দেশের শেষ প্রান্ত অব্দি অপটিক্যাল ফাইবার যুক্ত করা হচ্ছে, প্রতিষ্ঠা করা হবে ১০ হাজার ল্যাব
—এসএম রফিকুন্নবী, অতিরিক্ত মহাপরিচালক, তথ্য ও প্রযুক্তি অধিদপ্তর
প্রধানমন্ত্রীর আইসিটিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের দক্ষতায় আইসিটি খাত অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে
—ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত সরকার প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি
ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের পরিকল্পনা করে ২০৪১ সালের মধ্য তা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজ— এই চারটি বিষয়কে ভিত্তি করে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রচেষ্টা চলছে। এ কাজে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার আগে নির্বাচনি ইশতেহারে রূপকল্প ২০২১-এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কাজ করে দেশে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
অর্থাৎ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে দেশ। বর্তমান স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের ভিত্তি হলো সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের সাফল্যই এখন সরকারকে একদিকে যেমন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সম্ভাবনা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে আত্মপ্রত্যয়ী করে তুলছে, অন্যদিকে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের জন্য সরকার ইতোমধ্যে জাইকার সহযোগিতায় ‘স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১’ বাস্তবায়নের একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করেছে। এই মাস্টারপ্ল্যানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হচ্ছে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তোলা, উদ্ভাবনী জাতি গঠন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল সমাজ বিনির্মাণ।
তৃতীয় শিল্পবিপ্লবের পর তথ্য ও প্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে বিশ্ব এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে। এটি মোকাবিলায় বিগত এক যুগে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। তথ্যপ্রযুক্তিতে ব্যাপক উন্নয়নের বদৌলতে দেশের জনসাধারণের জীবন সহজতর হয়েছে; ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে দেশ এগিয়েছে, কমেছে বেকারত্ব।
২০০৯ সাল থেকেই প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব সম্প্রসারণ ঘটেছে। প্রযুক্তিভিত্তিক তথ্য ও সেবা পৌঁছে গেছে দেশের প্রতিটি সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায়। এখন নতুন করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কাজ করছে সরকার। দেশে ডিজিটাল নবজাগরণ হয়েছে বলেও মত বিশেষজ্ঞদের। যুবসমাজের মধ্যে প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়িয়ে বেকারত্ব দূর করার পাশাপাশি দেশের সরকারি বিভিন্ন খাতকে প্রযুক্তিসেবার মাধ্যমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয় হয়ে উঠেছে সরকারের অন্যতম সফল মন্ত্রণালয়। প্রযুক্তিগত সেবা ব্যবহার করে ঘরে বসেই বিদেশের শিক্ষা ও পরিবেশের সঙ্গে সহজেই মিশে যেতে পারছে শিক্ষার্থীরা, বিদেশে পড়াশোনার জন্য স্কলারশিপ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন, চাকরির নিবন্ধন, হজযাত্রার নিবন্ধন, বিভিন্ন ধরনের অফিসিয়াল বা সরকারি ফরম সংগ্রহ, ই-টেন্ডারের মাধ্যমে টেন্ডার দাখিল, ট্যাক্স বা আয়কর রিটার্ন দাখিল, ভূমি রেকর্ড ডিজিটালকরণ, ই-গভর্ন্যান্স ও ই-সেবা, চিকিৎসাসেবা, গ্রাম পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদেই তথ্যগত সেবা প্রদান, দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, পণ্য বা সেবার বিনিময়ে আর্থিক খরচ প্রদানে ই-ব্যাংকিং, ঘরে বসেই বিভিন্ন বই পড়ার সুযোগসহ সহস্র ডিজিটাল কাজকর্ম অনলাইনেই সম্পন্ন করা যায়। সরকার দেশব্যাপী প্রায় ১০ হাজার গ্রামীণ ডাকঘর ও প্রায় সব উপজেলা ডাকঘরকে ই-সেন্টারে পরিণত করেছে। ডাকঘরের মাধ্যমে মোবাইল মানিঅর্ডার ও পোস্টাল ক্যাশ কার্ড সেবা চালু করা হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস বিল সহজেই পরিশোধ করার বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যম তৈরি করা হয়েছে। এসব কাজ দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কাজ করছে আইসিটি মন্ত্রণালয়। দেশের তরুণ সমাজকে প্রযুক্তি খাতে দক্ষতা বাড়াতে অর্ধশত হাইটেক পার্ক ও ইনকিউবিশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত সরকার বলেন, ‘বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের আইটি বিষয়ে দক্ষতা এ খাতকে এ উচ্চতায় নিয়ে গেছে। যদি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ল্যাব ও ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা আরও বাড়ানো যায়, তাহলে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে।’
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের এই মহাযাত্রায় ফ্রিল্যান্সিংয়ে নীরব বিপ্লব হয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের তরুণ-তরুণীরাও ফ্রিল্যান্সিং করে দেশে আনছে বৈদেশিক মুদ্রা। এ খাতকে সমৃদ্ধ করতে কাজ করে যাচ্ছে তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। ট্রেনিং সেশন ও প্রয়োজনীয় সেবার ব্যবস্থা করা হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং খাতকে এগিয়ে নিতে। এছাড়া জনগণের দোরগোড়ায় তথ্য ও প্রযক্তিগত সেবা পৌঁছে দিতে ডেটা ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে। গ্রাম পর্যায়ে এ সেবা পৌঁছে দিতে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ওয়াইফাই রাউটার স্থাপন ও নেটওয়ার্ক মনিটরিং সিস্টেমে সংযুক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা ওয়েব পোর্টাল, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা হয়েছে। এসব ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও দিকনির্দেশনা সরাসরি ব্যক্তি পর্যায়ে খুব সহজেই পৌঁছে যাচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও বিচার বিভাগ যৌথভাবে বাংলাদেশের বিচারিক ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজেশনে কাজ করে যাচ্ছে।
এছাড়া সরকারি মোবাইল হেল্প ডেস্ক তৈরি করে নির্দিষ্ট নম্বরে টোলফ্রি কল করে সহজেই সরকারি তথ্য ও সেবা পাচ্ছে। সময়ের প্রয়োজনেই বেড়ে চলেছে ই-কমার্স ও এফ-কমার্স ব্যবসা। অনলাইন এসব ব্যবসার মাধ্যমে খুব সহজেই পণ্য ও সেবা ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে। দেশে এ মুহূর্তে হাজার কোটি টাকার পরিধি অনলাইন ব্যবসার। সেই ব্যবসা প্রসারিত ও সহজতর করতে তথ্য ও প্রযুক্তি অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের লক্ষ্য তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা। যেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জীবনমানে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে আর এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। তথ্য ও প্রযুক্তি অধিদপ্তর বলছে, তৃণমূল পর্যায়ে নির্ভরযোগ্য ডিজিটাল একসেস, তথ্যপ্রযুক্তি-সমৃদ্ধ মানবসম্পদ উন্নয়ন, আইটি শিল্পের রপ্তানিমুখী বিকাশ এবং জনবান্ধব তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সমৃদ্ধ দেশ গড়তে কাজ করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে আইসিটি বিষয়ে অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে আইসিটি সার্ভে, গবেষণা, ডিজাইন ও উন্নয়নের নিমিত্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রচারণামূলক কার্যক্রম গ্রহণ এবং সহযোগিতা প্রদান করছে অধিদপ্তর। ই-গভর্নমেন্ট, ই-ইনফ্রাস্ট্রাকচার, ই-হেলথ, ই-কমার্স এবং অনুরূপ যে কোনো বিষয়ে অন্যান্য মন্ত্রণালয়/বিভাগকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। তথ্যের এ সরবরাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে দেশে নিরাপদ তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে সহায়তা করার পাশাপাশি জনগণকে নিরাপদ তথ্য আদান-প্রদানে সচেতন করা।
এ বিষয়ে তথ্য ও প্রযুক্তি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এসএম রফিকুন্নবী বলেন, ‘সারা দেশের শেষ প্রান্ত অব্দি অপটিক্যাল ফাইবার যুক্ত করা হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ভূমি অফিসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যুক্ত হবে। এছাড়া ১০ হাজার ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হবে।’