কোরবানির পশুর হাট

জমে উঠলেও বেচাকেনা কম

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২৩, ১২:০৪ এএম
  • রাজধানীতে এবার বসছে ১৯ স্থানে পশুর হাট
  • পশুখাদ্যের কারণে দাম বেড়েছে গরু-ছাগলের
  • ডিজিটাল বুথ ও জালটাকা শনাক্তে মেশিন স্থাপন
  • এক লাখ গরু আমদানির সুপারিশ ক্যাবের
  • চোরাচালান রোধে সীমান্তে কঠোর অবস্থানে বিজিবি
  • ঈদের দিন দুপুর থেকেই বর্জ্য অপসারণ শুরুর নির্দেশ মেয়র তাপসের
  • বর্জ্য অপসারণে ১০ লাখ পলিব্যাগ বিতরণ করবে ডিএনসিসি

দেশে পর্যাপ্ত পশু রয়েছে, কোরবানিতে পশুর কোনো সংকট হবে না
—মুজিবুর রহমান
সভাপতি, বাংলাদেশ গবাদিপশু ব্যবসায়ী সমিতি

রাজধানীসহ সারা দেশে জমে উঠেছে কোরবানি পশুর হাট। কোরবানি ঈদের বাকি আর কয়েক দিন। ঈদকে কেন্দ্র করে পাইকার ও খামারিরা ইতোমধ্যে রাজধানীর অস্থায়ী হাটে কোরবানির পশু আনতে শুরু করেছেন। গ্রাম-গঞ্জেও শুরু হয়ে হয়েছে গরু-ছাগল বেচাকেনা। রাজধানীতে কোরবানির পশু রাখার যথেষ্ট জায়গা না থাকায় কেনাচেনা এখনো জমে উঠেনি। ফলে রাজধানীর অস্থায়ী পশুর হাটে ক্রেতাদের উপস্থিতি তেমন একটা দেখা যায়নি। 

রাজধানীর গাবতলী হাট ঘুরে দেখা গেছে, এখনো পুরোদমে পশু আসা শুরু হয়নি। ক্রেতা উপস্থিতিও কম। যেসব পাইকার ও খামারিরাও এসেছেন, তারা অলস সময় পার করছেন। কেউবা ব্যস্ত ছিলেন গবাদিপশুর যত্নআত্তি নিয়ে। রাজধানীর হাজারীবাগের পশুর হাটে গিয়েও একই চিত্র দেখা যায়। দিনাজপুরের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ১০টি গরু নিয়ে বুধবার গাবতলী হাটে এসেছি। এখনো একটি গরুও বিক্রি করতে পারিনি। তার আনা একেকটি গরুর ওজন তিন থেকে ছয় মণ। রাজধানীর আফতাবনগর ও মেরাদিয়াতে গরুর হাটে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিয়ে আসা গরু খামারিরা ট্রাক থেকে নামিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে রাখছেন। অনেকে ঘুরে ঘুরে দেখছেন বিভিন্ন আকারের গরু। কেউ দাম জানতে চাচ্ছেন। হাট ঘুরে দেখা গেছে, এক লাখের নিচে গরু নেই। এই হাটে খুলনা থেকে ১০টি গরু এনেছেন করিম নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, গরু লালনপালনে খরচ বেড়েছে। তাই গত বছরের চেয়ে দাম বেশি হবে এবার। বিভিন্ন হাটের পশু ব্যবসায়ীরা জানান, বৃহস্পতিবার রাত থেকে তারা পশু বিক্রির জন্য হাটগুলোতে আসতে শুরু করেছেন। তবে ঈদ এগিয়ে এলে সড়কে যানজট ও ঝামেলা এড়াতে অনেকে কয়েক দিন আগেই চলে এসেছেন বলেও জানান তার।

এদিকে হাটগুলোর ইজারাদারের কর্মীরা জানান, কয়েক দিন ধরেই হাটগুলোতে গরু আসতে শুরু করেছে। ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে হাটে পশু আরও বাড়বে। সেই সঙ্গে বিক্রিও জমে উঠবে বলে আশা করছেন তারা। পশুর হাটগুলোতে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের নিরাপত্তার স্বার্থে ডিজিটাল বুথ, জাল টাকা শনাক্তের মেশিনসহ পর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মীর ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান তারা। হাটের ভোগান্তি এড়াতে আগেভাগে অনেকেই কোরবানির পশু কিনছেন। যে কারণে দেশের সর্ববৃহৎ গাবতলী পশু হাটের বিক্রি বেড়েছে। গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়া এবং দুম্বাও উঠেছে দেশের সর্ববৃহৎ এই হাটে। তবে পশু আমদানি বন্ধ থাকায় গত বছরের মতো এবারও উটের দেখা মিলবে না ওই হাটে। কোরবানি উপলক্ষে গাবতলী হাটের চারপাশে অস্থায়ী শেড তৈরি করা হয়েছে। এতে করে হাটে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি পশুর ধারণক্ষমতা তৈরি হয়। ঢাকায় স্থায়ীভাবে থাকেন এমন অনেক মানুষের কাছে গাবতলী হাটে পশু কেনা আবেগ ও আস্থার ব্যাপার। ঢাকায় কোরবানি উপলক্ষে অনেক জায়গায় হাট বসলেও সেখানে তারা যান না।

গাবতলী পশুহাট থেকে কোরবানির জন্য একটি গরু কিনেছেন শেওড়াপাড়ার হামিদ মিয়া।  তার কেনা মাঝারি আকৃতির গরুটির দাম পড়েছে এক লাখ ৫৬ হাজার টাকা। সঙ্গে হাসিল দিতে হয়েছে সাত হাজার ৮০০ টাকা। পশু কিনতে নিজের সঙ্গে নিয়ে যান ১০ বছরের মেয়ে ও স্বজনদের। আগেভাগে পশু কেনার কারণ জানতে চাইলে বলেন, বাসার পাশে তাদের পশু রাখার জায়গা আছে। এ জন্য আগেভাগে কিনেছেন। পশু হিসেবে গত বছরের চেয়ে তারটার দাম কিছুটা বেশি বলে মনে হয়েছে। বিদ্যমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সময়ে এটি স্বাভাবিক বলে অভিমত তার।

পোস্তগোলার হাটে দেশীয় গরু ও ছাগল বিক্রির জন্য সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে। ক্রেতারা সেসব পশু তাদের চাহিদা অনুযায়ী পছন্দ করে দামদর করছেন। এখানে পর্যাপ্ত ক্রেতা থাকলেও বিক্রি কম হচ্ছে। ক্রেতারা যাচাই-বাছাই করে কোরবানির জন্য গরু কিনবেন। মোরাশ্বির নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে এসেছি কোরবানির জন্য গরু কিনতে। বাজারে এসে একটি গরু পছন্দ হয়েছে সেটার দাম করেছি এক লাখ টাকা। কিন্তু বিক্রেতা সেই দামে গরু বিক্রি করবেন না।

বাংলাদেশ গবাদিপশু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, দেশে পর্যাপ্ত পশু রয়েছে। আশা করি, কোরবানিতে পশুর কোনো সংকট হবে না। তবে পশু খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় মাংস ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা ধরে পশু কিনতে হবে। আর ছোট গরুর ক্ষেত্রে মাংসের দাম এক হাজার ধরে কিনতে হবে।

যেসব স্থানে মিলবে কোরবানির পশু : এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকার ১৯টি স্থানে কোরবানির পশুর হাট বসবে। এর মধ্যে উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ১০টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ৯টি স্থানে পশুর হাট বসবে। ঢাকা উত্তর সিটির যেসব এলাকায় পশুর হাট বসবে সেগুলো হলো— উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরের বৃন্দাবন, দক্ষিণখানের কাওলা শিয়াল ডাঙ্গাসংলগ্ন খালি জায়গা, খিলক্ষেত খাঁপাড়া উত্তর পাশের জামালপুর প্রপার্টিজের খালি জায়গা, ভাটারা (সাঈদ নগর) পশুর হাট, বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং আফতাব নগরের ব্লক ই, এফ, জি, এইচ পর্যন্ত অংশের খালি জায়গা, মোহাম্মদপুর বছিলা এলাকার ৪০ ফুট সড়কসংলগ্ন রাজধানী হাউজিং ও বছিলা গার্ডেন সিটির খালি জায়গা, মিরপুর ৬ নম্বর ইস্টার্ন হাউজিং, মিরপুর ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত কাচকুড়া ব্যাপারীপাড়ার রহমান নগর, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠের খালি জায়গা, গাবতলী গবাদিপশুর হাট।

এদিকে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পশুর হাটগুলো বসবে যাত্রাবাড়ী দনিয়া কলেজ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাবসংলগ্ন খালি জায়গা ও কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা, খিলগাঁও মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশান ঘাটসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, লালবাগের রহমতগঞ্জ ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা, ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজ সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা। ঈদের দিনসহ পাঁচ দিন বেচাকেনা চলবে এই হাটগুলোতে। বেশ কয়েকটি হাটে নগদ আদান-প্রদানের ঝক্কি এড়াতে ডিজিটাল লেনদেনের ব্যবস্থা থাকবে।

নোয়াখালী জেলার ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিন জানান, পাঁচ বছর আগে সাত একর পতিত জমিতে একটি শেড বানিয়ে ৫০টি গরু মোটাতাজাকরণ শুরু করেন। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে। এখন প্রতি বছর ২০০ গরু বিক্রি করেন তিনি। সেই খামার থেকে এবার কোরবানির ঈদে ২০০ গরু বিক্রির স্বপ্ন দেখছেন তিনি । যার বাজার মূল্য প্রায় চার কোটি টাকা।
ঈদে এক লাখ গরু আমদানির সুপারিশ : এক লাখ গরু আমদানির সুপারিশ করেছে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব। সম্প্রতি ‘ঈদকে সামনে রেখে পণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া বলেন, দেশের বাজারে গরুর মাংস ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ ভারতের কলকাতায় গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৬০ রুপিতে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৪৫ টাকা। ভারতে প্রচুর গরু উৎপাদন হয় কিন্তু ধর্মীয় কারণে তারা গরুর মাংস খায় না। সেখানে চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি হওয়ায় দাম কম। এ অবস্থায় আসছে কোরবানি ঈদে ভোক্তাদের কম দামে মাংস খাওয়াতে ভারত থেকে অন্তত এক লাখ গরু আমদানির সুপারিশ করছি। তাহলে বাংলাদেশের বাজারে গরুর দাম কমবে। 

চোরাচালান ঠেকাতে সীমান্তে কঠোর অবস্থানে বিজিবি : আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে কিছু অসাধুচক্র পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে গরু বাংলাদেশে প্রবেশ (পাচার) করানোর জন্য তৎপর। এ ধরনের অপতৎপরতা রোধে সীমান্তে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি। বিজিবি বলছে, বর্তমানে বাংলাদেশ পশুসম্পদে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশীয় এ সম্পদ বিকাশের স্বার্থে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে গরু পাচার রোধে বিজিবি দৃঢ় অবস্থানে।
ঈদের দিন দুপুর থেকেই বর্জ্য অপসারণ শুরুর নির্দেশ মেয়র তাপসের : ঈদুল আজহার দিন দুপুর ২টা থেকে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণকাজ শুরু করতে সব কাউন্সিলরকে নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

বর্জ্য অপসারণে ১০ লাখ পলিব্যাগ বিতরণ করবে ডিএনসিসি : আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির বর্জ্য অপসারণে নগরবাসীর মধ্যে ১০ লাখ পরিবেশবান্ধব পলিব্যাগ বিতরণ করবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীর এ কে খন্দকার সড়কে ডিএনসিসি ও বন অধিদপ্তরের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে এ কথা জানান মেয়র আতিকুল ইসলাম।

আরএস