নাটোরের সুমন শেখ। প্রিয় পশুকে নিয়ে এসেছেন রাজধানীর গাবতলী পশুর হাটে। তিন বছর ভাইয়ের মতোই লালন-পালন করেছেন প্রিয় পশুটিকে। সুমন শেখের মা নাজনিন খানম শখ করে নাম রেখেছেন জজ সাহেব। সন্তানের মতোই গরুটিকে দেখভাল করতেন। আজ প্রিয় পশুকে বাজারে পাঠিয়ে বিমর্ষ তিনি।
গরুটির মালিক সুমন বলেন, এই গরুটির চাল-চলন, খাওয়া-দাওয়া সব কিছুতেই রয়েছে আভিজাত্যের ছোঁয়া। বাসি কোনো খাবার দিলে মুখে নিবে না কোনোভাবেই। তাই মা তার নাম রেখেছেন জজ সাহেব। ১১শ কেজি ওজনের এই গরুটির দাম চাওয়া হয়েছে ১৭ লাখ টাকা। ভারতের রাজস্থান থেকে দুটি দুম্বা নিয়ে বাড়ির ছাদে ফার্ম করেছিলেন আব্দুর রহমান, আজ তার ফার্মে ২০টির বেশি দুম্বা রয়েছে। তবে এই কোরবানিতে বিক্রিযোগ্য দুম্বা রয়েছে ছয়টি। যার মধ্যে রয়েছে বউরাণী। এর দাম চাওয়া হয়েছে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা। আ. রহমান বলেন, আমি শখের বসে রাজস্থান থেকে দুম্বা নিয়ে বাসার ছাদে পালন করতে শুরু করি। এরপর আমার খামারে দুম্বা বাড়তেই থাকে। যে টাকা দিয়ে দুম্বা কিনেছিলাম তা অনেক আগেই তুলে এনেছি, এখন এটাই আমার নেশা ও পেশা।
অন্যদিকে রাজধানীর সবচেয়ে বড় অস্থায়ী পশুর হাট আফতাব নগরে এসেছে সঞ্জয় কর্মকারের রাজাবাবু। কুষ্টিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাঁচ বছর ধরে প্রিয় পশুকে লালন-পালন করছেন তিনি। করোনাকালীন সময়ে দারুন অর্থকষ্টেও প্রিয় রাজাবাবুকে বিক্রি করেননি তিনি। কিন্তু এবার অর্থনৈতিক সংকট তাকে রাজাবাবু থেকে আলাদা করে দিচ্ছে। প্রিয় গরু রাজাবাবুর দাম চাওয়া হয়েছে ১৬ লাখ টাকা। রংপুর থেকে ক্রোস জাতের ছাগল নিয়ে এসেছেন রইস উদ্দিন। তিনি এক-একটি ছাগলের দাম চাইছেন দুই লাখ ২০ হাজার টাকা। এমনই হাজারো গল্প প্রতিদিন রচিত হচ্ছে রাজধানীর ১৯টি পশুর হাটে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে একবুক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকার হাটে আসছেন বিক্রেতারা। অন্যদিকে ক্রেতারা খুঁজছেন পরিপাটি পছন্দের পশু।
বিভিন্ন হাটের পশু ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবার বিকেল থেকেই মূলত পশু বিক্রির জন্য হাটগুলোতে আসতে শুরু করেছেন বিক্রেতারা। তবে ঈদ এগিয়ে এলে সড়কে যানজট ও ঝামেলা এড়াতে অনেকে কয়েকদিন আগেই চলে এসেছেন বলেও জানান। হাটগুলোর ইজারাদাররা বলছেন, কয়েক দিন ধরেই হাটগুলোতে গরু আসতে শুরু করেছে। ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে হাটে পশু আরও বাড়বে। সেই সঙ্গে বিক্রিও জমে উঠবে বলে আশা করছেন তারা। পশুর হাটগুলোতে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের নিরাপত্তার স্বার্থে ডিজিটাল বুথ, জালটাকা শনাক্তের মেশিনসহ পর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মীর ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান তারা।
কালশীর বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন, গত বছর এক সপ্তাহ আগে কোরবানির জন্য গরু কিনেছিনে। কিন্তু রাখার জায়গা না থাকায় বেশ অসুবিধায় পড়তে হয়েছিল তাকে। তাই এ বছর কোরবানি কাছাকাছি এলে পশু কিনতে চান তিনি। অবশ্য মিরপুরের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, গত বছর কোরবানির কাছাকাছি সময়ে গরু কেনার ইচ্ছে ছিল তাই আগেভাগে কেনা হয়নি কিন্তু শেষ সময়ে দেখি গরুর দাম অনেক বেড়ে গেছে। এমনকি ভালো গরুও নেই। তাই এ বছর আগেই বাজারে এসেছি। পছন্দের গরু কিনে রাখতে চাই যাতে গত বছরের অবস্থা না হয়।