অটোরিকশা টোকেন ব্যবসার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রাজধানীর পল্লবী ও রূপনগর এলাকায় মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে যুবলীগের দুই গ্রুপ। ইতোমধ্যেই একাধিবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে গ্রুপের নেতাকর্মীরা। এতে এখন পর্যন্ত আহত হয়েছে পুলিশসহ দুই গ্রুপের অন্তত ছয়জন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় একজনকে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা নেয়নি পল্লবী থানা পুলিশ। ক্ষমতাসীন দুই রাজনৈতিক দলের নেতাদের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘাতের শঙ্কা করছেন স্থানীয়রা অটোরিকশাচালকরা।
জানা যায়, বিবদমান যুবলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে এক গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন যুবলীগ নেতা (বিহারি) মুগারী আড্ডু। তিনি যুবলীগের কোনো পদ-পদবিতে নেই। তবে আড্ডুর বড় ভাই অ্যাডভোকেট মো. সেলিম সাবেক পল্লবী থানা আওয়ামী লীগের আইন-বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ভাইয়ের জোরেই আড্ডু টোকেন ব্যবসা শুরু করেন বলে জানান স্থানীয়রা। বর্তমানে আড্ডুকে মহানগর যুবলীগের এক নেতা শেল্টার দেন বলেও জানা গেছে।
অন্যদিকে অপর গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন পল্লবী থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রান। টোকেন ব্যবসার সময়ের কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ এসেছে আমার সংবাদের হাতে। এসব ফুটেজে দেখা যায়, গত ৩০ জানুয়ারি রাত ৯টা ২১ মিনিট। হঠাৎ করে স্থানীয় যুবলীগ নেতা মুগারী আড্ডুর নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একটি দল পল্লবীর বাউনিয়াবাদ এলাকার বিভিন্ন অটোরিকশার গ্যারেজে প্রবেশ করেন। এ সময় তারা গ্যারেজ মালিকদের অটোরিকশার জন্য টোকেন কিনতে বলেন। এক একটি টোকেনের দাম ধার্য করা হয় দুই হাজার টাকা। গ্যারেজ মালিকরা টোকেন কিনতে না চাইলে দেয়া হয় হুমকি-ধমকি। বলা হয়, পল্লবী মিরপুর এলাকায় অটোরিকশা চালাতে হলে তার কাছ থেকে টোকেন কিনতে হবে এবং এটি এক দিনের মধ্যেই। তবে তাতে সাড়া দেয়নি রিকশামালিকরা। এতেই বাধে বিপত্তি। এরপর গত ১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে আড্ডুর নেতৃত্বে পল্লবীর প্রধান সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তাণ্ডব চালায় আড্ডু বাহিনী। এ সময় আড্ডু বাহিনীর সামনে যেসব রিকশাওয়ালা পড়েছেন তাদেরই পিটিয়ে-কুপিয়ে আহত করা হয়। আড্ডু বাহিনীরা এই তাণ্ডব চলে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী। এই তাণ্ডবে ছয়জন আহত হয়। ভাঙচুর করা হয় একাধিক রিকশা। কেটে দেয়া হয় রিকশার তার (এই তাণ্ডবের একাধিক ফুটেজ আমার সংবাদের হাতে রয়েছে)।
আড্ডু বাহিনীকে বাধা দিতে গিয়ে পল্লবী থানা পুলিশের উপপরিদর্শক মোবারক হোসেনও বেদম পিটুনির শিকার হন বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও পিটিয়ে আহত করা হয় আর এক কনস্টেবলকে। এই ঘটনার প্রতিবাদে গত ৩ জানুয়ারি পল্লবীতে অটোরিকশাচালকদের ব্যানার কয়েকশ রিকশাচালক বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন। প্রতিবাদ মিছিলটি ১১ নম্বর লালমাটিয়া টেম্পুস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে কালশী রোড পূরবি হল প্রদক্ষিণ করে কালশী চৌরাস্তা মৌড়ে গিয়ে সমাপ্ত হয়। এতে প্রায় হাজার খানেক অটোরিকশাচালক টোকেন বাণিজ্যের প্রতিবাদে মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। রিকশাচালকদের এই গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন পল্লবী থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা। তবে তিনি প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না। পরপর যুবলীগের দুই গ্রুপের নেতাদের সশস্ত্র শোডাউনে পুরো পল্লবী ও রূপনগর এলাকাজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জানতে চাইলে করিম হোসেন নামের এক রিকশাগ্যারেজের মালিক আমার সংবাদকে বলেন, ‘গত ৩০ জানুয়ারি রাতে আড্ডু তার বাহিনী সঙ্গে নিয়ে গ্যারেজে আসে। আমার ম্যানেজার ছিল। আড্ডু ম্যানেজারকে বলেন, এক দিনের মধ্যে টোকেন কিনতে হবে। আমরা তাতে রাজি না হলে আড্ডু বাহিনী আমাদের রিকশাচালকদের ওপর হামলা চালায়। রিকশাচালকদের পিটিয়ে-কুপিয়ে আহত করা হয়। ভাঙচুর করা হয় রিকশা।
জানতে চাইলে শিবলু নামের আহত এক রিকশা ড্রাইভার আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমাদেরকে আড্ডু বাহিনীর লোকজন টোকেন কিনতে বলে, আমরা টোকেন না কেনায় তারা পিটিয়ে আহত করে। তিনি আরও বলেন, মিরপুর এগারো নম্বর স্ট্যান্ডে ব্র্যাক ব্যংকের নিচে আড্ডুর একজন লাইনম্যান রয়েছে। ওখানে কেউ রিকশা নিয়ে গেলেই আড্ডুর লাইনম্যানকে ২০-৩০ টাকা করে দিতে হয়।’ মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমার সংবাদকে বলেন, ‘মারধরের পরে আমরা থানায় মামলার জন্য গেছিলাম। ওসি মামলা নেয় নাই, বলছে— এখন ব্যস্ত আছি। পরে দেখছি। পরে আমরা হুমকি-ধমকির বিষয়ে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে একটি অভিযোগ দেই।’
ঘটনার বিষয়ে এসআই মোবারক হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, ‘হ্যাঁ ভাই এখন সুস্থ, অন্য অসুস্থতার জন্য হাসপাতালে গেছিলাম। আমি ডিউটিতে ফিরছি বলে তড়িঘড়ি করে ফোন রাখে দেয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লবী থানার ওসি বলেন, গত ১ তারিখে দুই গ্রুপের মধ্যে চাঁদা দেয়া এবং নেয়া নিয়ে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ হয়েছে। তাদের মধ্যে যারা আহত হয়েছে তারা এখনো কেউ মামলা করেনি। যদি অভিযোগ করে তাহলে আমলে নেয়া হবে। পুলিশ আহতের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমার পুলিশ তেমন আহত হয়নি। কোনো কাটেনায়-ফাটেনায় সামান্য আহত হয়েছে।’