বঙ্গবন্ধুর ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস আজ

প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা ছিল সম্পূর্ণ আলাদা

সৈয়দ সাইফুল ইসলাম প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২৪, ০১:০৯ এএম

বঙ্গবন্ধুর জন্ম মানেই বাঙালি জাতির স্বপ্ন পূরণের দিন 
—অধ্যাপক ড. আবদুল খালেক, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, আওয়ামী লীগ  

বঙ্গবন্ধুকে মনে-প্রাণে লালন ও ধারণ করি 
—অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, আওয়ামী লীগ   

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার স্থপতি বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস আজ। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তদানীন্তন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় পিতা শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতা সায়েরা খাতুনের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার সততা, সাহস, দক্ষতা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশ নামক স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র পেয়েছি আমরা। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন মানে জাতির স্বপ্নপূরণের দিন বলেন মনে করছেন প্রবীণ রাজনীতিক ও শিক্ষাবিদ ড. আবদুল খালেক। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ও সততা আমাদেরকে মুগ্ধ করে বলে মন্তব্য প্রবীণ রাজনৈতিক অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের। মাত্র ২০ বছর বয়সে ১৯৪০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বভারতীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগদানের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমানে মওলানা আজাদ কলেজ) ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। 

তিনি ১৯৪৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তান শাখার যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের টিকিটে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হন। ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আজীবন সোচ্চার এই অবিসংবাদিত নেতাকে রাজনৈতিক জীবনে বহুবার কারাবরণ করতে হয়। তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন-বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা ও পরবর্তীতে ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং বঙ্গবন্ধু উপাধি লাভ করেন। তাঁর সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ধাপে ধাপে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে থাকে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জিত হলেও তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বাঙালি জাতির ওপর নানা নির্যাতন শুরু করে। বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন। যা ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়াল্ড রেজিস্ট্রার এ অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

অন্যদিকে, ২৬ মাচর্ (২৫ মার্চ মধ্য রাতে) তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং তার নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালির বহু কাঙ্ক্ষিত বিজয় ও স্বাধীনতা অর্জিত হয়। সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিরামহীন সংগ্রামে অবদান রাখার জন্য তিনি বিশ্বশান্তি পরিষদ প্রদত্ত জুলিও কুরি পদকে ভূষিত হন। বিবিসির এক জরিপে তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হন। যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে বঙ্গবন্ধু যখন বিভিন্নমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করতে শুরু করেন, ঠিক সেই মুহূর্তে স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত শক্তি ও কায়েমি স্বার্থান্বেষী মহল তার বিরুদ্ধে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র শুরু করে এবং ওই ষড়যন্ত্রেরই অংশ হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি ধানমন্ডির বাসভবনে কতিপয় সেনা কর্মকর্তার হাতে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নিহত হন।

বাঙালি জাতির স্বপ্ন পূরণের দিন : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আবদুল খালেক মনে করেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন মানেই হলো বাঙালি জাতির স্বপ্ন পূরণের দিন। আমি বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে বাংলাদেশের জন্মদিন হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। কারণ, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রের জন্ম হতো না। দৈনিক আমার সংবাদের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, রাজনৈতিক নেতা তৈরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে রত্নগর্ভা বলা যেতে পারে। এই মাটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও এ কে ফজলুল হকসহ অসংখ্য নেতা জন্মগ্রহণ করেন। তবে সবাই বড় নেতা হলেও জাতির পিতা কেউ হতে পারেননি। এ ক্ষেত্রে শুধু একটি নামই আসবে আর তা হলো— জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা ছিল সবার থেকে আলাদা। তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন প্রত্যন্ত অজোপাড়াগাঁয়ে। তিনি যাদের কাছে মানুষ হয়েছিলেন তারাও ছিল নিম্নবিত্ত শ্রেণির। তখন সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ (পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ) ও মুসলিম লীগ। 

মুসলিম লীগের সব নেতা ছিলেন উচ্চবিত্তের। এর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতারা ছিলেন সাধারণ, মওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন সাধারণ থেকে উঠে আসা। তিনি এসব মানুষদের নিয়েই তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। আওয়ামী লীগ মানেই হলো গ্রাম বাংলার মানুষের দল। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে রাজধানীবাসী যতটা ভোট দিয়েছিল তার চেয়ে অনেক বেশি ভোট দিয়েছে গ্রাম বাংলার মানুষ। গ্রাম বাংলার মানুষই বঙ্গবন্ধুকে তৈরি করেছে। তা ছাড়া মুক্তিযুুদ্ধের সময় শহরের অধিকাংশ মানুষই আত্মরক্ষার জন্য গিয়েছিল গ্রামে। পাকিস্তানের ৯০ হাজার সৈন্য আত্মসমর্পণ করার মূল কারণ ছিল তিনি ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ো’। তখন সাড়ে সাত কোটি মানুষ তার কথা শুনে শুধু লাঠি দিয়েই দেশকে স্বাধীন করেছিল। পাকিস্তানিরা দেখতে পেলেন বাংলার সব মানুষ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। সে জন্যই তারা বাধ্য হয়ে আত্মসমর্পণ করেছে। আর এটিই হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রকৃত নেতৃত্ব, যিনি পরাধীন রাষ্ট্রকে স্বাধীন করেন। 

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব, সততা আমাদেরকে মুগ্ধ করে : আওয়ামী লীগের উপদেষ্ট পরিষদের অন্যতম সদস্য ও প্রবীণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন মনে মার্চ মাস হচ্ছে— আমাদের বাঙালির ইতিহাসে একটি গৌরবের মাস, ঐতিহাসিক মাস। কারণ এ মাসেই (১৭ মার্চ) বঙ্গবন্ধুর জন্ম হয়েছে। আমরা তাকে মনে-প্রাণে লালন, ধারণ করি, তার নেতৃত্ব, সততা আমাদের মুগ্ধ করে। আমার সংবাদের সঙ্গে স্মৃৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, তখন আমি বরিশাল শহর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি আর আবদুর রব সেরনিয়াবাত সভাপতি, তখন বন্ধুবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বরিশালে এসেছেন একটি জনসভায়, বঙ্গবন্ধু জনসভা শেষে সার্কিট হাউসে আসেন। ওই দিন ছিল ১৭ মার্চ। সার্কিট হাউসের ভেতরে একটি কেক সাজানো ছিল, বঙ্গবন্ধু প্রশ্ন করলেন তোমরা কি জানো না আজ আমার জন্মদিন? আমরা (নেতারা) ভীষণ লজ্জায় পড়ে গেলাম জাতির পিতার জন্মদিন আর আমরা জানি না। অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, বঙ্গবন্ধুর সাহচার্য পেয়ে আমি গর্বিত। 

দিবসটি উদযাপনে আজ দেশের সব সরকারি-আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন এবং জাতীয় শিশু কিশোর দিবস উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ।

দুদিনের কর্মসূচি আ. লীগের : আজ ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দুদিনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ১৭ মার্চ রোববার সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং সারা দেশে সংগঠনের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করবে দলটি। সকাল ৭টায় ধানমন্ডি ৩২ ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপির নেতৃত্বে জাতীয় নেতাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং শিশু সমাবেশে অংশগ্রহণ করবেন। 

এ ছাড়া মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৭ মার্চ বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যা ৬টায় মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চ (৩/৭-এ সেনপাড়া, পবর্তা, মিরপুর-১০)-এ খ্রিস্টান সমপ্রদায়, সকাল ১০টায় সবুজবাগ ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহার ও সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডাস্থ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ সমপ্রদায় এবং বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সমপ্রদায় প্রার্থনা সভার আয়োজন রয়েছে। আগামীকাল ১৮ মার্চ সোমবার বেলা ১১টায় আলোচনা সভা করবে আওয়ামী লীগ। তেজগাঁওয়ে ঢাকা আওয়ামী লীগ ভবনে এ আলোচনা সভা হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।