দেশের উপকূলীয় অঞ্চলসহ দেশজুড়ে তাণ্ডব চালিয়ে গেছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। গত রোববার রাতে উপকূলে আঘাত হানার পর সোমবার রাজধানী ছুঁয়ে যায়। রাজধানীতে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার পাশাপাশি তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। এতে ভোগান্তিতে পড়েন কর্মজীবী মানুষ। ডেমরার মাতুয়াইলসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ ছিল না। বিদু্যুৎস্পৃষ্টে রাজধানীতে ঘটেছে প্রাণহানিও। এছাড়া উপকূলের ১০ জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২১ জনে দাঁড়িয়েছে। রেমালের প্রভাবে ভারতের মিজোরামেও ভয়াবহতার ছাপ ফেলেছে। সেখানে পাথরখনিতে ধস নেমে কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। রেমালের তাণ্ডবে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার বাড়িঘর। ভেসে গেছে হাজার হাজার হেক্টর ঘের ও পুকুরের মাছ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গবাদিপশু ও পাখি। শুধু সুন্দরবনেই অন্তত ৩০টি হরিণের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। সরকারের সতর্ক অবস্থান ও উপকূল অঞ্চলের মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনায় ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কম হয়েছে। আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষতিগ্রস্ত উপকূল এলাকা সফরে যাবেন বলে জানা গেছে।
রাজধানীর ডিএনডি বাঁধে ২০ লক্ষাধিক বাসিন্দা পানিবন্দি : ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে লাগাতার বর্ষণ ও ড্রেনেজের পয়ঃবর্জ্য মিশ্রিত দুর্গন্ধময় পানিতে ডুবে আছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) বাঁধের অভ্যন্তরের ২০ লক্ষাধিক বাসিন্দা। বাসাবাড়ির ফ্রিজ, ওয়্যারড্রব, শোকেজসহ মূল্যবান মালামাল রক্ষার্থে রাতভর পানি সেচে বাসিন্দারা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৫২, ৫৩ ও ৫৮ থেকে ৭০ নম্বরসহ ১৮টি ওয়ার্ড এবং নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়ন এলাকার মুন্সিবাগ প্রধান সড়ক, অলিগলি, নিচতলার বাসাবাড়ি, রান্নার চুলা, মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, শিল্প-কারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনা পানিতে ডুবে গেছে। অনেক স্থানে ভেঙে পড়েছে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। বন্ধ হয়ে গেছে নিচতলায় বসবাসরত বাসাবাড়ির রান্না-বান্নার কাজ। অনেকে পয়ঃবর্জ্য পানির মধ্যে খাট উঁচু করে, অনেকে আবার বালতি ও মোটর দিয়ে সেচ দিয়ে বসবাস করছেন। এতে দুর্ভোগের পাশাপাশি রোগ জীবাণুতে আক্রান্তের ঝুঁকিও বাড়ছে বাসিন্দাদের। ভুক্তভোগীদের আকুতি কবে দূর হবে ডিএনডিবাসীর দুর্ভোগ।
জানা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের লালমিয়া সরকার রোড, মুরাদপুর মাদ্রাসা রোড, মুরাদপুর মেডিকেল রোড, মুরাদপুর হাইস্কুল রোড, মসজিদে আমানসহ ওয়ার্ডের প্রধান সড়ক ও অলিগলি বাসাবাড়ি, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিচতলার সবকিছুই পানিতে ডুবে আছে। ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাগানবাড়ি এলাকার অলিগলি, বাসাবাড়ি, কিবরিয়ার বাড়ির মোড়সহ ওয়ার্ডের নিচতলা দোকানপাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের নামা শ্যামপুর, মাদবরবাজার, শাহী মসজিদ রোড, সালাউদ্দিন স্কুল রোড, সবুজবাগ, ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেরাজনগর এ ব্লক, মেরাজনগর জামে মসজিদ, ঢাকা ম্যাচ, মেরাজনগর, ডি ব্লক ১-২-৩ নম্বর গলি, সি ব্লক শিশু কানন গলি, পূর্ব কদমতলী, মোহাম্মদবাগ নামাশ্যামপুর সড়কসহ পুরো ওয়ার্ডের নিচতলার সড়ক, দোকানপাট, কারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে ডুবে আছে। প্রায় একই অবস্থা এই ১৮টি ওয়ার্ডের।
সরকারের তৎপরতায় কমেছে ক্ষয়ক্ষতি : ঘূর্ণিঝড় রেমাল রোববার রাত ৯টার দিকে উপকূলীয় অঞ্চলের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানে। এ সময় সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীতে ছিল ভাটার প্রবাহ। যার কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে প্লাবিত এলাকার মানুষ পড়েছেন ভোগান্তিতে। যদিও ঘূর্ণিঝড় শুরুর আগেও সংশ্লিষ্ট সবগুলো মন্ত্রণালয় সতর্ক অবস্থান নেয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র, স্বেচ্ছাসেবীরা প্রস্তুতি নিতে পেরেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে রেখেছিলেন পুরো পরিস্থিতি। সোমবার ঘূর্ণিঝড় রেমাল যখন নিম্নচাপে রূপ নেয় তখনই ঘোষণা দেয়া হয় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মুহিববুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় সরকার সার্বিকভাবে প্রস্তুত ছিল। আঘাত হানার পূর্বে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় খাবার পৌঁছে দেয়া হয়। আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার সব লোককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে আমরা সামরিক ও বেসামরিক সব যানবাহনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের মেডিকেল টিমসমূহ প্রস্তুত ছিল এবং আছে। সামরিক বাহিনী ও নৌবাহিনীসহ প্রয়োজনীয় সব বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল।
রেমাল পরবর্তী লঘুচাপে উপকূলে আবারও ঝড়ের শঙ্কা : ঘূর্ণিঝড় রেমাল পরবর্তী লঘুচাপের কারণে বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য থাকায় উপকূলীয় অঞ্চলে ঝড়ের শঙ্কা রয়েছে। তাই সবগুলো সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর সংকেত বহাল রাখা হয়েছে। আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানিয়েছেন, সিলেট ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করা স্থল নিম্নচাপটি পূর্বদিকে অগ্রসর ও ক্রমশ দুর্বল হয়ে বর্তমানে সিলেট ও তৎসংলগ্ন আসাম এলাকায় লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। লঘুচাপটির প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। এই অবস্থায় সমুদ্রবন্দর, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শনে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী : দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে পটুয়াখালী যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল ২৮ মে দুপুরে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. নূর কুতুবুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জানা গেছে, আগামী ৩০ মে প্রধানমন্ত্রী পটুয়াখালী সফরে যাবেন। প্রধানমন্ত্রীর এ সফর ঘিরে প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মো. নূর কুতুবুল আলম জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে পটুয়াখালীর অন্তত তিন লাখ ২৭ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জেলার ২৩৫টি ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত ও এক হাজার ৮৬৫টি বাড়িঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে এতে। এছাড়া কৃষিক্ষেত্রে ২৬ কোটি ২১ লাখ ও মৎস্য খাতে ২৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
সুন্দরবনে ৩০ মৃত হরিণ উদ্ধার : ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে সুন্দরবনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের কবলে পড়ে মারা গেছে হরিণসহ অন্যান্য অনেক প্রাণী। এখন পর্যন্ত বনের শুধু কটকা এলাকা থেকে ৩০টি মৃত হরিণ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ১৫টি আহত হরিণকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এখনও বনজুড়ে তল্লাশি চলছে, তাতে মৃত হরিণের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়ে মৃত হরিণগুলো উদ্ধার করে বনবিভাগ। ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে বনের অভ্যন্তরে ২৫টি টহল ফাঁড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লবণ পানি ঢুকে নষ্ট হয়েছে অন্তত ৮০টি মিঠা পানির পুকুর। খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
পানির তীব্র সংকটে বরিশালবাসীর রান্না ব্যাহত : প্রায় দুইদিন বিদ্যুৎবিহীন থাকায় বরিশাল নগরীতে গৃহস্থালির কাজে ব্যবহারের পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে রান্নাবান্না। পানির অভাবে বন্ধ রয়েছে নগরীর বেশির ভাগ হোটেল-রেস্টুরেন্ট। এ জন্য কিনেও খাবার খেতে পারছেন না নগরবাসী। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে রোববার রাত ১টা থেকে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে গোটা নগরী। একই অবস্থা বিরাজ করছে জেলার ১০ উপজেলায়।
বন্যার ঝুঁকিতে ছয় জেলা : দেশের অভ্যন্তরে ও উজানে ভারতের রাজ্যগুলোতে বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়ায় ছয় জেলায় স্বল্পমেয়াদি বন্যার আভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। গতকাল এক পূর্বাভাসে সংস্থাটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সজল কুমার রায় এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা নদ-নদীগুলোর পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে পদ্মা নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। আজ ও আগামীকাল দুই দিনে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে, অপরদিকে গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী দুইদিনে এই অঞ্চলের প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে।
২২ উপজেলার ভোট স্থগিত : ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে তৃতীয় ধাপের আরও তিন উপজেলা পরিষদের নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত মঙ্গলবার এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে ইসি। স্থগিত হওয়া উপজেলাগুলো হলো— নেত্রকোণার খালিয়াজুড়ি এবং চাঁদপুরের কচুয়া ও ফরিদগঞ্জ। এর আগে সোমবার ১৯টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন স্থগিত করে কমিশন। স্থগিত হওয়া উপজেলাগুলো হলো— বাগেরহাটের শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ ও মোংলা; খুলনার কয়রা, পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া; বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া; পটুয়াখালী সদর, মির্জাগঞ্জ ও দুমকি; পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া; ভোলার তজুমদ্দীন ও লালমোহন; ঝালকাঠির রাজাপুর ও কাঠালিয়া; বরগুনার বামনা ও পাথরঘাটা এবং রাঙামাটির বাঘাইছড়ি। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ১০৯টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তারিখ চূড়ান্ত করে তফসিল ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে ২১ জনের মৃত্যু : ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাস দেখা দেয়। বহু জায়গায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে। ঝড়ে ভেঙে পড়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি, দেয়াল ও গাছপালা। গতকাল ২৮ মে সকাল পর্যন্ত রাজধানীসহ ১০ জেলায় অন্তত ২১ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। রেমালের তাণ্ডবে ঢাকায় চার, ভোলায় তিন, বরিশালে তিন, পটুয়াখালীতে তিন, চট্টগ্রামে দুই, খুলনা, সাতক্ষীরা, লালমনিরহাট, বরগুনা, কুষ্টিয়া ও কুমিল্লায় একজন করে মোট ২১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
ঢাকা : ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে দেশের অন্যান্য জেলার মতো রাজধানী ঢাকাতেও ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর এই বৃষ্টির মধ্যেই টিনের বেড়া, বৈদ্যুতিক খুঁটিতে স্পর্শ, বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে এবং ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চার্জ দিতে গিয়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন— মরিয়ম বেগম (৪৫), লিজা আক্তার (১৫), মো. রাকিব (২৫) ও আলামিন (২২)। গত সোমবার রাতে রাজধানী ঢাকার খিলগাঁও, উত্তর বাড্ডায় ও যাত্রাবাড়ীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের আলাদা চারটি ঘটনায় তারা প্রাণ হারান। বিদ্যুৎস্পৃষ্টে রাজধানীতে তিনজনের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া। তিনি বলেন, ঘটনা তিনটির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানাকে অবগত করা হয়েছে। এদিকে উত্তর বাড্ডায় কাজ করে বাসায় ফেরার পথে রাস্তায় পড়ে থাকা বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে আলামিনের মৃত্যু হয়েছে। ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, মরদেহটি হাসপাতালে জরুরি বিভাগে রাখা হয়েছে। বিষয়টি রাতেই বাড্ডা থানা পুলিশকে জানানো হয়েছিল।
বরিশাল : বরিশালে রেমালের তাণ্ডবে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। নগরের রুপাতলী এলাকায় সোমবার ভোর ৪টার দিকে একটি ভবনের ছাদের ওপরের নির্মাণাধীন দেয়াল ধসে পাশের খাবারের হোটেলের ওপর পড়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন— লোকমান হোটেলের মালিক লোকমান হোসেন ও কর্মী মোকসেদুর রহমান।
ভোলা : ভোলার তিন উপজেলায় শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে লালমোহন উপজেলার পশ্চিম উমেদপুরে ঘর চাপা পড়ে আব্দুল কাদেরের স্ত্রী মনেজা খাতুন (৫৫), দৌলতখান পৌরসভার মনির হোসেনের চার বছরের মেয়ে মাইশা ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাজড়া ইউনিয়নে গাছের ডাল পড়ে জাহাঙ্গীর হোসেন (৫০) মারা গেছেন। ভোলার জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
লালমনিরহাট : লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় ঝড়ে গাছচাপায় রেজিয়া বেগম (৭২) নামের এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার রাতে উপজেলার ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের মহিষতুলি গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তিনি ওই গ্রামের তাহের উদ্দিন মুন্সির স্ত্রী। ভেলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জমসের আলী জানান, সোমবার সন্ধ্যার পর বৃষ্টির সঙ্গে ঝড় ওঠে। এ সময় ভুট্টার শুকনো মোচা ভিজছিল। তা রক্ষা করার জন্য ঘরের বাইরে বের হন বৃদ্ধা রেজিয়া বেগম। এ সময় ঝড়ে বাড়ির একটি সুপারিগাছ ভেঙে বৃদ্ধার শরীরে পড়লে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে শওকাত মোড়ল (৬৫) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত শওকাত মোড়ল গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী গ্রামের মৃত নরিম মোড়লের ছেলে। গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম মাসুদুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পটুয়াখালী : ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে পটুয়াখালীতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। গত রোববার দুপুরের পর কলাপাড়ায় ফুফু ও বোনকে নিরাপদ স্থানে আনতে যাওয়ার পথে জোয়ারের পানিতে ডুবে মো. শরীফ (২৭) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত শরীফ অনন্তপাড়া এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীফের ফুপু মাতোয়ারা বেগম কাউয়ারচর এলাকায় বসবাস করেন। ওই বাড়িতে তার বোনও ছিল। দুপুর ২টার দিকে অনন্তপাড়া থেকে শরীফ তার বড় ভাই ও ফুফাকে নিয়ে বোন ও ফুফুকে উদ্ধার করতে যায়। এ সময় কাউয়ারচর এলাকা পাঁচ থেকে সাত ফুট পানিতে প্লাবিত ছিল। নৌকা না থাকায় সাঁতার কেটে তারা ফুফুর ঘরে যাওয়ার সময় সমুদ্রের ঢেউয়ের তোড়ে শরীফ হারিয়ে যান। ঘণ্টাখানেক পর ওই স্থান থেকে শরীফের মরদেহ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। এছাড়া দুমকি উপজেলায় ঝড়ো হাওয়ায় গাছচাপায় জয়নাল হাওলাদার নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড নলদোয়াস্লুইসগেট এলাকার বাসিন্দা। বাউফলে ঝড়ো হাওয়ায় একটি পরিত্যক্ত টিনশেড দোতালা ঘরের নিচে চাপা পড়ে আব্দুল করিম (৬৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
কুমিল্লা : কুমিল্লা নগরীতে নির্মাণাধীন একটি ভবনের দেয়াল ধসে সাইফুল ইসলাম সাগর (১২) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার বেলা ১১টার দিকে নগরীর শাকতলা এলাকায় নূর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে এ ঘটনা ঘটে। মৃত স্কুলছাত্র সাইফুল ইসলাম সাগর ওই প্রতিষ্ঠানের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ছিল। সে শাকতলা এলাকার অলী আহমেদের ছেলে। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) খাদেমুল বাহার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
খুলনা : খুলনায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে তীব্র বাতাস ও বৃষ্টিতে গাছ উপড়ে ঘরের ওপর পড়ে লালচাঁদ মোড়ল (৩৬) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার রাতে উপজেলার সুরখালী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের গাওঘরা গরিয়ারডাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। লালচাঁদ মোড়ল গরিয়ারডাঙ্গা গ্রামের গহর মোড়লের ছেলে। তিনি কৃষিকাজ করতেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. নাজমুল হুসেইন খাঁন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম নগরীতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। নগরীর বায়েজিদ এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল ধসে সাইফুল ইসলাম হূদয় (২৬) নামের এক যুবক মারা গেছেন। গত সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বায়েজিদের চন্দ্রনগর কলাবাগান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তিনি নির্মাণাধীন ভবনের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ধসে পড়া দেয়ালে চাপা পড়েন। বায়েজিদ ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. কামরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া নগরের কোতোয়ালি থানা এলাকায় খালে তলিয়ে অজ্ঞাতনামা এক যুবক মারা গেছেন। একইদিন দুপুরে থানার আছাদগঞ্জ শুটকিপট্টি চাক্তাই খালে এ ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরুল আলম আশেক বলেন, পানিতে ডুবে আহত একজনকে বিকালে হাসপাতালে আনেন স্থানীয়রা। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন।
কুষ্টিয়া : ঘূর্ণিঝড় রেমালে কুষ্টিয়ার মিরপুরে টিনের চালার নিচে পড়ে বাদশা মল্লিক (৬০) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছেন। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের দাসপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত বাদশা মল্লিক চিথলিয়া ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের দাসপাড়া এলাকায় মৃত খবির মল্লিকের ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চিথলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হক বাবলু।
বরগুনা : বরগুনা জেলার সদর উপজেলায় ঘরের ওপর পড়া গাছ সরাতে গিয়ে আব্দুর রহমান বয়াতি (৫৬) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের লেমুয়া গ্রামের মৃত খুতি বয়াতির ছেলে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম মিঞা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।