কেন্দ্রটি এরই মধ্যে তিনবার বন্ধ হয়েছে। গত চার মাসে তিন দফায় ৪৮ দিন বন্ধ থেকেছে কেন্দ্রটির উৎপাদন। ফলে এই দিনগুলোতে কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ গত মাসের ২৩ তারিখ রাত থেকে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ উৎপাদন স্বাভাবিক হবে তাও নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ফের উৎপাদনে যেতে তৎপর বিদ্যুৎ বিভাগ। ইন্দোনেশিয়া থেকে তিন ধাপে আমদানি করা কয়লার প্রথম চালান ইতোমধ্যে রামপালে পৌঁছেছে। ফলে শীঘ্রই আবারও উৎপাদন শুরু করবে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এদিকে রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ছন্দপতন হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহে। ফলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরোপুরি আমদানি-নির্ভর হয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনা করা কঠিন। আমদানি করতে পারলে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। আর নয়ত উৎপাদন বন্ধ থাকবে। এতে বিদ্যুৎ বিভাগকেই বিপাকে পড়তে হবে। লোডশেডিংয়ে ভোগান্তি পোহাতে হবে সাধারণ জনগণকে। কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর উৎপাদনে যাওয়ার ২০-২২ দিন পরই আমদানি করা কয়লার স্বাভাবিক মজুত শেষ হয়ে যায়। ডলার সংকটে ঋণপত্র খুলতে না পারায় রিজার্ভ কয়লা দিয়ে আরও পাঁচ দিন উৎপাদন চালু রাখা হয়। পরে রিজার্ভ কয়লার মজুত শেষ হয়ে গেলে ৪ জানুয়ারি সকালে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর মাত্র ২৭ দিনের মাথায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৬৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার প্রথম ইউনিটটি বন্ধ করে দেয়া হয়। কয়লা সরবরাহ স্বাভাবিক হলে এক মাসের মাথায় আবার উৎপাদনে ফেরে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। পরে ১৫ এপ্রিল রাত কেন্দ্রটির। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, ডলারের অভাবে ঋণপত্র খুলতে না পারার কারণেই বারবার সংকটে পড়ছে রামপাল।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, নিয়মিত ৫৬০ থেকে ৫৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছিল রামপাল কেন্দ্র। উৎপাদিত বিদ্যুতের মধ্যে ৪৬০ মেগাওয়াট ঢাকার জাতীয় গ্রিডে এবং ২০০ মেগাওয়াট খুলনা-বাগেরহাটে সরবরাহ করা হচ্ছিল। নিয়মিত উৎপাদনের জন্য কেন্দ্রটিতে প্রায় পাঁচ হাজার মেট্রিক টন কয়লা লাগত। কয়লা আসত ইন্দোনেশিয়া থেকে। এছাড়া দ্বিতীয় ইউনিটের কাজও প্রায় শেষের দিকে। কিন্তু দ্বিতীয় ইউনিট চালু হলে তখন প্রতিদিন কয়লা প্রয়োজন হবে ১০ হাজার টন। যেখানে প্রতিদিন ৫ হাজার টনের জোগান দিতেই হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ সেখানে প্রতিদিন ১০ হাজার টন কয়লা সরবরাহ সম্ভব হবে বলে মনে করছেন স্বয়ং কেন্দ্র সংশ্লিষ্টরাই। বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, জেলায় পিক আওয়ারে ৯৪ মেগাওয়াট চাহিদা থাকলেও বরাদ্দ থাকছে ৫৫ থেকে ৬০ মেগাওয়াট।
অপরদিকে অফপিকে ৮০ থেকে ৮২ মেগাওয়াট চাহিদা থাকলেও বরাদ্দ আসছে ৪৫ থেকে ৫০ মেগাওয়াট। এদিকে সপ্তাহখানেক পর ফের উৎপাদনে যাচ্ছে রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। এরই মধ্যে ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা কয়লার চালানের ৯ হাজার মেট্রিক টন বিদ্যুৎকেন্দ্রে পৌঁছেছে। এগুলো চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আনা হয়েছে রামপালে। আরও ১০ হাজার ২০০ মেট্রিক টন আসবে। বাকি ৩০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে বিদেশি জাহাজ এমভি বসুন্ধরা ইমপ্রেস আজ মোংলা বন্দরে ভিড়বে। এরপর সেই কয়লা খালাস করে লাইটারে করে নেয়া হবে বিদ্যুৎকেন্দ্রে। এ কয়লা মজুতের পরই শুরু হবে ফের বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ। রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১৩২০ মেগাওয়াটের দুই ইউনিটের মধ্যে ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট পুরোপুরি চালু রাখা হলে প্রতিদিন কয়লার চাহিদা রয়েছে পাঁচ হাজার মেট্রিক টন। তবে ইউনিটটির পুরোপুরি নয়, সক্ষমতার অর্ধেক কিংবা তার কমবেশি উৎপাদন প্রক্রিয়া চলে আসছে। এদিকে বারবার বন্ধ হওয়ায় শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে আসন্ন জুনে চালু হওয়ার কথা থাকা দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদনও। অপরদিকে উৎপাদন বন্ধ থাকলেও এই সময়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে রক্ষণাবেক্ষণ কাজে। কারণ চুক্তি অনুযায়ী, রামপালের বিদ্যুৎ পিডিবিকে কিনতে হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ থাকলেও পিডিবিকে কেন্দ্রের সক্ষমতা ব্যয় বা ক্যাপাসিটি চার্জ (কেন্দ্র ভাড়া) দিতে হবে। বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান ওজোপাডিকোর মোংলা অঞ্চলের এক কর্মকর্তা প্রকৌশলী এইচ এম ফরহাদ হোসেন বলেন, উৎপাদনে আসার পর থেকে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে খুলনাসহ এই অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। কিন্তু ঈদের পর থেকে হঠাৎ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকায় লোডশেডিং এবং বিদ্যুৎ বিভ্রাট বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ বিষয়ে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ডিজিএম আনোয়ারুল আজিম বলেন, স্বল্প সময়ের মধ্যে বাকি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে সংরক্ষণ করা হবে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে আবারও উৎপাদনে যাবে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র।থেকে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আবারও বন্ধ হয় এই মেগা প্রকল্পের উৎপাদন। তিনদিন বন্ধ থাকার পর ১৮ এপ্রিল সচল হলেও কয়লা সংকটে ২৩ এপ্রিল রাত থেকে ফের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে