- শুধু ঢাকা মহানগরের ওপর নির্ভরতা নয়
- ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী জেলাকেও যুক্ত করার উদ্যোগ
- বিরোধী দলগুলো আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা করলে ছাড় নয়
দেশে বিদ্যমান সব রাজনৈতিক দলেরই এখন টার্গেট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচন সামনে রেখেই দলগুলো তৎপরতা চালাচ্ছে। নির্বাচন এলে অন্য সময়ের চেয়ে বেশি তৎপর থাকে দলগুলো। কারণ, অনেক ক্ষেত্রে নির্বাচনে দলীয় শক্তির ওপর ভিত্তি করে জনপ্রিয়তা ওঠানামা করে থাকে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াতসহ দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল যখন শেখ হাসিনার পদত্যাগ চাচ্ছে, একটি নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে টানা কর্মসূচি পালন করে আসছে, ঠিক তখন বসে নেই টানা ক্ষমতায় থাকা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগও। দলটি ইতোমধ্যে নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এখন তারা নির্বাচনি চ্যালেঞ্জগুলো শনাক্ত ও তা মোকাবিলায় কৌশল নির্ধারণে সময় দিচ্ছে। রাজপথ এতদিন প্রায় ফাঁকাই ছিল বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর জন্য। কিন্তু এখন আর সে অবস্থা নেই। এখন প্রতিদিনই কোনো না কোনো কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে সক্রিয় রয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।
আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা প্রকাশ্যেই ঘোষণা দিয়ে বলছেন— কাউকে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেবে না দলটি। পূর্বে বিএনপি কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করলে একই দিন শান্তি সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে মাঠে থাকত আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই কর্মসূচিকে পাল্টা কর্মসূচি আখ্যা দিতেন। আর বিরোধী দলের নেতারা অভিযোগ করে বলতেন, শান্তি সমাবেশের নামে একই দিন পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রকৃতপক্ষে শান্তি বিনষ্ট করতে চায়। এখন কিন্তু পরিস্থিতি ভিন্ন। আওয়ামী লীগ নিজেরাই নিজেদের মতো করে কর্মসূচি ঘোষণা করে সক্রিয় থাকছে মাঠে। জেলা পর্যায়ে কোনো কোনো স্থানে বিএনপির সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানের ঘটনাও ঘটেছে। ঘটেছে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াও। অর্থাৎ রাজপথে হার্ডলাইনের দিকে চলে যাচ্ছে টানা ক্ষমতায় থাকা এই দলটি।
দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে দেশের তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী সংগঠন রয়েছে আওয়ামী লীগের। দলীয় কর্মসূচিতে নেতাকর্মীরাও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছেন। ফলে বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে তৃণমূল পর্যায়ে কঠোর কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করা হলে এর যথাযথ জবাব দেয়ার জন্য তৃণমূল আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত রয়েছেন। এবার নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলোর টার্গেট ঢাকায় এক দফা দাবির আন্দোলন চাঙ্গা করা। বিগত দিনে বিরোধী দলগুলো বিভাগীয় শহর এবং জেলা-উপজেলায় আন্দোলন চাঙ্গা করতে পারলেও ঢাকায় খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। ফলে এবার বিরোধীদের টার্গেট ঢাকার রাজপথ দখলে রাখা।
কিন্তু আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের কর্মসূচিকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করতে চাচ্ছে। এজন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি। রাজপথে যে কোনো কর্মসূচির ঘোষণা এলে তা সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। চলতি মাসের শুরু থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটও নির্বাচন সামনে রেখে সক্রিয় রয়েছে। আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকেও চাঙ্গা রাখতে নানা কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। বিশেষ করে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ মাঠে সক্রিয় ভূমিকায় রয়েছে। ঢাকায় কর্মসূচি সফলভাবে পালনে মহানগরীর প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটকে সক্রিয় করা হয়েছে।
এছাড়াও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ও আশেপাশের জেলাগুলোকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গতকালও রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আ.লীগ কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী সব সাংগঠনিক জেলার নেতাদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হ?য়। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ঢাকায় বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলা এবং সংগঠনকে শক্তিশালী রাখতে আওয়ামী লীগ শুধু মহানগরীর ওপর ভরসা করছে না। এ জন্যই দলটি ঢাকা জেলা ও এর পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোকে রাজধানীর কর্মসূচিতে সংযোগ রাখতে চায়।
আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় আমার সংবাদের এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, বিরোধী দল তাদের দাবি আদায়ের আন্দোলন করবে, সংগ্রাম করবে— এটা স্বাভাবিক। কারণ, দাবি আদায়ে আন্দোলন করা রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু আন্দোলন-সংগ্রামের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে তা মেনে নেয়া হবে না।
আগামী দিনে আন্দোলন-সংগ্রাম সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনের সঙ্গে কথা হয় আমার সংবাদের এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সামনে এখন মূল টার্গেট হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন। এ নির্বাচনে জয়লাভ করতে আমরা জনগণের কাছে যাব। জনগণের কাছে আওয়ামী লীগের প্রায় ১৫ বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরব। এক প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, বিরোধী দলগুলো গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করতে চাইলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তারা সন্ত্রাসী কার্যক্রম হাতে নিলে জনগণই তা প্রতিহত করবে।