গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ

সুদহার নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৩, ১১:৩৬ পিএম
  • স্মার্ট করিডর অনুযায়ী ধাপে ধাপে বাড়বে সুদহার
  • সংকট নেই তবুও নির্ধারিত দামে ডলার পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা
  • জামানতকারী প্রশ্নে ছাড় পাবেন নারী উদ্যোক্তারা

ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে ভোগান্তি ও সুদহার বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসব সমস্যার কথা তুলে ধরে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) প্রতিনিধিদল। এতে নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির সভাপতি মাহবুবুল আলম। তারা গভর্নরকে জানিয়েছেন, অনেক ব্যবসায়ীকে নির্ধারিত রেটের চেয়ে বেশি দামে ডলার কিনে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে হচ্ছে। এছাড়া সুদহার বৃদ্ধির ফলে পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসা হুমকির মুখে পড়ছে। সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার।  

বৈঠক শেষে এফবিসিসিআই সভাপতি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডলার মার্কেট নিয়ে গভর্নরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, নির্ধারিত রেটে সবাই ডলার পাবেন।’ তবে বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, এখন ডলারের তেমন সংকট নেই; তাই দাম বেশি হওয়ার কোনো কারণ দেখছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘এখন বাণিজ্য ভারসাম্য সমান, দাম বেশি হওয়ার কথা না।’ তিনি বলেন, ডলার রেট নির্ধারণ করে বাফেদা (বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন) ও এবিবি (অ্যাসোসিয়েশন অভ ব্যাংকারস, বাংলাদেশ)। আমরা তাদের দেয়া রেট নিয়ে কাজ করি।

এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম আরও বলেন, ‘ব্যাংক ঋণের সুদের হার না বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছি গভর্নরের কাছে। গভর্নর বলেছেন, ঋণের সুদ এখন স্মার্ট রেট অনুযায়ী চলছে, সুদহার অস্বাভাবিক হারে বাড়ার সুযোগ নেই। এখনকার পদ্ধতি অনুসারে সামান্য পরিমাণ ধাপে ধাপে বাড়তে পারে।’ মাহবুবুল আলম আরও জানান, বৈঠকে ঋণ পরিশোধ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এখন পর্যন্ত দুটি শিল্প খাতকে ঋণ পরিশোধ সুবিধা দেয়া হয়েছে। আরও কিছু খাতকে এ সুবিধা দেয়া যায় ক না সে বিষয়ে জানিয়েছি, যাতে ব্যবসায়ীরা ভালোমতো ব্যবসা করতে পারেন।’

এলসি খোলায় জটিলতা নিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের নিয়ে আমরা কথা বলেছি। তারা যেন এলসি খুলতে পারেন, এ বিষয়ে গভর্নর আশ্বস্ত করেছেন এবং ব্যাংকগুলোকে সেভাবেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’ অন্যদিকে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে কেবল পুরুষ নয়, নারীকেও জামানতকারী দেখিয়ে ঋণ নিতে পারবেন নারী উদ্যোক্তারা। দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে এমন পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈঠকে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি  উদ্যোক্তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। এক্ষেত্রে পুরুষদের পাশাপাশি বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে চলেছেন নারী উদ্যোক্তারাও। কিন্তু ব্যবসা পরিচালনা এবং সমপ্রসারণের জন্য নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তি এখনও ততটা সহজ হয়নি। নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোরও উৎসাহ কম দেখা যায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এছাড়া ঋণ পাওয়ার জন্য একজন নারী উদ্যোক্তাকে তার বাবা, ভাই কিংবা স্বামীকে জামানতকারী হিসেবে দেখাতে হয়। কোনো নারীকে জামানতকারী হিসেবে দেখালে ব্যাংকগুলো সেটি গ্রহণ করতে চায় না উল্লেখ করে তিনি এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপ আশা করেন। একই সাথে ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাংক ঋণ সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকায় উন্নীত করার আহ্বান জানান মাহবুবুল আলম।

এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়,  নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তি সহজীকরণে বাংলাদেশ ব্যাংক নানাবিধ উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের গভর্নর বলেন, ব্যাংকগুলো যেন নারীদেরও জামানতকারী হিসেবে গ্রহণ করে সেজন্য ব্যাংকগুলোকে বলা হচ্ছে। নারীদের ঋণপ্রাপ্তি সহজীকরণে ব্যাংকগুলোকে সমপ্রতি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। 

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে আমরা ইতোমধ্যে নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছি। ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শিল্প খাতে নারীরা যেন আরও এগিয়ে আসতে পারে সে লক্ষ্যে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণপ্রাপ্তি ধাপে ধাপে আরও সহজ করার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইতোমধ্যে যার সুফল ভোগ করছেন অসংখ্য নারী উদ্যোক্তা। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি খায়রুল হুদা চপল, শমী কায়সার, মোহাম্মদ আনোয়ার সাদাত সরকার, ড. যশোদা জীবন দেবনাথ, মুনির হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান, আবু ফারাহ মো. নাছের, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক প্রমুখ।