শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক। এ ব্যাপারে ডিজিকে জানিয়েছি
—অধ্যক্ষ ডা. মেজবাউল হক, ম্যাটস ফরিদপুর
চার দফা দাবিতে সারা দেশে একযোগে সব সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে টানা ৩২ দিনের মতো শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করেছেন। ইন্টার্ন শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন কর্মবিরতিতে। এতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। কলেজগুলোর অধিকাংশ অধ্যক্ষই শিক্ষার্থীদের দাবির পক্ষে একমত হয়েছেন। তবে এক মাস পরও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
জানা যায়, সারা দেশে সরকারি ম্যাটস রয়েছে ১৬টি আর বেসরকারি প্রায় ২০০ প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরা গত মাসের ১৬ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের আন্দোলনে রয়েছে। গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন তারা। চার দফা হলো— ১. ইন্টার্নশিপ বহালসহ অসঙ্গতিপূর্ণ কোর্স কারিকুলাম সংশোধন। ২. অ্যালাইড হেলথ বোর্ড বাতিল করে অবিলম্বে মেডিকেল এডুকেশন বোর্ড অব বাংলাদেশ নামে স্বতন্ত্র বোর্ড গঠন। ৩. কর্মসংস্থান সৃজন ও দ্রুত নিয়োগ। ৪. বঙ্গবন্ধুর পঞ্চমবার্ষিকী পরিকল্পনার অনুযায়ী উচ্চশিক্ষা প্রদান।
নিজেদের দাবির স্বপক্ষে আন্দোলনরত ম্যাটস শিক্ষার্থীরা বলেন, ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ম্যাটসের শিক্ষার্থীদের ডিপ্লোমা শেষে এমবিবিএস করার সুযোগদানের কথা বলেছেন। এ ক্ষেত্রে ম্যাটসের শিক্ষার্থীদের বিষয়ের আলোকে ভর্তিপরীক্ষা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এর জন্য তাদের আলাদা প্রশ্ন প্রণয়ন করা হবে। আর ভর্তিপরীক্ষায় সুযোগ পেলে তারা এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষ থেকে ক্লাস করবে। এটা বর্তমানে এমবিবিএস ডাক্তারদের বাধার মুখে সম্ভব হচ্ছে না। এর পরিবর্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি আমাদের বিএসসি দিতে চেয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের ক্লিনিক্যাল কোনো বিষয় দিতে রাজি না। আমাদের দাবি ছিল, ব্যাচেলর অব মেডিসিন। কিন্তু তিনি আমাদের নন-ক্লিনিক্যাল বিষয় দিতে রাজি হয়েছেন। এটা আমরা মানিনি।
সরকারি চাকরিজীবীরা ১০ গ্রেডের চাকরি পায় না। ১০ গ্রেডে আনার ক্ষেত্রে তিন বছরের পরিবর্তে চার বছরের কোর্সের কথা বলা হয়েছে। আগে আমাদের কোর্স ছিল তিন বছরের একবছরের ইন্টার্নি। কিন্তু বর্তমানে চার বছরের কোর্স চালু করলেও ইন্টার্নির সুযোগ নেই। ম্যাটসের শিক্ষার্থীরা ইন্টার্নি ছাড়া শিখবে কীভাবে? তাই নতুন করে গঠন করা এ কারিকুলাম অসম্পূর্ণ ও অসঙ্গতিপূর্ণ। আমরা চাই চার বছর থাকুক, এর সঙ্গে সর্বনিম্ন ছয় মাসের ইন্টার্নি থাকুক।
২০১৮ সালে আমাদের আন্দোলনের সময় মেডিকেল এসিস্টেন্টদের জন্য আলাদা স্বতন্ত্র বোর্ড গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ মন্ত্রিসভার এক সিদ্ধান্তে এ বছর অ্যালাইড হেলথ বোর্ড নামে একটা বোর্ড গঠন করা হয়। যেখানে মেডিকেল ডেন্টালের কাউকে না রেখে ম্যাটস ও আইএইচটিকে রেখেছে। এর মানে হলো আমরা নন মেডিকেল পারসন। বিএমডিসি থেকে রেজিস্ট্রেশন দেবে না। আমরা রোগী দেখতে পারব না, চেম্বার করতে পারব না। সব সময় একজন সহকারী হিসেবে থাকতে হবে। সেজন্য আমরা অ্যালাইড হেলথ বোর্ডের পরিবর্তে মেডিকেল এডুকেশন অব বাংলাদেশ নামে স্বতন্ত্র বোর্ড চাই। এর মধ্যে মেডিকেল, ডেন্টাল, প্রাইভেট মেডিকেল, ম্যাটস ও আইএইচটিকে রাখতে হবে।
২০১৮ সালের নিয়োগ বিধি মতে, আমাদের কর্মসংস্থানের কোনো জায়গা রাখা হয়নি। যদিও এর আগে আমাদের বিধিতে এমনটি ছিল না। দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হাসনাত জামী বলেন, ডিজি আমাদের থেকে ১৫ দিনের সময় চেয়েছেন। আগামী ২০ তারিখে ১৫ দিন পূর্ণ হবে। এখনো আমরা নিশ্চিত না আমাদের দাবি কতটুকু মানা হচ্ছে।
মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস), ফরিদপুরের অধ্যক্ষ ডা. মেজবাউল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক। আমি তোমাদের দাবিগুলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর বলেছি। আশা করি দ্রুতই তোমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন হবে। তবে এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মো. খোরশেদ আলমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।