- জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে —দাবি বিরোধীদের
- নির্বাচনে প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে —দাবি ইসির
- ভোটার উপস্থিতি কম, তবে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে —জানিপপ
বিচ্ছিন্ন সহিংসতা, গুলি, ভোটকেন্দ্র দখলের চেষ্টাসহ নানা অনিয়মের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে গেল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সারা দেশে ২৯৯ আসনে ভোটগ্রহণ চলে। বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধীদলগুলো ভোটে অংশ না নেয়ায় এমনিতেই ভোটের মূল মেজাজ সৃষ্টি অনুপস্থিত। এ প্রেক্ষাপটে সরকারের অনুগত বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোট শরিকরা ভোটে অংশ নিলেও নৌকা প্রতীকের প্রভাব প্রতিপত্তির ও চাপের মুখে দলে বেধে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা ভোট বর্জন করেন। দল হিসেবে ভোটের মাঠে চ্যালেঞ্জই করতে পারেনি এক সময় সরকার পরিচালনাকারী এই দলটি। এ অবস্থায় ভোটের মাঠে নৌকার প্রার্থীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেলে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
কিন্তু বিভিন্ন স্থানে ভোটের অভিনব কায়দায় পেশিশক্তির বল প্রয়োগের অভিযোগ তোলে অনেক প্রার্থী ভোটের মাঠ ছেড়ে দেন। ভোটের দিনেও বিভিন্ন আসনে অন্তত ২৬ প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে খুব সহজেই জয়ের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। চূড়ান্ত ফলে দলটির দেড় শতাধিক প্রার্থী বিজয়ী হলে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠনের সুযোগ পাবে আওয়ামী লীগ।
শেখ হাসিনাসহ আ.লীগের নির্বাচিতদের মধ্যে যাদের নাম জানা গেছে : গতকাল রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ২৬৮ সংসদীয় আসনের ফলাফল প্রকাশিত হয়। ওই ২৬৮ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২০৪, স্বতন্ত্র ৫৩, জাতীয় পার্টি ৯টি এবং ওয়ার্কার্স পার্টি ও এনপিপি একটি করে আসনে বিজয়ী বলে খবর পাওয়া গেছে।
এদের মধ্যে গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া) আসনে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা (নৌকা) দুই লাখ ৪৯ হাজার ৯৬২ ভোট, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ আবুল কালাম (আম, এনপিপি) ৪৬০ ভোট পেয়েছেন। পঞ্চগড়-২ মো. নূরুল ইসলাম সুজন, ঠাকুরগাঁও-১ রমেশ চন্দ্র সেন, ঠাকুরগাঁও-২ মো. মাজহারুল ইসলাম, দিনাজপুর-৪ আবুল হাসান মাহমুদ আলী, নীলফামারী-১ আসনে মো. আফতাব উদ্দিন সরকার, নীলফামারী-২ আসনে আসাদুজ্জামান নূর, লালমনিরহাট-১ মো. মোতাহার হোসেন, লালমনিরহাট-২ আসনে নুরুজ্জামান আহমেদ, লালমনিরহাট-৩ মো. মতিয়ার রহমান জয়লাভ করেন, রংপুর-৪ আসনে টিপু মুনশি, কুড়িগ্রাম-৩ এ সৌমেন্দ্র প্রসাদ পাণ্ডে, কুড়িগ্রাম-৪ মো. বিপ্লব হাসান, জয়পুরহাট-১ সামছুল আলম দুদু, জয়পুরহাট-২ আসনে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।
বগুড়া-৫ আসনে মো. মজিবর রহমান (মজনু), বগুড়া-৬ আসনে রাগেবুল আহসান রিপু, বগুড়া-৭ আসনে মো. মোস্তফা আলম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে মু. জিয়াউর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ মো. আব্দুল ওদুদ, নওগাঁ-১ আসনে সাধন চন্দ্র মজুমদার, নওগাঁ-৩ সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্ত্তী, রাজশাহী-৬ মো. শািরয়ার আলম, নাটোর-৩ জুনাইদ আেমদ পলক, নাটোর-৪ মো. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী, সিরাজগঞ্জ-৩ মো. আব্দুল আজিজ, সিরাজগঞ্জ-৪ মো. শফিকুল ইসলাম, পাবনা-৫ গোলাম ফারুক খন্দ. প্রিন্স, মেহেরপুর-১ ফরহাদ হোসেন, মেহেরপুর-২ আবু সালেহ মোহাম্মদ নাজমুল হক, ঝিনাইদহ-১ মো. আব্দুল হাই, ঝিনাইদহ-৪ মো. আনোয়ারুল আজীম (আনার), মো. আনোয়ারুল আজীম (আনার), যশোর-২ মো. তৌহিদুজজামান, যশোর-৪ এনামুল হক বাবুল, নড়াইল-২ মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা, বাগেরহাট-২ শেখ তন্ময়, বাগেরহাট-৩ হাবিবুন নাহার, খুলনা-৩ এস এম কামাল হোসেন, খুলনা-৫ নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, সাতক্ষীরা-৪ আতাউল হক, বরগুনা-২ সুলতানা নাদিরা, পটুয়াখালী-২ আ স ম ফিরোজ, পটুয়াখালী-৩ এস এম শাহজাদা, পটুয়াখালী-৪ মো. মহিববুর রহমান।
ভোলা-১ তোফায়েল আহমেদ, ভোলা-২ আলী আজম, ভোলা-৩ নুরুন্নবী চৌধুরী, বরিশাল-৫ জাহিদ ফারুক শামীম, ঝালকাঠি-১ মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর, ঝালকাঠি-২ আমির হোসেন আমু, টাঙ্গাইল-১ আবদুর রাজ্জাক, টাঙ্গাইল-২ তানভীর হাসান (ছোট মনির), টাঙ্গাইল-৮ অনুপম শাহজাহান জয়, জামালপুর-৩ মির্জা আজম, ময়মনসিংহ-১ মাহমুদুল হক সায়েম, ময়মনসিংহ-২ শরীফ আহমেদ, ময়মনসিংহ-৪ মোহাম্মদ মোহিত উর রহমান, ময়মনসিংহ-৭ এ বি এম আনিছুজ্জামান, ময়মনসিংহ-৮ মাহমুদ হাসান সুমন, ময়মনসিংহ-৯ আব্দুস সালাম, ময়মনসিংহ-১০ ফাহ্?মী গোলন্দাজ বাবেল, ময়মনসিংহ-১১ মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ, নেত্রকোনা-৪ সাজ্জাদুল হাসান, নেত্রকোনা-৫ আহমদ হোসেন, কিশোরগঞ্জ-১ সৈয়দা জাকিয়া নূর, কিশোরগঞ্জ-২ সোহরাব উদ্দিন, কিশোরগঞ্জ-৩ মুজিবুল হক, কিশোরগঞ্জ-৪ রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, কিশোরগঞ্জ-৫ আফজাল হোসেন, কিশোরগঞ্জ-৬ নাজমুল হাসান, মানিকগঞ্জ-১ সালাউদ্দিন মাহমুদ, মানিকগঞ্জ-৩ জাহিদ মালেক, মুন্সীগঞ্জ-৩ মোহাম্মদ ফয়সাল, ঢাকা-১ সালমান ফজলুর রহমান, ঢাকা-৩ নসরুল হামিদ, ঢাকা-৮ আ ফ ম বাহাউদ্দিন, ঢাকা-১৩ জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা-১৬ মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ, ঢাকা-২০ বেনজীর আহমদ।
নরসিংদী-১ নজরুল ইসলাম, নরসিংদী-২ আনোয়ারুল আশরাফ খান, নরসিংদী-৪ নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, নরসিংদী-৫ রাজি উদ্দিন আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ-১ গোলাম দস্তগীর গাজী, নারায়ণগঞ্জ-২ নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ-৩ আবদুল্লাহ-আল-কায়সার, রাজবাড়ী-১ কাজী কেরামত আলী, রাজবাড়ী-২ জিল্লুল হাকিম, ফরিদপুর-১ আব্দুর রহমান, ফরিদপুর-২ শাহদাব আকবর, ফরিদপুর-৩ আব্দুল কাদের আজাদ, গোপালগঞ্জ-১ মুহাম্মদ ফারুক খান, গোপালগঞ্জ-৩ শেখ হাসিনা, শরীয়তপুর-১ মো. ইকবাল হোসেন, শরীয়তপুর-২ এ কে এম এনামুল হক শামীম, শরীয়তপুর-৩ নাহিম রাজ্জাক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ মো. মঈন উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪, কুমিল্লা-১ মো. আবদুস সবুর, কুমিল্লা-৭ প্রাণ গোপাল দত্ত, চাঁদপুর-১ সেলিম মাহমুদ, চাঁদপুর-৩ ডা. দীপু মনি, নোয়াখালী-৩ মো. মামুনুর রশীদ কিরন, নোয়াখালী-৫ ওবায়দুল কাদের, চট্টগ্রাম-১ মাহবুব উর রহমান, চট্টগ্রাম-৭ মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম-১৩ সাইফুজ্জামান চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৬ মুজিবুর রহমান, পার্বত্য খাগড়াছড়ি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, পার্বত্য রাঙ্গামাটি দীপংকর তালুকদার, পার্বত্য বান্দরবান বীর বাহাদুর উ শৈ সিং জয় লাভ করেন।
স্বতন্ত্র জয়ীদের মধ্যে যাদের নাম জানা গেছে : দিনাজপুর-১ আসনে মো. জাকারিয়া বিজয় লাভ করেন, নীলফামারী-৩ মো. সাদ্দাম হোসেন (পাভেল), রংপুর-১ মো. আসাদুজ্জামান, কুড়িগ্রাম-২ মো. হামিদুল হক খন্দকার, গাইবান্ধা-১ আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগার, আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগার, নাটোর-১ মো. আবুল কালাম, কুষ্টিয়া-২ মো. কামারুল আরেফিন, যশোর-৬ মো. আজিজুল ইসলাম, ফরিদপুর-৪ মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, হবিগঞ্জ-১ আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী ও হবিগঞ্জ-৪ সৈয়দ সায়েদুল হক (সুমন)
জাতীয় পার্টির জয়ীদের মধ্যে যাদের নাম জানা গেছে : ঠাকুরগাঁও-৩ হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, রংপুর-৩ গোলাম মোহাম্মদ কাদের, কুড়িগ্রাম-১ এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান, সাতক্ষীরা-২ মো. আশরাফুজ্জামান ও পটুয়াখালী-১ এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার।
এ ছাড়া, পাবনা-১ আসনে এনপিপির মো. শামসুল হক এবং বরিশাল-২ আসনে রাশেদ খান মেনন (ওয়ার্কার্স পার্টি) বিজয়ী হয়েছেন। গতকাল ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ভোটারের কোনো লাইন ছিল না। প্রায় সব বুথের দায়িত্বপ্রাপ্তরা অনেকটা অলস সময় কাটাচ্ছেন। সকালে ভোটাররা ভোটকেন্দ্র না আসার কারণে হিসেবে ভোট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছিলেন শীতের সকাল হওয়ার কারণে ভোটাররা আসছেন না। কিন্তু বেলা বাড়ার পর ১২টা থেকে ৩ পর্যন্তও ভোটকেন্দ্রে ভোটারের কোনো লাইন ছিল না। মাঝে মধ্যে দু’-একজন ভোটার কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেখা দেছে। তবে কিছু কিছু ভোটকেন্দ্রের বাইরে প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। দিনভর ভোটকেন্দ্রে চোখে পড়ার মতো কোনো উপস্থিতি দেখা না গেলেও বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানালেন প্রায় ৪০ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। তবে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি বলছে ২ শতাংশ লোকও ভোট দিতে যায়নি, দলটির দাবি আওয়ামী লীগের লোকেরাও এ ভোট বর্জন করেছেন।
ভোট গ্রহণ সর্বত্র নির্বিঘ্ন ছিল না : খবর নিয়ে জানা গেছে, ভোট গ্রহণ অবশ্য সর্বত্র নির্বিঘ্ন ছিল না। কোথাও কোথাও জাল ভোট দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। মুন্সিগঞ্জে সহিংসতায় ইতোমধ্যে প্রাণ গেছে একজনের। নরসিংদীতে জাল ভোট দিতে গিয়ে ধরা পড়েছেন শিল্পমন্ত্রীর ছেলে। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকরা বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রবেশ করে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগ পাওয়ায় গেছে। কোনো কোনো কেন্দ্রে ভোটের বাক্স ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছেন নৌকার প্রতীকের লোকেরা। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্রের ফলাফলও পাল্টে দেয়ার। ঢাকা-১৪ আসনে কল্যাণপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার আগেই প্রার্থীদের এজেন্টদের কাছ থেকে রেজাল্ট শিটে (ফলাফল বিবরণী) স্বাক্ষর নিয়ে রাখা হয়েছে। বেলা ৩টা পর্যন্ত ১৪ জন প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন।
রাজধানীর কয়েকটি ভোটকেন্দ্রের একটি বিশেষ বিষয় ছিল গণমাধ্যমকর্মী বা পর্যবেক্ষকদের দেখে ভোটারের লম্বা সারি তৈরি। তবে গণমাধ্যমকর্মী ও পর্যবেক্ষকরা চলে গেলে নিরুদ্দেশ হচ্ছে সেই সারি। নরসিংদী-৪ (বেলাব-মনোহরদী) আসনের একটি কেন্দ্রে ১২টি ব্যালট বই ছিনিয়ে নিয়ে নৌকা প্রতীকে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে ওই কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বাতিল করা হয়েছে। চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরীর পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে, দাবি বিরোধীদের : জনগণ ‘ডামি নির্বাচন’ প্রত্যাখ্যান করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘আজ (৭ জানুয়ারি) একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভোটকেন্দ্রে কোনো ভোটার নেই। একতরফা এই নির্বাচনেও রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখা হয়েছে।’ নির্বাচনকে ‘ভোটার ছাড়া নির্বাচন’ বলে অভিহিত করেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। গতকাল দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত সমাবেশে তারা এসব কথা বলেন। ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে গতকাল দুপুরে এ সমাবেশের আয়োজন করে গণতন্ত্র মঞ্চ। সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না নির্বাচনকে ‘ডামি ভোট’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘মানুষ তো নেই, ভোটার নেই। এটি একটি ভোটার ছাড়া নির্বাচন।’ নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে যাচ্ছে না বলে দাবি করেছে গণফোরাম (মন্টু) ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি। গতকাল বেলা ২টার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশে দল দুটির নেতারা এসব কথা বলেন। সমাবেশের আগে প্রেস ক্লাব ও পুরানা পল্টন এলাকায় ভোট বর্জন ও হরতালের সমর্থনে মিছিল করেন দল দুটির নেতাকর্মীরা।
নির্বাচনে প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে —দাবি ইসির : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। গতকাল ৭ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টায় নির্বাচন কমিশন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি। তিনি বলেন, সারা দেশে প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। এখন পর্যন্ত এটিই নির্ভরযোগ্য তথ্য। পরে সব তথ্য যোগ হলে এই তথ্য বাড়তে বা কমতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। এর আগে দুপুরে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব জাহাংগীর আলম জানিয়েছেন, গতকাল বেলা ৩টা পর্যন্ত ঢাকায় ২৫ শতাংশ, চট্টগ্রামে ২৭ শতাংশ, খুলনায় ৩২ শতাংশ, সিলেটে ২২ শতাংশ, ময়মনসিংহে ২৯ শতাংশ, রাজশাহীতে ২৬ শতাংশ, রংপুরে ২৬ শতাংশ ও বরিশালে ৩১ শতাংশ ভোট পড়েছে।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হয়েছে —ফিলিস্তিনি পর্যবেক্ষক দলের প্রধান : বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ফিলিস্তিনি নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের প্রধান হিশাম কুহাইল। গতকাল রোববার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি। হিশাম কুহাইল বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনাকারীরাও ভালোভাবে প্রশিক্ষিত ছিল। তিনি বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ে আমরা মূল্যায়ন করতে আসিনি। আমরা কোনো ধরনের সহিংসতা লক্ষ করিনি বলেও জানান তিনি।
ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে —জানিপপ : কুমিল্লার কয়েকটি আসন ও মুন্সীগঞ্জ এবং নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিলেন জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ (জানিপপ) চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। এসব জায়গায় তিনি বিভিন্ন নির্বাচন কেন্দ্র ঘুরে দেখেছিলেন। নির্বাচন কেন্দ্র ঘুরে তার মনে হয়েছে ভোটার উপস্থিতির সংখ্যা উপনির্বাচনগুলোর মতো। নির্বাচনে ব্যাপকভাবে কোনো হাঙ্গামা বা অশান্তির খবর পাওয়া যায়নি। আমাদের পর্যবেক্ষকরা সারা দেশের বিভিন্ন আসনে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেশ করলে তখন আমরা সত্যিকারের চিত্র বুঝতে পারব। মোটের ওপর বলতে গেলে নির্বাচনে ভোট কম পড়েছে তবে নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবেই হয়েছে।
শরীয়তপুরের একটি আসন থেকে আমাদের পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন সেখানে কেন্দ্র থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। সেখানে সরকারদলীয় প্রার্থীর লোকজনের দ্বারা ভোটকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। নির্বাচনের দিন সারা দেশে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, বিজিবি, পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন থাকায় এমনিতেই মারামারি হওয়ার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। যারা সংঘর্ষ বাধাতে পারত তারা সশস্ত্র বাহিনীর সামনে এসে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার সুযোগ পাননি। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টরা কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি করেনি বলে সারা দেশে নির্বাচন নিয়ে তেমন অপ্রীতিকর ঘটনা দেখা যায়নি। নির্বাচন কেন্দ্রগুলো ছিল শাসকদলের প্রার্থীদের কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে। ফলে কোথাও সাংঘর্ষিক কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।
আ.লীগ প্রার্থী মোস্তাফিজুরের প্রার্থিতা বাতিল : চট্টগ্রাম-১৬ আসনের (বাঁশখালী) আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে তার প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন-ইসি। ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানান, তিনি একাধিকবার আচরণ বিধি লঙ্ঘন করেছেন। আজ (৭ জানুয়ারি) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নানাভাবে হুমকি দেয়ায় তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। এর আগে নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করে ইসি। বাঁশখালীর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হারুন মোল্লা বাদী চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে এই মামলা করেন।
প্রসঙ্গত, গতকাল সকাল ৮টায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ভোটগ্রহণ চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। গতকাল রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জ-৩ সহ কয়েকটি আসনের ফলাফল পাওয়া যায়। তরকা প্রার্থীসহ আলোচিত অনেকেই এগিয়ে থাকার খবর পাওয়া যায়।