পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে মেরেছেন ছাত্রদল নেতা : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
হামলা চালায় এবং ওই এলাকার বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর চালায়। এই সংঘর্ষের খবরে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পুলিশ সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুলিশের এক সদস্য প্রাণ হারান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, নিহত পুলিশ সদস্য পারভেজকে ছাত্রদলের এক নেতা কুপিয়ে হত্যা করেছে। যার ফুজেট পুলিশের কাছে রয়েছে। সংঘাতের খবর পেয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে অংশ নেয়া নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, পরে জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটের আশপাশের এলাকায় তাদের মিছিল করতে দেখা যায়। এদিকে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ চলাকালে যুবদলের ঢাকার এক ইউনিট সভাপতি প্রাণ হারান। পণ্ড হয়ে যায় বিএনপির সমাবেশও। এ সময় বিএনপি ২৯ অক্টোবর সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয়। সমাবেশ শেষ করে বিবৃতি দিয়ে জামায়াতে ইসলামীও ২৯ অক্টোবর হারতাল পালনের ঘোষণা দেয়। দলটি কোনো সংঘাতের সঙ্গে জড়ায়নি বলে জানিয়েছেন ডিবি পুলিশের প্রধান হারুন অর রশিদ।
বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশ সদস্য নিহত : বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে ডিউটিরত অবস্থায় পারভেজ (৩২) নামে এক পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয়েছেন। গতকাল বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটের দিকে মারা যান তিনি। নিহতের পুলিশ সদস্যের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে। ঢামেকের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক (আরএস) মো. আলাউদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে। এর আগে রাজধানীর নয়াপল্টন, কাকরাইল ও নাইটিঙ্গেল মোড়ে দফায় দফায় পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত পুলিশের ৪১ সদস্য আহত হয়েছেন। এদিকে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন দাবি করেছেন, রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে আগুন দিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের দুটি অ্যাম্বুলেন্স পুড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালের গেটসহ একাধিক স্থাপনায় হামলা করা হয়েছে।
নয়াপল্টনে যুবদল নেতা নিহত : রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে শামীম মোল্লা নামে যুবদলের এক নেতা নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার বিকেলে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়। শামীম মোল্লা মুগদা থানা যুবদলের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের এক নম্বর ইউনিটের সভাপতি। বাবার নাম ইউসুফ মোল্লা। গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপি মিডিয়া সেলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। এতে জানানো হয়, বিএনপির শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন যুবদল নেতা শামীম মোল্লা। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুগদা থানা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী জুয়েল। গতকাল সন্ধ্যায় এর রিপোর্ট লেখার সময় তার লাশ রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে ছিল বলে জানা গেছে।
শান্তিপূর্ণ সমাবেশে সংঘর্ষের শুরু যেভাবে : বেলা ১টার দিকে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালায় বিএনপির নেতাকর্মীরা, পুলিশের ভাষ্য— হঠাৎ করে হামলা শুরু করে তারা। এখান থেকে একে একে কাকরাইল, পল্টন, শান্তিনগর, আরামবাগ হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষ। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও ডিএমপির ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরাই প্রথমে সরকারি স্থাপনায় হামলা করেছে। বিএনপি কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে করার শর্তেই ডিএমপি কমিশনারের কাছ থেকে তারা অনুমতি নিয়েছে। হঠাৎ বেলা ১২টার পর (১টার দিকে) থেকে তারা প্রধান বিচারপতির বাড়ির ফটকে ও জাজেস কোয়ার্টারের সামনে (বিচারকদের বাসভবন) আক্রমণ করেছে। আইডিবি ভবনের সামনে দুটি গাড়িতে আগুন দিয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। পুলিশ সেটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। জানা গেছে, প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীরা গাছের ডাল ভেঙে ও হাতের লাঠি দিয়ে নামফলক, গেটে হামলা চালায়। তারা ভেতরে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এর মধ্যেই কাকরাইল ট্রাফিক পুলিশ বক্সে আগুন দেয় বিএনপি অনুসারীরা। পুলিশ বাধা দিতে গেলে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এই ঘটনার রেশ ধরে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। পুলিশের রমনা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, বিএনপি সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে বেশ কয়েক দফায় টিয়ারশেল ছোড়া হয়। দুটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয় বিএনপির সমর্থকরা। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। নয়াপল্টনের সমাবেশকে কেন্দ্র করে পরে কাকরাইল, সেগুনবাগিচা, হাইকোর্ট এলাকা, পল্টন থেকে বিজয়নগর পর্যন্ত সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে সাংবাদিক, পুলিশসহ অর্ধশতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সমাবেশকেন্দ্রিক পুরো এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ হয়।
এক ঘণ্টায় রাজধানীতে তিন বাসে আগুন : রাজধানীর কাকরাইল, মালিবাগ ও কমলাপুরে এক ঘণ্টার মধ্যে তিনটি বাসে আগুন দেয়া হয়েছে। গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে। প্রথমে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভারে বলাকা পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। একই সময়ে কমলাপুরে বিআরটিসির একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার রাশেদ বিন খালিদ জানান, বিকেলে মৌচাক ফ্লাইওভারে বলাকা বাসে ও কমলাপুরে বিআরটিসি বাসে আগুনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছে। আগুনে বাস দুটি পুড়ে গেছে। তবে কিভাবে আগুন লেগেছে, তাৎক্ষণিকভাবে সেই তথ্য দিতে পারেননি এই কর্মকর্তা। অন্যদিকে বিকেল ৫টা ২০ মিনিটের দিকে কাকরাইল মোড়ে একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। ডিএমপির রমনা থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, কাকরাইল মোড়ে একটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা শুনেছি। কে বা কারা আগুন দিয়েছে, সেই তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
কাকরাইলে পুলিশ বক্সে আগুন : রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, লাঠিসোঠা নিয়ে কাকরাইল মসজিদের সামনের মোড়ে একদল ব্যক্তি কয়েকটি বাস ভাঙচুর করছেন। অন্য মানুষজনের ওপরেও তাদের লাঠিপেটা করতে দেখা যায়। এদের বেশ কয়েকজন হেলমেট পরা ছিলেন। সেই সময় কাকরাইল মোড়ে একটি ট্রাফিক পুলিশ বক্সে আগুন দেয়া হয় বলে পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ ছাড়া আইডিইবি ভবনে রাখা একটি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়। বিএনপি কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ একাধিক রাউন্ড টিয়ার গ্যাস ছুড়েছে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কাকরাইল মসজিদের সামনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বহনকারী একটি বাস ও দুটি পিকআপে হামলা হয়। এসব বাস ও পিকআপ ভাঙচুর করা হয়। আওয়ামী লীগের অভিযোগ, বিএনপির নেতাকর্মীরা হামলা করেছেন। এ সময় সেখানে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
রণক্ষেত্র নয়াপল্টন সেগুনবাগিচা, বিজয়নগর পুরানা পল্টন : রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত রাজধানী। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজনা আরও ছড়িয়ে পড়ে। সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজার এলাকায় থেমে থেমে বিএনপি-পুলিশ-ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় বিট পুলিশের কার্যালয়ের সামনে একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়া হয়। সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুপুরে কাকরাইল মোড়ে বিএনপি নেতাকর্মী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর বিজয়নগরে পানির ট্যাংক এলাকায় পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের পাল্টা-পাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে দু’পক্ষের মধ্যে চেয়ার ছোড়াছুড়ি, ইটপাটকেল নিক্ষেপ চলে। পুলিশ সেখানে কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বিকেল সোয়া ৩টায় ফায়ার সার্ভিস আগুন লাগার খবর পায়। ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাফি আল ফারুক বিষয়টি সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা বেলা সোয়া ৩টায় রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে আগুন লাগার সংবাদ পাই। ঘটনাস্থলে আমাদের দুটি ইউনিট গেছে। আগুন লেগেছে নাকি কেউ আগুন লাগিয়েছে সে তথ্য তিনি তখনই জানাতে পারেনি। এর আগে রাজধানীর ফকিরাপুলে সংঘর্ষের ঘটনায় এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। তার মান পারভেজ, শনিবার বিকেল ৪টার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
সংঘর্ষের বিষয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, বিএনপির মহাসমাবেশ চলাকালে পুলিশ রাজধানীর নাইটিঙ্গেল মোড়ও অতিক্রম করেনি। তারা কিভাবে এই সমাবেশ পণ্ড করল? ওরা (বিএনপি) পুলিশের ওপর হামলা করেছে। গতকাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী একথা বলেন। পুলিশ মহাসমাবেশ পণ্ড করেছে বলে বিএনপির দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, বিএনপির সমাবেশ কোথায় পণ্ড করা হলো? আমরা তো দেখলাম প্রধান বিচারপতির বাসায় তারা হামলা চালিয়েছে। এরপর তাদের ওখান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ওরা ঘোষণা করেছিল নাইটিঙ্গেল ও আরেকটি এলাকার কথা বলেছিল। এর বাইরে তারা আসবে না বলেছিল। পুলিশ তো সেই নাইটিঙ্গেলের ভেতরে ঢোকেনি। এখানে পণ্ড হলো কী করে? ওরা হামলা করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, প্রধান বিচারপতির বাসায় হামলা হয়েছে কখনো শুনছেন নাকি? বিএনপি আগে থেকেই তাদের প্রস্তুতির কথা জানাচ্ছিল, এ বিষয়ে গোয়েন্দাদের কাছে কী তথ্য ছিল, পুলিশ সদস্যরা কেন সেটি মোকাবিলা করতে পারল না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যরা তো ওখানে ছিল। আওয়ামী লীগের একটি মিছিল যাচ্ছিল। হঠাৎ করে তার ওপর ওরা অ্যাটাক করে। আওয়ামী লীগের পেছনে ধাওয়া করতে করতে তারা প্রধান বিচারপতির বাসভবনের গেট ভেঙে সেখানে ডুকে পড়ে। ‘টিয়ারগ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড মেরে মহাসমাবেশ পণ্ড করে দিয়েছে পুলিশ’- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, তারা তো এটা বলবে। তারা পুলিশ মেরে ফেলেছে, এখন এটা বলবে না? তারা আরও কতকিছু বলবে। এইটা তো স্বাভাবিক। বিএনপির হরতাল ডাকা প্রসঙ্গে আসাদুজ্জামান খান বলেন, হ্যাঁ— তার একটা গ্রাউন্ড থাকবে না? তারা তো বলবেই। সরকারের পক্ষ থেকে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, যারা এগুলো করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জামায়াত বিশৃঙ্খলা করেনি, দাবি ডিবিপ্রধানের : রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় সমাবেশের জন্য জড়ো হওয়া জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা এখন পর্যন্ত কোনো বিশৃঙ্খলা করেনি বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। অনুমতি না থাকলেও জামায়াতের নেতাকর্মীরা মতিঝিল শাপলা চত্বর এলাকায় সমাবেশের জন্য জড়ো হয়। এ বিষয়ে ডিবির হারুন বলেন, জামায়াতের সঙ্গে পরবর্তীতে যে আলোচনা হয়েছে, সমাবেশে বক্তব্য রেখে তারা চলে যাবে। এ পর্যন্তই আমি জানি। তারা এখন পর্যন্ত কোনো বিশৃঙ্খলা করেনি। গতকাল দুপুরের পর তিনি এসব কথা বলেন।
হরতালের ঘোষণা বিএনপি-জামায়াতের : সরকার পতনের একদফা দাবি আদায়ে আজ ২৯ অক্টোবর সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি। গতকাল ২৮ অক্টোবর সমাবেশ থেকে এ হরতালের ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলটির মিডিয়া সেলের ফেসবুক পেজেও এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে। গতকাল নয়াপল্টনে সমাবেশে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষের পর হরতালের এ সিদ্ধান্ত এলো। জানা গেছে, নয়াপল্টনে বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের হামলা করেছে এমন দাবি করে এর প্রতিবাদে আজ রোববার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি পালন করবে দলটি। এদিকে আজ সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামীও। দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম এক বিবৃতিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা দেন। গতকাল সন্ধ্যার পর গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এটিএম মাছুম বলেন, রাজধানী ঢাকার শাপলা চত্বরে জামায়াত ঘোষিত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ বানচাল করার হীন উদ্দেশ্যে সরকার দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করেছে। মিটিং-মিছিল করা যেকোনো রাজনৈতিক দলের সংবিধান স্বীকৃত গণতান্ত্রিক অধিকার। জামায়াতের মহাসমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীদের বাস, লঞ্চ ও ট্রেন থেকে নামিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই গ্রেপ্তার সম্পূর্ণ বেআইনি, অগণতান্ত্রিক, অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। তিনি সরকারের এই অন্যায় গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
হরতালের জবাবে শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ : আজ রোববার সারা দেশে শান্তি সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গতকাল রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগের সমাবেশে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ঘোষণা দেন। এর আগে সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে রোববার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি। পরে জামায়াতে ইসলামীও হারতালের ঘোষণা দেয়। আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগও পাল্টা কর্মসূচি দেয়।
হরতালের বাস চালানোর ঘোষণা মালিক সমিতির : নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিত গতকালের মহাসমাবেশ থেকে হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপি। তাদের ডাকা হরতালের দিন গণপরিবহন চালানোর ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বাস মালিক সমিতি। গতকাল বিকেলে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ ঘোষণা দেন বাস মালিক সমিতি।
প্রসঙ্গত, গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করে বিএনপি। তাদের সমাবেশস্থলের দুই কিলোমিটার দূরত্বে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। মতিঝিলের শাপলা চত্বরের পাশে সমাবেশ করে জামায়াতে ইসলামী। বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে কাকরাইল মোড় এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় বিএনপি নেতাকর্মীদের। বিএনপি নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। পরবর্তীতে নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকেও সমাবেশের জন্য জড়ো হওয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। একপর্যায়ের রাজধানীর বিজয়নগর-কাকরাইল-রমনা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের জেরে দলটির মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে গেছে। পুলিশের দাবি দুপুরে সংঘর্ষের সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে পুলিশের ওপর। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে বিভিন্ন অলিগলি ও রাস্তায় ক্রমাগত রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে দেখা যায় পুলিশকে। এতে নয়াপল্টন-বিজয়নগর-কাকরাইল এলাকা পুরো ফাঁকা হয়ে যায়। বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষে একজন পুলিশ সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। এ সময় যুবদলের এক ইউনিট সভাপতিও প্রাণ হারান।
এদিকে হরতালে জনসাধারণের নিরাপত্তায় গতকাল রাতেই রাজধানীতে ১১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, রমনায় এক, মতিঝিল দুই ও পল্টনে দুই প্লাটুন বিজিবি টহলে থাকবে। এছাড়া সচিবালয়ে দুই ও প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।