খালেদা জিয়া সংকটাপন্ন

আবদুর রহিম প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৩, ১১:০৭ পিএম
  • ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটামের পেছনে কূটনৈতিক মিশনেরও স্বার্থ রয়েছে 
  • পার হচ্ছে ক্রিটিক্যাল সময়, চিকিৎসকেরও কিছু করার নেই বলে দাবি 
  • দীর্ঘ পাঁচ বছর বিএনপি হাইকমান্ডের নীরবতা রহস্যে তৃণমূলে ক্ষোভ

আমরা বুঝতে পারিনি খালেদা জিয়াকে হত্যা করার জন্যই সরকার কারাগারে নিয়েছে 
—মির্জা আব্বাস, স্থায়ী কমিটির সদস্য, বিএনপি

অবস্থা সংকটাপন্ন, দেশের চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেও সম্ভব নয়
—রুহুল কবির রিজভী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, বিএনপি   

খালেদা জিয়া ঝুঁকিপূর্ণ মুহূর্ত পার করছেন, তার অবস্থা আরও 
অবনতির দিকে
—ডা. রফিকুল ইসলাম, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক

খালেদা জিয়া ইস্যুতে বিএনপিতে রহস্য! দীর্ঘ পাঁচ বছর পর নেত্রীর সুচিকিৎসা ও মুক্তি দাবিতে একক কর্মসূচি পালন করছে দলটি। বন্দির পর কয়েকটি আলোচনা সভা, দোয়া, মিলাদ মাহফিল করে সময় ক্ষেপণ করলেও হঠাৎ খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ক্রিটিক্যাল হওয়ায় সরকারকে দেয়া ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটামের ৩০ ঘণ্টারও বেশি পার হয়ে গেছে! এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। তবে বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম জানিয়েছে, খালেদা জিয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ সময় পার করছেন। যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। 

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস আফসোস করে বলেছেন, ‘আমরা বোকার স্বর্গে বাস করেছিলাম, আমরা বুঝতেই পারিনি; খালেদা জিয়াকে মূলত জেলে নেয়া হয়েছে হত্যা করার জন্য।’ গতকাল বিকেলে স্বচক্ষে দেখে এসে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও বলেছে, ‘খালেদা জিয়ার যে অবস্থা তা সংকটাপন্ন। বাংলাদেশের সব চিকিৎসক সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেও এখানে চিকিৎসা আর সম্ভব নয়।’ দলের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদকও বলেছেন, ‘উন্নতি নেই— আরও অবনতি ঘটেছে শারীরিক অবস্থার।’ 

চিকিৎসা সূত্রগুলো বলছে, খালেদা জিয়ার শরীরে ওষুধ প্রয়োগ করা যাচ্ছে না। বহু জটিলতা থাকায় একটির ওষুধ দিলে অন্যটি ক্ষতির কারণ হচ্ছে। অনেক সময় শরীরে পালসও থাকে না। যাকে বলা চলে ক্রিটিক্যাল সময়, চিকিৎসকেরও কিছু করার থাকে না। এরই মধ্যে বেগম জিয়ার জীবন রক্ষার্থে সব শর্ত শিথিল করে  স্থায়ীভাবে মুক্তি ও বিদেশে গমনের অনুমতি দিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছেন তার ভাই শামিম ইস্কান্দার। এর উত্তরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আইনের অবস্থান থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে কিছুই করার নেই। তবে এ নিয়ে বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা দলের হাইকমান্ডের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন, খালেদা জিয়ার পুরো ইস্যুটি পরিবারের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বন্দি থেকে এ পর্যন্ত রাজনৈতিকভাবে শক্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। যেমন গেলো দুই বছর নির্বাচন ও সরকার পতনের এক দফায় সারা দেশে আন্দোলনের আবহ তৈরি করা হয়েছে। তেমনি খালেদা জিয়ার জন্য একক কর্মসূচি দিয়েও রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করা যেত। খালেদা জিয়ার করোনা হওয়ার  বিষয়টিও নিয়ে লুকোচুরি করেছে দলটি। পরে এক পুত্রবধূর হস্তক্ষেপে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। লিভার সিরোসিস ধরা পড়ার পরও বিএনপিতে ছিল নীরবতা। গেলো মাস থেকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আর উন্নতি হচ্ছে না। দিন দিন অবনতি হচ্ছে। 

দলের মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সব সদস্যই আশঙ্কার কথা বলছেন। অবশেষে গত রোববার থেকে খালেদা জিয়ার জন্য একক কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি। দেয়া হয় আল্টিমেটাম। তবে এই আল্টিমেটাম শুধুই যে বিএনপির পক্ষ থেকে এটি দলের ভেতরেও অনেকে মনে করছেন না। বিএনপির কূটনৈতিক মিশনের চোখ রাখা সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার বিষয়ে কূটনৈতিক মিশনও পজিটিভ। দেশের ভেতরে খালেদা জিয়ার কোনো অঘটন হলে হাইকমান্ডেরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে কষ্ট হয়ে যাবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো কূটনৈতিক মিশন চাচ্ছে না দেশে কোনো সংঘাত সহিংসতা হোক। 

খালেদা জিয়ার শারীরিক সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে বিএনপির স্বাস্থ্য-বিষয়ক সম্পাদক  ডা. রফিকুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, ‘খালেদা জিয়া ঝুঁকিপূর্ণ মুহূর্ত পার করছেন। তার শরীরের কোনো উন্নতি নেই। দিন দিন অবনতির দিকেই যাচ্ছে। তার এখন উন্নত চিকিৎসা ছাড়া আর কোনো পথ নেই।’ 

জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আমার সংবাদকে বলেন, ‘দেশবাসী দেখছে-শুনছে, খালেদা জিয়া কেমন আছেন। তাকে বারবার সিসিইউতে নেয়া হয়েছে। আমরা ডাক্তারদের মাধ্যমে যে খবর পাচ্ছি— খালেদা জিয়া ভালো নেই। অনেক বেশি ক্রিটিক্যাল সময় পার করছেন। উন্নত চিকিৎসা না পেলে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বিকেল ৪টায় আমি তাকে দেখতে যাই। তার যে অবস্থা তা সংকটাপন্ন বাংলাদেশের সব চিকিৎসক সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেও সম্ভব নয়। তাকে জরুরি ভিত্তিতে দেশের বাইরে নিতে হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে যে ৪৮ ঘণ্টার সময় দেয়া হয়েছে তা শুধু শুধু দেয়া হয়নি। তার অবশ্যই তাৎপর্য রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ২০ ঘণ্টা পার হয়ে গেছে। যদি খালেদা জিয়ার কিছু হয়ে যায় তাহলে সরকারকে সব দায় নিতে হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা বোকার স্বর্গে বসবাস করেছিলাম। আমরা বুঝতে পারিনি খালেদা জিয়াকে কেন আটক করা হয়েছে। আমরা মনে করেছিলাম, তিনি আদালতকে সম্মান জানিয়ে গেছেন, আবার সম্মান নিয়ে ফিরে আসবেন। আসলে খালেদা জিয়াকে মূলত সরকার হত্যা করার জন্যই কারাগারে নিয়ে গেছে। এটি সরকারের হত্যার পুরোপুরি পরিকল্পিত অ্যাজেন্ডা ছিল। আমরা আসলেই বুঝতে পারিনি। তাকে গ্রেপ্তার করে, অসুস্থ বানিয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে।’

 আব্বাস বলেন, ‘আ স ম আব্দুর রব, রাশেদ খান মেনন, হাজী সেলিম— তারাও এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসা নিয়েছেন। মানুষের জীবন বাঁচাতে পৃথিবীর কোনো আইন লাগে না। মানবিকতা আইনের ঊর্ধ্বে। আমি আশা করব, সরকার সেই সুযোগটি নেবে। খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠাতে কোনো বাধা দেবে না। হায়াত-মউত আল্লাহর হাতে, বাকিটা আমরা পরে দেখব। এ অবস্থায় যদি খালেদা জিয়ার কিছু হয়ে যায়— আওয়ামী লীগের কারো অস্তিত্ব আমরা বাংলাদেশে রাখব না। আন্দোলনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে খালেদা জিয়ার বিষয়ে আমরা অবশ্যই রাজপথে নামব।’