রাজনীতিতে অজানা হাওয়া

আবদুর রহিম প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩, ১০:৪৫ এএম
  • আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ওপরই শুধু পরিস্থিতি নির্ভর করছে না চলছে বিশ্বশক্তির স্নায়ুযুদ্ধ
  • প্রথম তালিকায় বিচারপতি, প্রশাসনিক ও কয়েকজন রাজনীতিবিদ থাকার খবর চাউর হচ্ছে

বিদেশিদের রক্তচক্ষুতে আ.লীগ ভয় পায় না
—জাহাঙ্গীর কবির নানক

বিদেশিদের হুমকিতে লাভ হবে না, নির্বাচন যথাসময়েই হবে
—মাহবুব-উল আলম হানিফ

ভিসানীতিতে এককভাবে আ.লীগই দায়ী
—মির্জা ফখরুল ইসলাম

গণতন্ত্র, ভোটাধিকার মানবাধিকার নেই বলেই ভিসানীতি প্রয়োগ
—শামসুজ্জামান দুদু

ভালো নেই খালেদা জিয়া। যেকোনো সময় অঘটন ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা। বারবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় সিসিইউতে নেয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে উচ্ছেদ হওয়ার পর থেকেই বেগম জিয়া বিশ্বের নজরে। সাজাপ্রাপ্ত হয়ে তিনি এখন গৃহবন্দি। যেকোনো সময় পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে। নির্বাচনের আগে বেগম জিয়ার কিছু হলে রাজনীতিতে অজানা শঙ্কার খবর চাউর হচ্ছে। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ওপরই শুধু পরিস্থিতি নির্ভর করছে না, যুক্ত হয়েছে বিশ্বশক্তি। ভেতরে ভেতরে চলছে স্নায়যুদ্ধ। এর মধ্যেই রাজনীতিতে আলোচনায় এসেছেন ড. ইউনূস। অনেক উড়ো খবর চারদিকে। দেশের দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি অসহনীয়, অর্থনৈতিক পরিস্থিতির শোচনীয় অবস্থা। ডেঙ্গুর পর ঢাকায় জলাবদ্ধতা। 

এমন পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ঘোষণা দিয়েছে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। আমার সংবাদকে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বিচার বিভাগের বর্তমান ও সাবেক বিচারপতিরা প্রথম তালিকায় রয়েছেন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ কয়েকজন রয়েছেন। স্বল্প তালিকায় রয়েছেন কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাও। তবে এখনই কারা তালিকায় রয়েছেন, জনসম্মুখে তা প্রকাশ করছে না যুক্তরাষ্ট্র।  আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনিশ্চয়তা থেকেই এমন পরিস্থতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। 

গেলো কয়েক মাসে কাজী হাবিবুল আউয়াল একাধিকবার বলেছেন, বিএনপির মতো একটি বড় দল অংশ না নিলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, নির্বাচনে তারা পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের সময় প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পূরণ হবে কি-না তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। রাজনীতিতে চলছে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি। একসঙ্গে বসে সংকট সমাধানেরও কোনো আশা নেই। সঙ্ঘাতের পথে দৃশ্যত রাজনীতি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গেলো সপ্তাহে একটি অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিয়েছেন, সরকারকে ফেলে দিতে ভবিষ্যতে হরতাল অবরোধের প্রয়োজন হলে তারা সেটি করতে প্রস্তুত আছেন কি-না। তারা হাত তুলে জানিয়েছেন, প্রস্তুত আছেন। দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছিলেন, ‘ভোট চোরদের বিদায় করতে চট্টগ্রামে সুনামি তৈরি করতে হবে।’ 

দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসবিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, পরিস্থিতির আলোকে বিএনপি হরতাল অবরোধের কর্মসূচিও ঘোষণা করবে। বিএনপির এমন ঘোষণায় আওয়ামী লীগও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। মাসব্যাপি শান্তি সমাবেশ ঘোষণা দিয়ে রাজপথে রয়েছে।

ভিসানীতি ঘোষণার পর রাজনীতিতে একটি গুমোট পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আতঙ্কে রয়েছেন অনেকে। ভিসানীতিকে ক্ষমতাসীন দল কিভাবে দেখছে— জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমরা বিদেশিদের কাছে বন্ধুত্ব চাই, শত্রুতা চাই না। আমরা নির্বাচন বিশ্বাস করি। নির্বাচনই হলো একমাত্র ক্ষমতায় যাওয়ার পথ। জনসমর্থনের মূল ভিত্তি। বিদেশিদের রক্তচক্ষুকে আওয়ামী লীগ ভয় পায় না। এ দল গণমানুষের দল। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমরা নির্বাচনি বৈতরণী পার হবো। কীভাবে আন্তর্জাতিক শক্তি মোকাবিলা করতে হয়, আওয়ামী লীগ ভালোভাবেই জানে। বিএনপি-জামায়াত অসত্য তথ্য দিয়েছে। আর সেই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এসব পদক্ষেপ এসেছে।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ আমার সংবাদকে বলেন, ‘এই যুক্তরাষ্ট্রই বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল ঘোষণা দিয়েছিল। আমাদের মনে রাখতে হবে, আন্তর্জাতিক শক্তি কখনোই ক্ষমতার পরিবর্তন করতে পারবে না। এ দেশের ক্ষমতার মালিক দেশের জনগণ। মানুষ শেখ হাসিনার ওপর আস্থাশীল। বিদেশিদের কোনো হুমকিতেই লাভ হবে না। আগামী সংসদ নির্বাচন নির্ধারিত সময়ে সংবিধান অনুযায়ী হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে  ভিসানিতি ঘোষণা হয়েছে তা একটি স্বাধীন দেশের জন্য কোনোভাবেই সম্মানজনক নয়। তাদের ঘোষিত বিষয়ে রয়েছে যারা সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দেবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হবে। দেশবাসী এখন অপেক্ষা করছে, কারা বিরোধিতা করে। কারা নির্বাচনের বিরুদ্ধে হুমকি দিচ্ছে, দেশের মানুষ তা জানে।’ 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আমার সংবাদকে বলেন, ‘ভিসানীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের যে বিধিনিষেধ এসেছে এটি আমাদের দেশের জন্য প্রাপ্য নয়, এটি পুরো দেশের জন্য লজ্জার। এর জন্য বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো দায় নেই, এককভাবে আওয়ামী লীগই দায়ী। সরকার নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নির্যাতন, গ্রপ্তার করা হচ্ছে। এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ থেকে নানা রকম পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে। তারা আওয়ামী লীগকে সতর্ক করছে, রেড সিগন্যাল দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে বিশ্ব সমপ্রদায় বিরক্ত, অসন্তুষ্ট।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের দেশের ৫২ বছর বয়স হয়েছে। এই ৫২ বছর বয়সে আমাদের অর্জন আমেরিকার স্যাংশন ও ভিসানীতি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী আমেরিকায় থাকা অবস্থায়  ভিসানীতির কার্যক্রম চালু করেছে। কেন করেছে? কারণ বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। ভোটের অধিকার নেই। মানবাধিকার নেই। আর এ কারণে আমেরিকা আগে স্যাংশন দিয়েছিল, এখন ভিসানীতি কার্যক্রম শুরু করেছে। শোনা যাচ্ছে, সরকারি দলের দায়িত্বশীল অনেক নেতা, প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা এবং সচিব পর্যায়ের অনেকেই এই ভিসানীতির আওতায় পড়েছেন। কেন বাংলাদেশের ওপর ভিসানীতি আসবে? এটি কোনো আনন্দের সংবাদ নয়।’ আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডের ফসল এটি। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে মুক্তিযুদ্ধ করে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য, স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছে সেই দেশে এখন গণতন্ত্র নেই, স্বাধীনতা নেই, বিশ্বের কাছে গণতন্ত্র বিনষ্টের দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।’