সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ উইমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপ

একটি ভুল ঢাকার জন্য আরও বড় ভুল!

আহমেদ হৃদয় প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৪, ১২:৫১ এএম
  • ভূমিকা রেখেছেন ভারতীয় হাইকমিশন কর্মকর্তারাও

পুরো টুর্নামেন্টকে তারা হাস্যকর বানিয়ে ফেলেছেন 
—আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু সাবেক তারকা ফুটবলার
বাংলাদেশ জাতীয় দল

নানা বিতর্কের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল। অবশেষে ভারত ও বাংলাদেশ দুই দলকেই যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন করা হয়েছে। তবে ম্যাচ ছিল নাটকে ভরপুর। শুরু থেকেই দুই দল খেলতে থাকে স্বাভাবিকভাবেই। ১-০ গোলে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ সমতা ফেরায় অতিরিক্ত সময়ে। নির্ধারিত ৯০ মিনিট সমতায় শেষ হওয়ার পর অতিরিক্ত আরও ৩০ মিনিট খেলা হওয়ার কথা। তবে এই ম্যাচে তা হয়নি। ৯০ মিনিট সমতায় শেষ হওয়ার পর সরাসরি টাইব্রেকারে চলে যায় রেফারি। টাইব্রেকারে দু-দলই ১১টি করে গোল করে। নিয়ম অনুযায়ী ফল না আসা পর্যন্ত টাইব্রেকার চলতেই থাকবে। ম্যাচ রেফারি পরবর্তী শুটের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এমন সময় ম্যাচ কমিশানর রেফারিকে ডেকে আনেন এবং তৎক্ষণাত টসের সিদ্ধান্ত নেন। টসে জিতে ভারত উল্লাস শুরু করে দেয়। ততক্ষণেও কেউ বুঝতে পারেনি আসলে কী হচ্ছে। বাংলাদেশ অধিনায়ক আফঈদা তখনও বুঝতেই পারেননি এই টস আসলে কিসের জন্য। তবে টসে কেন ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হবে; বাংলাদেশ দলের কর্মকর্তারা রেফারি আর ম্যাচ কমিশনারের কাছে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। 

ম্যাচ কমিশনারের অদ্ভূতুড়ে টস কাণ্ডের পর ভারতকে প্রথমে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়েছিল। তারপরই বেঁকে বসে বাংলাদেশ। মুহূর্তেই আবার সিদ্ধান্ত পাল্টান ম্যাচ কমিশনার। তবে ভারত আর টাইব্রেকারে অংশ নিতে রাজি হয়নি। সে নিয়ে চলে আড়াই ঘণ্টার অচলাবস্থা। ভারতের খেলোয়াড়েরা মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে গেলেও প্রায় তিন ঘণ্টা মাঠে অবস্থান করেছেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা। অবশেষে নানা নাটকের পর মাঠে শুরু হয় মঞ্চ তৈরির কাজ। তখন বোঝা গেলো যেকোনো একটি ঘোষণা এসেছে। পরে অনেক নাটকের পর দু-দলকেই যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়। যুগ্ম চ্যাম্পিয়নশিপে ভারত রাজি না হওয়ার পর কর্তৃপক্ষের ভূমিকা কী ছিল? সাফের সাধারণ সম্পাদক এ বিষয়ে পরিষ্কার করেছেন। জানা গেছে, এমন অবস্থায় অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কল্যাণ চৌবে ও জেনারেল সেক্রেটারির সঙ্গে কথা বলেছে সাফের কর্তারা। তারা জানতে চেয়েছিল কেন এমন হলো। ম্যাচ কমিশনার ভুল করেছে। এ ব্যাপারটা তাদের কাছে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে। তবে যুগ্ম চ্যাম্পিয়নের বিষয়টি মানতে ভারতের ম্যানেজার রাজি হচ্ছিলেন না। কারণ যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন বাইলজে নেই।

এর আগে ভারতে আবারও ফাইনাল খেলার প্রস্তাবও দেয়া হয়েছিল। তাতে ভারত রাজি হয়নি। জানা গেছে, অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতির একটি ভূমিকা ছিল তাতে। ভূমিকা রেখেছেন ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনারের কর্মকর্তারাও। শেষমেশ ভারত রাজি হয়েছে কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু আমার সংবাদকে বলেন, একটি ভুলকে ঢাকার জন্য আরও একটি বড় ভুল করে ফেলেছেন তারা। বাইলজে ছিল না, যুগ্ম চ্যাম্পিয়নের বিষয়টি। তবুও এটি করা হয়েছে এবং পুরো টুর্নামেন্টকে তারা হাস্যকর বানিয়ে ফেলেছেন। 

তিনি বলেন, এখানে ম্যাচ কমিশনার বিরাট একটি ভুল করে ফেলেছেন। নিয়ম অনুযায়ী যতক্ষণ না পর্যন্ত ফল আসবে ততক্ষণ টাইব্রেকার চলতেই থাকবে। এভাবেই ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণ করা হয়। বিশ্বের কোথাও এমন ম্যাচে এ রকম টসের মাধ্যমে ফল নির্ধারণ করা হয় না। টুর্নামেন্টটি খুব সুন্দরভাবে চলছিল। সুন্দর একটি টুর্নামেন্টকে সাফের কর্তারা বিতর্কের মুখে ফেলে দিলেন। আশরাফ উদ্দিন চুন্নু বলেন, বাইলজে কোথাও লিখা ছিল না টসের মাধ্যমে ফল নির্ধারণ করা হবে। রেফারি পেনাল্টি চালিয়ে যাচ্ছিলেন এবং পরবর্তী শুটের জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। এর মধ্যে তাকে ডেকে এনে টস করতে বলা হয়। তবে ম্যাচ কমিশনার তার ভুল শুধরে নিতে পারতেন। একটি ভুল হয়েছে, সেটি স্বীকার করে তৎক্ষণাত একটি সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ছিল। পরবর্তীতে ভারত মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যায়। এরপর কিন্তু ভারতকে মাঠে আসার জন্য ৩০ মিনিট সময় দেয়া হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী রেফারির বেঁধে দেয়া ৩০ মিনিট পার হয়ে যাওয়ার পরও অফনেট দল যদি মাঠে না আসে তাহলে অপর দলকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। তবে এখানে তা করা হয়নি। ভারত পরবর্তীতে আর মাঠেই আসেনি। 

তিনি আরও বলেন, ম্যাচ কমিশনারের কী এইটুকু সময় ছিল না একটি বাইলজ পড়ার! তিনি কি জানতেন না বাইলজে কি আছে আর কি নেই। পুরো ব্যাপারটিই বাইলজের বাইরে করা হয়েছে। যেমন টসের কথা বাইলজে উল্লেখ করা ছিল তাও তারা এটি করেছে। অন্যদিকে যুগ্ম চ্যাম্পিয়নের কথাও বাইলজে উল্লেখ করা ছিল না তবুও তাদের যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন করা হয়েছে। পরবর্তী টুর্নামেন্টে এই বিতর্কের প্রভাব পড়বে কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এর প্রভাব কতটুকু পড়বে জানি না। তবে ভবিষ্যতে আয়োজক কমিটিকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। তবে টস কাণ্ড কী এবারই প্রথম? ২০১৮ সালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছিল সিনিয়র সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। ভারত, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা ছিল একই গ্রুপে। মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার ম্যাচ ড্র হয়েছিল। ভারতের বিপক্ষে মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা একই স্কোরলাইনে হেরেছিল। এতে মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার পয়েন্ট, গোল ব্যবধান, হেড টু হেড সবই সমান ছিল। গ্রুপের দ্বিতীয় সেরা দল নির্ধারণ হয়েছিল টসে। 

মালদ্বীপ-শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টসে জিতে ওই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনালে উঠেছিল। ভাগ্যের জোরে টসে জেতা মালদ্বীপই শেষ পর্যন্ত ওই আসরের চ্যাম্পিয়ন হয়। গ্রুপ পর্যায় থেকে নকআউট পর্বে যেতে টসের নিয়ম থাকে অনেক টুর্নামেন্টে। ২০১৮ সালে সাফে যেমনটি হয়েছিল। ২০২১ সালে কমলাপুর স্টেডিয়ামে ফেডারেশন কাপে ঘটেছিল বিশেষ ঘটনা। শেখ রাসেল ও আবাহনীর নকআউট পর্ব নিশ্চিত হয়েছিল আগেই। দুই দলের মধ্যে গ্রুপের শেষ ম্যাচ হয় ড্র। তাই গ্রুপ সেরা নির্ধারণের জন্য খেলা গড়ায় সরাসরি টাইব্রেকারে। সেই ম্যাচে দুই দল মিলে মোট ৩০টি শট নিতে হয়েছিল।