বর্ধিত হচ্ছে রাজউকের সীমানা

আব্দুল কাইয়ুম প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩, ১২:৫৪ এএম
  • রাজউকের নতুন সংযুক্ত এলাকা ৫০০ বর্গকিলোমিটার
  • পূর্বে মেঘনা ব্রিজ, দক্ষিণে দ্বিতীয় শীতলক্ষ্যা ও দক্ষিণ-পশ্চিমে পদ্মা ব্রিজের আগ পর্যন্ত হবে নতুন সীমানা 
  • রাজউকের ১৫২৮ হতে ৫৯০ বর্গকিলোমিটার নিয়ে ‘গাউক’ গঠন করা হয়

কথাবার্তা চলছে, সরকারি অনুমোদন পেলেই রাজউক কার্যক্রম শুরু করবে
—মোস্তাক আহমেদ, নগর স্থপতি, রাজউক

রাজউকের সীমানা বাড়লেও সক্ষমতা না বাড়লে সুফল আসবে না
—ড. আদিল মুহাম্মদ খান, নির্বাহী পরিচালক, আইপিডি

অনেক দিন ধরেই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নতুন কিছু অঞ্চল বাড়ানোর কথা চলছিল। কিন্তু চলতি বছরে মাঝামাঝি পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নেয় রাজউক। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে সরকার থেকে সাড়া পেলে তবেই রাজউক তাদের কার্যক্রম শুরু করবে। মূলত চলতি বছরের জুন মাসে এসে সীমানা বাড়ানোর বিষয়টি স্পষ্ট হয়। রাজউকের এলাকা শীতলক্ষ্যা, পূর্বে মেঘনা নদী ও দক্ষিণ-পশ্চিমে পদ্মা সেতু পর্যন্ত সীমানা বিস্তৃত করার পরিকল্পনার ব্যাপারে গত ২০ জুন গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন। সরকার ও স্থানীয় সরকারের সহায়তা পেলে রাজউক বর্ধিত এলাকা নিয়ে কাজ শুরু করার কথা রয়েছে। 

বর্তমানে এক হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে রাজউকের অবস্থান। তবে রাজউকের বর্তমান সীমানার কিছু অংশ থেকে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (গাউক) আলাদা এলাকা করা হয়েছে। এর ফলে কিছুটা অংশ কমে যায়। 

রাজউকের নতুন সংযুক্ত এলাকার ৫০০ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে পূর্ব পাশের শেষ সীমানা মেঘনা ব্রিজ, দক্ষিণে দ্বিতীয় শীতলক্ষ্যা ও দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকায় পদ্মা ব্রিজের এই পাড় পর্যন্ত থাকবে। ইতোমধ্যে চলছে সমীক্ষা কার্যক্রম। কার্যক্রম শেষ হলে শিগগিরই সমীক্ষা কার্যক্রম শেষ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। রাজউকের ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল হতে ৫৯০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে নতুন করে গাউক গঠন করা হয়েছে। রাজউকের বাকি ৯৩৮ বর্গকিলোমিটার অঞ্চলের সঙ্গে বাড়ানো অঞ্চল যোগ করার আলোচনা চলছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজউকের আওতায় এলাকায় উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থতা লক্ষ করা যায়। এটা ঠিক যে, পদ্মা সেতুর আশেপাশে ব্যাপক আবাসন গড়ে ওঠার চিত্র দেখা যায়, সেসব এলাকায় উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোনো উন্নয়ন সংস্থার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে এ বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে এটা কী রাজউক করবে, নাকি অন্য কোনো সংস্থা দিয়ে করাবে। রাজউক তাদের অঞ্চল না বাড়িয়ে উন্নয়নমূলক কার্যক্রম ও সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি বলে মনে করছে। যত্রতত্র ভবন নির্মাণের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না রাজউক। তারা তাদের অধিক্ষেত্র এলাকা পুনর্বিন্যাসের উদ্যোগ নিয়েছে। গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নিয়োগের পর থেকে রাজউক এ কার্যক্রমে গতি বাড়িয়েছে। এমন এক বাস্তবতায় রাজউক তাদের অধিক্ষেত্র এলাকা মাওয়া পদ্মা সেতুর এ পাড় এবং মেঘনা নদী ও দ্বিতীয় শীতলক্ষ্যা পর্যন্ত বিস্তৃত করতে চায়। রাজউক শুধু এলাকা সংযোজন করলেই হবে না, নিয়ন্ত্রিত এলাকায় কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে। রাজউক সূত্রমতে, পদ্মা সেতুর ফলে তার পার্শ্ববর্তী  ষ এরপর পৃষ্ঠা ২ কলাম ১

এলাকাটি অনেকটা পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। তাই অঞ্চলটির পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য রাজউকের নিয়ন্ত্রণে থাকা অত্যন্ত জরুরি। যদি সেখানে রাজউক তার কার্যক্রম পদ্মা সেতু পর্যন্ত বিস্তৃত করে নিতে পারে, তাহলে পদ্মার আশেপাশের সব এলাকা পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা যাবে। সেজন্যই রাজউকের পক্ষ থেকে পদ্মার পাড়সহ প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সে প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সরকার যদি সম্মতি দেয়, তাহলে রাজউকের অধিক্ষেত্র পুনর্বিন্যাস হবে। রাজউকের একটা বিরাট অংশ হতে গাজীপুর আলাদা কর্তৃপক্ষ হওয়ায় নতুন অঞ্চল বাড়ানোর চিন্তা করছে।

রাজউকের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্যমতে, ১৯৫৩ সালে প্রণীত দি টাউন ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাক্ট-১৯৫৩ আইনের আওতায় ১৯৫৬ সালে ঢাকা এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোর উন্নয়ন ও পরিবর্ধনের বিশেষ ক্ষমতা নিয়ে সর্বপ্রথম ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (ডিআইটি) প্রতিষ্ঠিত হয়। ডিআইটি ১৯৮৭ সালে আইন সংশোধনের মাধ্যমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউক হিসেবে পরিবর্তিত হয়। ১৯৮৭ সালে রাজউকের অধিক্ষেত্র সাভার, কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও অন্যান্য এলাকায় বিস্তৃত হয়। 

রাজউকের প্রস্তাবিত বর্ধিত অঞ্চল সংযুক্ত করলে আদৌ কী সুফল বয়ে আনতে পারবে— এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক এবং ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. আদিল মুহাম্মদ খান আমার সংবাদকে বলেন, বর্তমানে রাজউকের যে অঞ্চল রয়েছে, ইতোমধ্যে তার উন্নয়ন করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সেখানে তাদের সঠিক নজরদারি নেই। বিল্ডিং করার অনুমোদন দিলেও তার ভালোভাবে নজরদারি করে না। রাজউক নতুন যে এলাকাগুলোর দিকে ঝুঁকছে, সেগুলোর ভালো সম্ভাবনা আছে। তাছাড়া সে অঞ্চলগুলো কোনো একটা সংগঠনের অধীনে থাকা উচিত। রাজউকের আগ্রহটি খুবই যৌক্তিক। কিন্তু নতুন এলাকা নিয়ে পূর্বের মতো একই অবস্থা হতে পারে। রাষ্ট্র যে উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে, তা হয়তো বাস্তবায়ন হবে না। এ অঞ্চলটি কী রাজউকের অধীনে থাকবে, নাকি অন্য কারোর অধীনে— এ বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। রাজউক এরিয়া বাড়াতে পারে কিন্তু সক্ষমতা যদি না বাড়ে, তাহলে তাতে কোনো লাভ হবে না। নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সেসব এলাকায় ঠিকমতো উন্নয়ন হবে না। সরকারের মূল আগ্রহ হচ্ছে সেসব এলাকার যেন পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন ঘটে।  

রাজউকের নগর স্থপতি মোস্তাক আহমেদ আমার সংবাদকে বলেন, রাজউকের অঞ্চল বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে কথাবার্তা চলছে। বর্ধিত এলাকার বিষয়ে সবেমাত্র আলোচনা চলছে, আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। কবে এ কার্যক্রম শুরু হবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। বিশাল এলাকা ও অধিকসংখ্যক জনগণের একটা অংশ রাজউকে যুক্ত হবে। যার ফলে রাজউককে অনেক কিছু ভেবেই কাজ শুরু করতে হবে। রাজউকের নীতিনির্ধারকরা ইতোমধ্যে আলোচনা করছেন এলাকা বাড়ানোর জন্য। তাছাড়া সরকারি উচ্চ মহলের কর্তাদের থেকে অনুমতি এলে তবেই রাজউক কার্যক্রম শুরু করবে। নতুন অঞ্চলের সব কাগজপত্র প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। সেখান থেকে অনুমোদিত হলে তবেই সবকিছু নিশ্চিত হওয়া যাবে।

এদিকে গাউক প্রশাসনিক কার্যক্রমের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। গাজীপুরের জন্য আলাদা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে। একজন চেয়ারম্যান নিয়োগ করে গাজীপুর এলাকা ইতোমধ্যে রাজউক থেকে আলাদা হয়ে গেছ। তাছাড়া রাজউক থেকে বেশ কজন কর্মকর্তাকেও গাজীপুরে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বর্ধিত এলাকার কার্যক্রম এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। আশা করছি শিগগিরই এসব কার্যক্রম শেষ হবে।