সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী

ডিমে সিন্ডিকেটের থাবা

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রকাশিত: মে ১৮, ২০২৪, ১১:৪৬ এএম
  • সিন্ডিকেট মুঠোফোনের ক্ষুদেবার্তায় ডিমের দাম নির্ধারণ করছে
  • প্রান্তিক খামারিদের অভিযোগের তীর আড়তদারদের দিকে
  • বিভিন্ন জেলায় অবৈধভাবে সংরক্ষণ করা ডিমের সন্ধান মিলছে

ডিমের বাজার অস্থির হয়ে পড়েছে। গত এক সাপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি ডজন ডিমের দাম ১২০ টাকা থেকে ৪০ টাকা বেড়ে ১৬০ টাকা হয়েছে। খুচরা বাজারে বাদামি ডিম এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা হালি। সে হিসাবে একটি ডিমের দাম পড়ছে ১৩ টাকা ৭৫ পয়সা। ডিমের এমন ঊর্ধ্বমুখী দামে ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। যাত্রাবাড়ী এলাকায় বাজার করতে আসা আসমাত আরা বলেন, এতদিন মাছ-মাংসের দাম বেড়েছে। এখন ডিমের দামও বাড়ছে। এভাবে সবকিছুর দাম বাড়তে থাকলে আমরা না খেয়ে থাকতে হবে। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, অতিরিক্ত গরমে ডিম উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বাজারে সরবরাহ কমেছে। ফলে ডিমের দাম বাড়ছে। ঢাকায় ডিমের বড় দুটি পাইকারি বাজার আছে। একটি কারওয়ান বাজার সংলগ্ন তেজগাঁও রেলস্টেশন পাইকারি ডিমের বাজার, অন্যটি পুরান ঢাকার কাপ্তানবাজার। এই দুই বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাইকারিতে ১০০ বাদামি ডিম বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১৮০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায়। যা গত এক সাপ্তাহ আগেও ডজনপ্রতি ২০০ টাকা কম ছিল। মালিবাগ এলাকার মুদি ব্যবসায়ী জাহিদ বলেন, ডিমের দাম এভাবে বাড়বে ভাবতে পারিনি। এক সপ্তাহ আগেও প্রতিদিন ডিম বিক্রি করতাম ৩০ থেকে ৪০ ডজন। দাম বাড়ার পর বিক্রি কমে গেছে। এখন প্রতিদিন ডিম বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ ডজন। পাইকারি বাজার থেকে ডিম আনছিও কম। গরমে ডিম নষ্ট হয়ে যায়। 

প্রান্তিক খামারিরা ডিমের দামের নৈরাজ্য নিয়ে তেজগাঁও আড়ত মালিকদের সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, কিছুদিন আগে ডিমের দাম অস্বাভাবিকভাবে কমিয়ে দেন আড়ত মালিকরা। সে সময় ডিম হিমাগারে মজুত করা হয়েছিল। এখন দাম বাড়িয়ে তারা মুনাফা করছে। সিন্ডিকেট মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তার মাধ্যমে ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণ করে। ঢাকার আড়তগুলোতে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ লাখ ডিম বিক্রি হলেও তারা সারা দেশে বিক্রীত চার কোটি ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে মোবাইলে ক্ষুদেবার্তার মাধ্যমে। প্রতিদিন ক্ষুদেবার্তা দিয়ে বাজারদর জানিয়ে দেয় সারা দেশে থাকা আড়তদারদের। তারা এখন ডিমের বাজারে সবচেয়ে বড় সিন্ডিকেট।

এদিকে প্রান্তিক খামারিদের অভিযোগ, অবৈধভাবে ডিম সংরক্ষণের সত্যতাও মিলছে। গত দুদিনে দেশের তিন জেলা কুমিল্লা, বগুড়া, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় স্থানীয় প্রশাসনের অভিযানে বের হয়ে আসছে অবৈধভাবে সংরক্ষণ করে রাখা ডিম। কুমিল্লায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে লালমাই উপজেলার বরল এলাকায় অবস্থিত মেঘনা কোল্ডস্টোরেজে অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে দেখা যায়, ওই এলাকার মেঘনা কোল্ডস্টোরে?জে অ?বৈধভা?বে ২১ লাখ ডিম সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। ঘটনায় কোল্ড স্টোরেজ কর্তৃপক্ষকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। বগুড়ায় আফরিন কোল্ডস্টোরেজে অভিযান পরিচালনা করে প্রায় পাঁচ লাখ ডিম মজুত পাওয়া যায়। ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রতিষ্ঠান?টি?কে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। মাদারীপুরে কোল্ডস্টোরেজে সাড়ে ছয় লাখ ডিম দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে রাখার অভিযোগে দুই ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে।

অন্যদিকে  মাছ, মাংস ও সবজির বাজারও ঊর্ধ্বমুখী। বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ এলেও আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে দেড়শ টাকা ছাড়িয়েছে কাঁচামরিচের কেজি, যা আগে ছিল সর্বোচ্চ ১০০ টাকা। আলু ৫৫-৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। স্থানভেদে পাকা টমেটোর কেজি ৫০-৬০ টাকা। পেঁপে ৮০-৯০, বেগুনও ১০০ টাকা ছুঁইছুঁই। করলা ৫০-৬০, ঢেঁড়স ৪০-৫০, বরবটি ১০০ থেকে ১২০ এবং মান ও জাতভেদে পটোলের কেজি ৫০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। 

মাংসের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, গরুর মাংসের কেজি ৭৫০-৮০০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা বেড়েছে এ সপ্তাহে। প্রতি কেজি স্থানভেদে ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহেও ১০-২০ টাকা পর্যন্ত কম ছিল। এছাড়া সোনালি ও লেয়ার জাতের মুরগির কেজি স্থানভেদে ৩৫০ থেকে ৩৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংস আগের মতোই ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে এখনও চড়া মাছের দাম। মাছের দাম তেমন একটা কমেনি। মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০, কাতল ৪০০ থেকে ৪৫০, কালিবাউশ ২৮০, তেলাপিয়া ২৫০, পাবদা ৫৪০, পাঙ্গাস ২০০ ও ইলিশ মাছ ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে