দেশে উন্নয়নের ইতিহাসে এক নতুন সংযোগ বিদ্যুৎচালিত মেট্রোরেল। উত্তরা দিয়াবাড়ী স্টেশন থেকে মতিঝিল ২১ কিলোমিটারের এ পথ যেখানে বাসে যেতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা লাগে সেখানে মেট্রোরেল নিয়ে এলো মাত্র ৩০ মিনিটে। কম সময়ে যাতায়াত করতে পেরে যাত্রীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। স্বস্তির কথা জানালেন নগরবাসী। ডিজেলের বিকল্প হিসেবে প্রথম বিদ্যুৎচালিত এই মেট্রোরেলে প্রতিদিন মোট ৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বিদ্যুৎবিভাগ। বর্তমানে মেট্রোরেলের বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো)।
ডেসকো সূত্র জানায়, বৈদ্যুতিক ট্রেন পরিচালনার জন্য নিরবিচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহ বিবেচনা করে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ মতিঝিল উপকেন্দ্রে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) মানিক নগর গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে এবং উত্তরা উপকেন্দ্র পিজিসিবির টঙ্গী গ্রিড উপকেন্দ্র ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) উত্তরা গ্রিড উপকেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। তৃতীয় উপকেন্দ্রটি মিরপুর শেওড়াপাড়ার মেট্রো স্টেশনে নির্মাণ করা হয়েছে। ডেসকোর পুরাতন বিমানবন্দরের ৩৩ কেভি উপকেন্দ্র থেকে সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকবে। বঙ্গভবনের বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য স্থাপিত বিশেষ এ উপকেন্দ্র থেকে এ সংযোগ দেয়া হবে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, পাওয়ার গ্রিড অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) মূল তত্ত্বাবধানে ডেসকো, ডিপিডিসি সমন্বিতভাবে মেট্রোরেলের মোট বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। কোনো কারণে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া না গেলে বিশেষ ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। বিশেষ পরিস্থিতিতে মেট্রোরেলের এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম (ইএসএস) থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে মেট্রোরেলকে নিকটবর্তী স্টেশনে নিয়ে আসা হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা ব্লাকআউট হলেও চলবে মেট্রোরেল। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছে, সারা দেশে যতগুলো গ্রিড আছে, মেট্রোরেলের সঙ্গে প্রত্যেকটির সংযোগ আছে। একটি গ্রিড ফেল করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্য গ্রিডে সুইচ করবে। কোনো বিরাট বিপর্যয়ের কারণে দেশের সবকটি গ্রিডের ইলেকট্রিসিটি যদি ফেল করে (যা খুবই বিরল) তারপরও মেট্রোরেলের নিজস্ব জেনারেটর ট্রেনগুলোকে নিকটস্থ স্টেশন পর্যন্ত নিয়ে যাবে।
এদিকে স্বল্পসময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন যাত্রীরা। গতকাল বুধবার সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে মিরপুর থেকে মতিঝিলের উদ্দেশে মেট্রোরেলে ওঠেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবী আব্দুল আলিম। এ সময় তিনি বলেন, আগে মিরপুর-১০ থেকে অফিস যেতে সময় লাগতো এক থেকে দেড় ঘণ্টা, এখন মাত্র ১৫ মিনিটেই পৌঁছে যাচ্ছি। মেট্রোরেলে এসে মতিঝিল স্টেশনে নামা এক যাত্রী বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৮টায় ট্রেনে উঠেছিলাম কাজীপাড়া স্টেশন থেকে। ট্রেনটিতে আজকে অনেক মানুষ দেখেছি। সবার মুখেই ছিল স্বস্তির হাসি।’ এদিকে চলমান অবরোধে গণপরিবহন কম থাকায় অনেকেই মেট্রোরেলের সেবা নিচ্ছেন। গত কয়েক দিন মতিঝিল স্টেশনে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। এদিকে অবরোধে ‘স্বস্তির বাহন’ মেট্রোরেলে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। তবে, এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন কর্মজীবী মানুষ। টিকিট কাটতে দীর্ঘ সারিতে সিরিয়াল ধরতে হয় বলে অভিযোগ করেন এক বেসরকারি কর্মজীবী। মেট্রোরেল চালু হওয়ায় সাধারণ মানুষকে কিছু স্বস্তি দিচ্ছে মেট্রোরেল। সিট না পেয়ে অনেকে দাঁড়িয়েও গন্তব্যে পৌঁছান।
সাকিব নামে এক যাত্রী বলেন, মেট্রোতে একটু খরচ বেশি হলেও সময় বাঁচে। এ ছাড়া বিরোধী দলের কর্মসূচিতে বিভিন্ন জায়গায় বাসে আগুন দেয়ার ঘটনাও ঘটে। ফলে বাসে এখন অনেকটা অনিরাপদ। তবে মেট্রোতে এমন সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফলে এই পথের যাত্রীদের যাতায়াতের প্রধান বাহন হয়ে দাঁড়িয়েছে মেট্রোরেল। একই সঙ্গে সময় সাশ্রয় হয়েছে মতিঝিলে কর্মরত কর্মজীবীদের।
এদিকে শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের জন্য বুধবার সকাল থেকে দুটি বিশেষ মেট্রোরেল চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড-ডিএমটিসিএল। ডিএমটিসিএল জানিয়েছে, কেবল এমআরটি পাস কিংবা র্যাপিড পাস ব্যবহার করে ট্রেন দুটিতে ভ্রমণ করা যাবে। বিশেষ ট্রেন দুটি বর্তমানে চালু সব স্টেশনেই থামবে। উত্তরা টু মতিঝিল পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৬ এ ট্রেন পরিচালনায় দৈনিক যে পরিমাণ বিদ্যুৎ লাগবে তা একটি সাধারণ জেলা শহরের দৈনিক বিদ্যুৎ চাহিদার প্রায় সমান বলে জানান পল্লী বিদ্যুতের এক কর্মকর্তা। এ প্রকল্পের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা দেখভালের দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপক শেখ খলিলুর রহমান জানান, ছয় কোচের মেট্রোরেলের এক সেট ট্রেন উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সক্ষমতা অনুযায়ী সর্বোচ্চ যাত্রী নিয়ে পৌঁছাতে প্রায় ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত লোড নেবে। সূত্র জানায়, মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত চলাচল করতে অপেক্ষা করতে হবে ২০২৫ সাল পর্যন্ত। কমলাপুর পর্যন্ত রেল আসতে মোট ৭০ মেগাওয়াট চাহিদার মধ্যে ৩৫ মেগাওয়াট সরবরাহ করবে ডেসকো আর বাকিটুকু দেয়ার কথা রয়েছে ডিপিডিসির।
মেট্রোরেলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতে বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডের সব বিকল্প রাখা হয়েছে জানিয়ে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, কোনো সময়ে গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ বন্ধ হলে মেট্রোরেলের এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেমে থাকা ব্যাটারির ব্যাকআপ থেকে তাৎক্ষণিক বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হবে। প্রকল্পের সমীক্ষার সময়ই গ্রিড বন্ধের মতো বিপর্যয়ের বিষয়গুলো মাথায় নিয়ে নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ যদি ফেল করে তাহলে অটোমেটিক জেনারেটরগুলো চলবে। তার সাথে একটা ব্যাকআপ তৈরি করা আছে। কিন্তু ব্যাকআপটা বসে থাকবে না, কখনও মূলটা চলবে কখনও ব্যাকআপটা চলবে। দুটা সবসময় চালুর ভেতরে থাকবে, যাতে বিদ্যুতের কোনো সমস্যা না হয়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন কতটা স্ট্রং করা হয়েছে মেট্রোরেলের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা।
ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওসার আমীর আলী জানান, প্রথমে ডেসকো ২০২১ সালের ৮ মার্চ উত্তরার ১৩২-৩৩ কেভি উপকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়। এই রেল পরিচালনার জন্য ডেসকো প্রান্ত থেকে মোট ৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। চাহিদা অনুযায়ী মে