হকারদের দখলে গুলিস্তান

রক্ষা পায়নি আ.লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রবেশপথও

নুর মোহাম্মদ মিঠু প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২৩, ১২:০৯ এএম

নিয়ন্ত্রণ করছেন হেফাজতের মিজান— বলছেন ব্যবসায়ী ও আ.লীগ নেতাকর্মীরা

দলীয় অফিসের প্রবেশপথ থেকে হকার উচ্ছেদের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলব

—আবু আহমেদ মন্নাফী সভাপতি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আ.লীগ

 রাস্তায় দোকান বসিয়ে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরির কোনো সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে

—হায়াতুল ইসলাম খান
ডিসি, মতিঝিল বিভাগ  

রাজধানীর রাস্তায় পথচারীদের হেঁটে চলাচলের অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধকতা ‘ফুটপাত দখল’। ফুটপাত দখলে বেপরোয়া হকাররা। তাদের ফুটপাত দখলের নেপথ্যেও রয়েছে এলাকাভিত্তিক সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটই পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ফুটপাতে বসাচ্ছে হকার। সরেজমিন ঘুরে গুলিস্তানে হকারদের ফুটপাত দখলের চিত্র দেখে বোঝা মুশকিল— গুলিস্তানের ফুটপাত আসলে কার। হকারদের দখল থেকে রক্ষা পায়নি খোদ ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রবেশপথটিও। এটিও এখন চলে গেছে হকারদের দখলে। আশেপাশের স্থায়ী ব্যবসায়ী ও নেতাকর্মীরা জানান, পার্টি অফিসের প্রবেশপথটি দীর্ঘদিন ধরেই হকারদের দখলে রয়েছে। 

হকারদের উদ্দেশে পুলিশ বলছে, তাদের বোঝা উচিত ফুটপাত দখলের কারণে বহুমুখী প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। তাদের বারবার উচ্ছেদের পরও পুনরায় ফুটপাতে বসছে। উচ্ছেদের বিষয়ে কাজ চলছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।   

ব্যবসায়ী ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পার্টি অফিসের প্রবেশপথের ফুটপাত নিয়ন্ত্রণ করছেন মিজান নামের একজন। সেখানে পুলিশ প্রশাসনকেও ম্যানেজ করছেন তিনি। প্রবেশপথের দুই পাশে তার নিজেরও রয়েছে একাধিক দোকান। কর্মচারীদের মাধ্যমে ফুটপাত দখল করে ব্যবসা পরিচালনা করলেও মিজান থাকেন ব্যবসায়ীদের সমস্যা সমাধান, পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করা ছাড়াও বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের দায়িত্বে। পুলিশের কতিপয় সদস্যও সেখান থেকে চাঁদা নিচ্ছেন তারই মাধ্যমে।  ব্যবসায়ীসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও এ নিয়ে বিরক্ত। দলের সিনিয়র নেতাদের অনেকেই পার্টি অফিসে প্রবেশের ক্ষেত্রে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। অধিকাংশ সময় এমনও হয়েছে, প্রবেশপথেই গাড়ি রেখে হেঁটে পার্টি অফিসে যেতে হয়েছে তাদের। যদিও এ নিয়ে কোনোরকম ভ্রুক্ষেপই নেই কারোই। ফুটপাত দখলের চিত্র দেখে এটা মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক যে, মিজান ও তার হকারদের কাছে জিম্মি আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস ও দলটির নেতাকর্মীরা। 

জানতে চাইলে একাধিক হকার বলেন, মিজান গুলিস্তানে ইউনিট যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিভিন্ন মাধ্যমে তদবির করেই ফুটপাতের নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি। তিনি একাই নন, তার ভাইয়েরাও এখানে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করছেন। ব্যবসায়ীদের কারো কোনো সমস্যা হলে তার মাধ্যমেই সমাধান করতে হয়। নতুন হকার বসতে হলেও তার অনমুতি নিতে হয়। অন্যথায় পুলিশ দিয়ে হকারদের ডিস্টার্ব করান তিনি। যদিও তারা বলছেন, জনশ্রুতি রয়েছে একসময় হেফাজত নেতা ছিলেন মিজান। ২০০৬ সালেও মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের আন্দোলনের দিন খাবার সরবরাহের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। এরপর কীভাবে কিংবা কার মাধ্যমে তিনি যুবলীগের ইউনিট রাজনীতিতে জড়িয়েছেন, তা কেউই জানেন না। 

কেন্দ্রীয় অফিসের প্রবেশপথে হকারদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী আমার সংবাদকে বলেন, এগুলো কিছুই থাকবে না। আমরা বিষয়টি দেখছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গেও এসব উচ্ছেদের বিষয়ে কথা বলব।  

একই বিষয়ে মতিঝিল ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মঈনুল হাসান আমার সংবাদকে বলেন, এখানে ট্রাফিক পুলিশের যেমন সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, তেমনি সংশ্লিষ্ট থানা, ফাঁড়িরও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনেরও একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। সবার সম্মিলিত চেষ্টাতেই ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ করা সম্ভব। তবে পার্টি অফিসের প্রবেশপথে হকার উচ্ছেদের বিষয়ে আমরা চেষ্টা করব। তিনি বলেন, সেখানে যারা বসেছেন, তাদেরও বোঝা উচিত তাদের কারণেই রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে, জনসাধারণের চলাচলেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এটা উচিত নয়।   

জানতে চাইলে মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান আমার সংবাদকে বলেন, গুলিস্তানে প্রায়ই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। তবুও হকারদের দৌরাত্ম্য কমছে না। এছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অফিসের প্রবেশপথেও যেহেতু প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে তারা, বিষয়টি আমরা দেখব। রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ব্যবসা করার সুযোগ কারোই নেই। 

আরএস