বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অংশে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর ফের ব্যাপক গোলাগুলি ও বোমা বর্ষণ শুরু হয়েছে। দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘাতে ইতোমধ্যে জান্তা সরকার সমর্থিত সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি ঘাঁটি দখলে নিয়েছে আরকান আর্মি। মিয়ানমারের চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘাত বাংলাদেশের মিয়ানমার সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতেও প্রভাব ফেলেছে। সর্বশেষ গতকাল কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের ছোড়া চারটি গুলি এসে পড়েছে বাংলাদেশের সীমন্তের দোকান ও বাড়িতে। ফলে স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মিয়ানমার থেকে ছুটে আসা একটি গুলি হোয়াইক্যং উত্তর পাড়ার হোছেন আলীর মুদির দোকানে পেছনের দেয়ালে এসে পড়ে এবং আরও তিনটি গুলি পড়ে হাইওয়ে রোডের পাশে হোয়াইক্যং মাঝের পাড়া আবছারের বাড়িতে ও উত্তর পাড়ার মানিকের বাড়ি এবং ধলুমিয়ার বাড়িতে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এ অবস্থায় আবারও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে সীমান্তে বসবাসকারীদের মধ্যে।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সিরাজুল মোস্তফা লালু বলেন, শনিবার ভোর থেকে হোয়াইক্যং পয়েন্টের মিয়ানমারের ওপারে শুরু হয় প্রচণ্ড গোলাগুলি। কয়েকটি বাড়িতে গুলি এসে পড়েছে। তিনি বলেন, সীমান্তের কাছে বসবাস করা লোকজন ভয়ে দিন কাটাচ্ছে। আতঙ্কে মানুষ সীমান্তের কাছে কোনো কাজ কর্ম করতে পারছেন না। দিন-রাত থেমে থেমে গুলির শব্দে কেঁপে উঠছে টেকনাফ সীমান্তের গ্রাম। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকায় চিংড়ি ঘেরে যেতে না পারায় আয় উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে চাষিদের। সময়মতো ঘেরে মাছের পরিচর্যা ও মাছ তুলতে না পারলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়বেন চাষিরা। মিয়ানমারে চলমান সংঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে একের পর এক অবিস্ফোরিত মর্টার শেল উদ্ধার করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি।
সর্বশেষ গতকাল তুমব্রু পশ্চিমকুল ১নং ওয়ার্ড এলাকার ব্রিজের পাশে একটি মর্টার শেল দেখতে পায় এলাকাবাসী। খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা সেটি উদ্ধার করে। এ নিয়ে ওই এলাকায় তিন দিনে তিনটি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল উদ্ধার হলো। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ওসি আব্দুল মান্নান। বিজিবি সূত্র জানায়, বিজিবি এগুলো উদ্ধার করে চারপাশে লাল পতাকা দিয়ে জায়গাটি বিপজ্জনক চিহ্নিত করে রাখছে। নিরাপত্তার স্বার্থে সড়কে দেয়া হয়েছে ব্যারিকেড। ফলে ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। স্থানীয়দের দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব গোলা যেন নিষ্ক্রিয় করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, এ ধরনের আরও অনেক অবিস্ফোরিত মর্টার শেল ধানক্ষেতসহ সীমান্তের আনাচে-কানাচে পড়ে থাকতে পারে।
এদিকে মায়ানমারে চলমান সংঘাতে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে দেশটির ৩৩০ জন সীমান্তরক্ষী। দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আলোচনার পর তাদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে মিয়ানমার। এরই মধ্যে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর একটি জাহাজ তাদের সীমান্ত রক্ষীদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিতে যাত্রা শুরু করেছে। প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত পাওয়া তথ্য মতে, জাহাজটি এখন সমুদ্র পথে আছে।
আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী জাহাজটি বাংলাদেশের জলসীমায় যাতে নোঙ্গর করতে পারে সে জন্য বাংলাদেশের অনুমতি চেয়ে কূটনৈতিক পত্র দিয়েছে মিয়ানমার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনী এখন মিয়ানমারের নৌজাহাজটিকে নোঙ্গর করার অনুমতি এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে।