ভোগান্তি কমাতে পিক আওয়ার কমিয়ে আনা হবে, ১০ বছর এমআরটি পাসের সুবিধা দিয়ে পারবে
—মোহাম্মদ আবদুর রউফ, কোম্পানি সচিব, ডিএমটিসিএল
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) প্রকল্প এমআরটি লাইন-৬ এ আপস অ্যান্ড ডাউনে প্রতিদিন গড়ে ১৫২টি ট্রিপ দিতে পারে। ফলে প্রতিটি ট্রিপে গড়ে প্রায় এক হাজার ৬০০ জন যাত্রী চড়ছে। এতে এক দিনে মেট্রোরেলে গড়ে যাত্রী চড়তে পারে প্রায় দুই লাখ ৩৮ হাজার ৪৫৪ জন। পরিচালন ব্যয়ের ৬৫ শতাংশ আসে একক টিকিট ও এমআরটি পাস থেকে। বাকি খরচ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আয় করার চেষ্টা করছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। তা ছাড়া এমআরটি লাইন-৬ এর শুধু বিদ্যুৎ বিল বাবদ প্রতি মাসে তিন কোটি টাকা খরচ হচ্ছে বলে জানিয়েছে ডিএমটিসিএল সূত্র। তবে বিদ্যুৎ বিলের এই খরচ হলো মতিঝিল স্টেশন সম্পূর্ণরূপে চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত। পরিপূর্ণভাবে চালু হওয়ার পর চলতি মাসে বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ আরও বাড়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
ডিএমটিসিএল সূত্রের তথ্য মতে, এমআরটি লাইন-৬ এর মেট্রোরেলে দুই লাখ ৩০ হাজারের বেশি এমআরটি পাস বিক্রি হয়েছে। তা ছাড়া শুধু র্যাপিড পাস বিক্রি হয়েছে ৪০ হাজারের বেশি। সব মিলিয়ে প্রায় তিন লাখ কার্ড মানুষের হাতে রয়েছে। যারা প্রতিনিয়ত মেট্রোরেলে যাতায়াত করছেন। শুধু গত ২০ থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মেট্রোরেলের এমআরটি পাস বিক্রি হয়েছে ৩২ হাজার ৯৯৩টি আর একক টিকিট বিক্রি হয়েছে ছয় লাখ ৮৮ হাজার ৫৬৭টি। যদিও গড়ে প্রতিটি ট্রেনে দিনে এক হাজার ৬০০ জন যাত্রী চলাচল করছে কিন্তু তাতে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা রয়েছে দুই হাজার ৩০০ আটজন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঢাকার যানজট নিরসনে যে সব প্রকল্প নির্মাণ করা হয়েছে তার মধ্যে মেট্রোরেল অন্যতম। যদিও শুরুতে সবাই সন্দেহ পোষণ করেছিল, মেট্রোরেল চালু হলে আদৌ কোনো যাত্রী হবে কি-না। কিন্তু মেট্রোরেলের সব স্টেশন চালু হওয়াতে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। যাতায়াত খরচ গণপরিবহনের তুলনায় কিছু বেশি হলেও প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে মেট্রোরেলের যাত্রীর সংখ্যা। শুধু তাই নয়, টিকিট কিনতে যেমন দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয়। ট্রেনের ভেতরে জায়গা পেতে তেমনি প্রতিযোগিতা দেখা গেছে যাত্রীদের। তাই ভোগান্তি কমাতে দিন দিন বাড়ছে এমআরটি পাসের যাত্রীর সংখ্যা। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে যেন টিকিট কাটতে না হয় সে জন্য পাসের ব্যবস্থা রেখেছে এমআরটিএ কর্তৃপক্ষ। তবে যাত্রীদের এই আগ্রহ কতদিন পর্যন্ত থাকবে তাও দেখার বিষয়। সরেজমিন দেখা যায়, মতিঝিল মেট্রো স্টেশনে টিকিট কাটার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন যাত্রীরা। অল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে মেট্রোরেলে এলেও লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে কেটে যাচ্ছে অনেক সময়। অনেকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে বিরক্তবোধ করতে দেখা গেছে। তবে যাদের এমআরটি পাস আছে তাদেরকে লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে না।
এক বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা মজুমদার নামে একজন বলেন, আমি মতিঝিল থেকে শাহবাগে যাওয়ার জন্য এখানে এসেছি। ভেবেছিলাম মেট্রো দিয়ে দ্রুত সময়ে চলে যেতে পারব। কিন্তু এসে দেখি দীর্ঘ লাইন। আমি প্রায় ৫০ জনের পেছনে এসে দাঁড়িয়েছি। টিকিট পেতে প্রায় ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে হচ্ছে। টিকিট না কিনে যদি এমআরটি পাস করে নিতাম তাহলে এভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো না। ভাড়া যদিও বেশি তবে দ্রুত যাওয়া যায় এটিই সুবিধা। তবে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে কিছুটা বিরক্ত লাগে। আরেকজনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি ২০ মিনিট লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট কেটেছি। এখন ট্রেনের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। পাঁচ মিনিট পর ট্রেন আসবে বলে জানিয়েছে মেট্রোরেলের লোকজন। মেট্রোরেলে চড়তে যতটা সুবিধা টিকিটের জন্য দাঁড়িয়ে থাকাটা ততটা বিরক্তি মনে হয়। তবে এমআরটি পাস করে নিলে আর এই কষ্ট করতে হবে না। কারণ এমআরটি পাসে থাকলে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে হবে না। তখন সরাসরি ট্রেনে উঠা যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের কোম্পানি সচিব (যুগ্ম সচিব) মোহাম্মদ আবদুর রউফ আমার সংবাদকে বলেন, ‘গত ২০ থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩০ হাজার এমআরটি পাস বিক্রি হয়েছে। আগামী ১৫ দিন এমআরটি পাস কেনার হিড়িক থাকতে পারে। তাবে আস্তে আস্তে কিছুটা কমে আসবে। এমআরটি পাস একবার সংগ্রহ করলে তা ১০ বছর পর্যন্ত যাত্রীরা ব্যবহার করতে পারবে। যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে পিক আওয়ার ১০ মিনিট থেকে কমিয়ে সাত থেকে আট মিনিটে আনা হবে। তখন হয়তো যাত্রীদেরকে ট্রেনের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। যাত্রীদের বিভিন্ন অসচেতনতার কারণে সবাই ঠিক মতো উঠতে পারছে না। আশা করছি মানুষ অভ্যস্থ হলে এই সমস্যা থাকবে না।
মোহাম্মদ আবদুর রউফ আরও বলেন, পৃথিবীজুড়ে কোনো ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লাভবান হতে পারেনি। মেট্রোরেল থেকে যে ভাড়া পাই তা মোট খরচের ৬৫ শতাংশ পূরণ করতে পারে। বাকি অংশটুকু আমাদের বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আয় করার চেষ্টা করছি। এখন যেভাবে যাত্রীরা আগ্রহী হয়ে উঠেছে। আশা করছি আগামী দিনেও এভাবে থাকবে। তার জন্য আমরা পিক আওয়ারের সময়টা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। সে ক্ষেত্রে যাত্রীরা আর ফেরত যাওয়ার আগ্রহ করবেন না। উঠা এবং নামার ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে চললে সবাই সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। যাত্রীরা এখনো অভ্যস্ত হতে পারেননি। যার কারণে এমনটি হচ্ছে। ভেতরে জায়গা থাকা সত্ত্বেও মানুষের অসচেতনতার কারণে অন্যজন উঠতে পারছে না।