ঈদের পর যুবছাত্র আন্দোলন

আবদুর রহিম প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২৩, ১১:৪৬ পিএম

ভিন্ন মতাদর্শী ছাত্রসংগঠনগুলোকে নিয়ে ঈদের পর ছাত্রঐক্যের ব্যানারে আসছে নতুন কর্মসূচি

ভোটের অধিকার নিশ্চিতে ভোট দিতে না পারা চার কোটি ৭০ লাখ নতুন তারুণ্য নিয়ে নয়া ছক

ভোটের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে এবার লাখ লাখ তরুণ অংশগ্রহণ করছে
—সুলতান সালাউদ্দিন টুকু
সভাপতি, যুবদল

তারুণ্যের এই আন্দোলন শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্ব উপলব্ধি করছে
—সাইফ মাহমুদ জুয়েল
সাধারণ সম্পাদক, ছাত্রদল

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে যৌথ উদ্যোগে চলছে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের তারুণ্য সমাবেশ। গত ১৪ জুন চট্টগ্রাম থেকে তারুণ্য সমাবেশ শুরু হয়েছে। এরপর ১৯ জুন রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বগুড়া শহরে হয়েছে। ২৪ জুন সমাবেশ হয়েছে বরিশালে। এ সমাবেশে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে বিএনপি। এতে অংশগ্রহণ করেছেন হাজার হাজার তরুণ নেতাকর্মী। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন তারুণ্য সমাবেশে অংশগ্রহণ করে স্বউদ্যোগে বক্তব্য দিয়েছেন। 

ভোটের অধিকার এবং বর্তমান সরকারের বিদায় চেয়েছেন। এই তারুণ্য সমাবেশ এখনো চলমান রয়েছে। পরবর্তীতে সিলেট বিভাগে ৯ জুলাই, খুলনা বিভাগে ১৭ জুলাই এবং সর্বশেষ ২২ জুলাই ঢাকায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত  হবে। দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে দীর্ঘ সময় প্রায় চার কোটি ৭০ লাখ নতুন ভোটার কোনো ভোট দিতে পারেনি। তাই এ সরকারকে হটিয়ে ভোটের অধিকার নিশ্চিতে বিএনপিসহ অন্যান্য মতাদর্শী ছাত্রসংগঠনকে নিয়ে যুবছাত্র ঐক্য গঠন করে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। ঈদের পর ছাত্রঐক্যের ব্যানারে সরকার পতন ও ভোটের অধিকার নিশ্চিতে নতুন কর্মসূচি আসবে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছে। এ নিয়ে পর্দার আড়ালে অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের সঙ্গেও যোগাযোগ চলছে। আন্দোলনের ফরমেট দাঁড় করানো হচ্ছে। বিএনপির তারুণ্য সমাবেশ শেষ হলেই যৌথভাবে যুবঐক্যের ঘোষণা আসবে।  

ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা বলছেন, এ সরকারের অধীনে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে গেছে। ফলে একটি জাতি পুরো অন্ধকারে চলে যাচ্ছে। পরীক্ষা ছাড়াই অটোপাসের একটি জাতি তৈরি হচ্ছে। একের পর এক সিরিজ বন্ধের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখন যেন ঘাসের ফসলে পরিণত হয়েছে। যারা পাস করে বের হচ্ছে, তারা চাকরি না পেয়ে হতাশায় জীবন কাটাচ্ছে। অনেকে আত্মহত্যা পর্যন্ত বেচে নিচ্ছে। 

সম্প্রতি এক জরিপেও দেখা গেছে, মানসিক বিষণ্নতায় ভোগা তরুণ-তরুণীর সংখ্যা বেড়েছে বহুগুণে। প্রায় ৬১ শতাংশ তরুণ মানসিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যাদের হতাশার কোনো অন্ত নেই। কেউ হতাশ দেশ ও জাতি নিয়ে। কেউ হতাশ নিজের পড়াশোনা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে। আবার বেশিরভাগই হতাশ নিজের জীবিকা নিয়ে। আর এই হতাশার মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে অনুকরণীয় বা অনুসরণ করার মতো কেউ না থাকায়। অর্থনৈতিক সংকট, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থা, মূল্যবোধের অবক্ষয়— এ বিষয়গুলো দেশের তরুণ সমাজকে বিভ্রান্তির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। সব মিলিয়ে উজ্জ্বল কোনো ভবিষ্যতের ছবি আঁকতে পারছেন না তরুণরা। এ থেকে উত্তরণে রাষ্ট্রের যে ভূমিকা থাকা দরকার, তার মেরুদণ্ড প্রায় ভেঙে গেছে। তাই তরুণদের নিয়ে অতীতে এ দেশে ৫২, ৬২, ৬৯ ও ৭১ সালসহ যত বিপ্লবী পরিবর্তন হয়েছে, সেই রূপে আরেকটি ফরমেটে আন্দোলন আবশ্যক। এজন্য বিএনপি আগেই নিজেদের দল নিয়ে ‘টেস্ট কেস’ হিসেবে দেখছে। এতে যে সাড়া পাওয়া গেছে, তার মাধ্যমে এখন যুবঐক্যের ব্যানারে আন্দোলনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সেপ্টেম্বরের দিকে এই যুবঐক্যের কর্মসূচি আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের ভাষ্য। 

এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান আমার সংবাদকে জানান, তারুণ্যের সমাবেশ থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি দল-মত নির্বিশেষে তরুণদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে সবাইকে যুক্ত করা হচ্ছে। এ দেশে রাতের ভোটের কারণে লাখো তরুণ ভোট দিতে পারেনি। বিশ্ব গণমাধ্যমে যা আমরা দেখেছি। তাই  আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে তরুণদের উজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। 

জাতীয়তাবাদী যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু আমার সংবাদকে বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছি। আমাদের ভোটের অধিকারের লড়াইয়ের আন্দোলনে এবার লাখ লাখ তরুণ অংশগ্রহণ করছেন। তারুণ্য সমাবেশে আমরা তার সাড়া পাচ্ছি। আমরা মনে করছি, এই আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে যারা ভোট দিতে পারেনি, তাদের ভোটাধিকারের মাধ্যমে এ সরকারের পতন নিশ্চিত হবে। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে প্রায় চার কোটি ৭০ লাখ নতুন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। আওয়ামী লীগ না করার কারণে অনেক মেধাবীর চাকরি হচ্ছে না। এ অবস্থার পরিবর্তন দরকার। এজন্য রাজপথে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে।’ মাঠের আন্দোলনে ছাত্রদের নেতৃত্ব দেয়া এই নেতা আরও বলেন, যখন আমরা অধিকার ও ভোটের কথা বলি, তখনই আমাদের গুম-খুন, অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়, গ্রেপ্তার করা হয়। এ সরকারের সব অত্যাচার-নির্যাতন-জুলুমের বিচার এক দিন এই বাংলার মাটিতেই হবে ইনশাল্লাহ।  বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং এ সরকার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা কেউ ঘরে ফিরব না। মরার জন্য প্রস্তুতদের কেউ মারতে পারে না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা কেউ ঘরে ফিরে যাব না। বেগম খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি সব নেতাকর্মীর মুক্তি আমাদের আন্দোলনেই হবে। 

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল আমার সংবাদকে বলেন, তারুণ্যের এই আন্দোলন শুধু বাংলাদেশ নয়, নতুন এই ধারণা আজ সারা বিশ্ব উপলব্ধি করছে। আমাদের প্রায় সাড়ে চার কোটি ভোটার ভোট দিতে পারেনি এই সরকারের অধীনে।  যাদের অধিকাংশই তরুণ। আপনারা জানেন, বাংলাদেশের শক্তি হলো তারুণ্য।  তরুণদের এই উপলব্ধিকে গুরুত্ব দিয়ে আমাদের চেয়ারম্যান তারুণ্যের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা মাঠে নেমেছি। এ দেশে ৬২, ৬৯ এবং ৭১ সহ যত গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন ও সফলতা এসেছে, তা তরুণদের মাধ্যমেই এসেছে। তারেক রহমানের নির্দেশিত কর্মসূচিতে যেভাবে তারুণরা অংশগ্রহণ করছে  নিজ উদ্যোগে, তাতে এই সরকারের পতন সুনিশ্চিত। তারুণ্যের অংশগ্রহণের আন্দোলনে এ সরকারের বিদায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এই দেশ আবার নতুনভাবে উজ্জীবিত হবে।