অধ্যক্ষের প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকা ঠিক নয়
—ড. আব্দুর রশিদ, উপাচার্য, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়
ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আহসান উল্লাহর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের যেসব অভিযোগ উঠেছিল তা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। এ কারণে সেই ভিসির দুর্নীতির সহযোগী দুই রেজিস্ট্রারকে বহিষ্কারও করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু সাবেক ভিসির অনিয়ম-দুর্নীতির অন্যতম সহযোগী মো. হাসান মাসুদ এখনো দাপটেই রয়েছেন। এখনো তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কমিটি ও একাডেমিক কাউন্সিলের সিনিয়র সদস্য। একই সঙ্গে দিনাজপুরের ভবানীপুর কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষের পদে রয়েছেন। মাদ্রাসার অধ্যক্ষের মূল দায়িত্ব রেখে বছরের অধিকাংশ সময় তিনি ঢাকা থাকেন। সময় কাটান ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে। নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সময় না দিয়ে ব্যস্ত থাকেন তদবির বাণিজ্যে। তার বিরুদ্ধে এতসব অভিযোগ থাকলেও সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলতে রাজি নন তিনি।
জানা যায়, আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসির বিরুদ্ধে ১১২ জনের নিয়োগ থেকে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ ছিল ইউজিসিতে। দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করতে ২০২১ সালের মে মাসে কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০২২ সালের জুলাই মাসে ওই তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠান তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ কুমার চন্দ। গত বছরের ১৯ জুন ওই তদন্ত প্রতিবেদন ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদকে পাঠিয়ে সুপারিশের আলোকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়মে ওই ভিসিকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিতেন দুই রেজিস্ট্রার (একজন সহকারী রেজিস্ট্রার ও একজন উপ-রেজিস্ট্রার) ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যক্ষ মো. হাসান মাসুদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালায় কোনো নিয়ম না থাকা সত্ত্বেও অধ্যক্ষ হাসান মাসুদ সারা দেশে ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসাসমূহ অধিভুক্তি বা অধিভুক্তি নবায়নের জন্য একক সদস্য হিসেবে প্রাক্তন ভিসি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে অধিভুক্তি নবায়নের নামে আর্থিক সুবিধাভোগী হয়েছেন। প্রাক্তন ভিসির নিয়োগ বাণিজ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনাকাটাসহ সব অনৈতিক কাজে তিনি ভিসির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পাশে ছিলেন। কিন্তু দুর্নীতির সহযোগিতা ও অন্যান্য অনিয়মের কারণে একজন সহকারী রেজিস্ট্রার ও একজন উপ-রেজিস্ট্রার চাকরিচ্যুত হলেও অজ্ঞাত কারণে বহাল তবিয়তে রয়েছেন হাসান মাসুদ।
অন্যদিকে ঠিক একই সময় অপর সহকারী রেজিস্ট্রার ফাহাদ আহমেদ মোমতাজীর নিয়োগকালীন সময়ের যোগ্যতা ৬ মাস কম হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্তে প্রমাণিত হলেও অদৃশ্য কারণে তিনি বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
এদিকে, খবর নিয়ে জানা গেছে, দিনাজপুর জেলার ভবানীপুর কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাসান মাসুদ বছরের অধিকাংশ সময়ই ঢাকায় থাকেন। ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে সর্বত্রই বিরাজ করেন তিনি। মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থাকলেও কোথাও তাকে কোনো জবাবদিহি করতে হয় না। অধ্যক্ষ হাসান মাসুদ বিভিন্ন প্রভাব খাটিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের একাধিকবার বোর্ড সভার সদস্য হয়েছেন। সূত্র বলছে, অধ্যক্ষ হাসান মাসুদের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এসবের মধ্যেও ১৫ মার্চ ২০২৩ অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় কোনোরূপ এজেন্ডা ছাড়াই অধ্যক্ষ হাসান মাসুদকে পুনরায় একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়।
অভিযোগ প্রসঙ্গে অভিমত জানতে অধ্যক্ষ মো. হাসান মাসুদের মোবাইল ফোনে কল দিলে রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর গত কয়েকদিন ধরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি তা ধরেননি। তার মুঠো ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি এ প্রসঙ্গে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আব্দুর রশিদ আমার সংবাদকে বলেন, অধ্যক্ষ হাসান মাসুদ যদি মাদ্রাসায় অনিয়মিত হন সেটা ঠিক না। কারণ, কোনো প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রতিষ্ঠানে না থাকলে সমস্যা হবে এটাই স্বাভাবিক। বিশ্ববিদ্যালয়ে মিটিংয়ের পর তার (হাসান মাসুদ) সঙ্গে আমাদের আর কোনো কাজ নেই। একজন শিক্ষককে অবশ্যই তার কাজে মনোযোগ দেয়া উচিত। আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করছি উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, যেকোনো ব্যক্তির ব্যাপারে অভিযোগ পেলে আমরা খতিয়ে দেখব।