এক যুগ আগেও ফ্রিজ ছিল বিলাসী পণ্য, আভিজাত্যের প্রতীক। ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ খাতে সরকারের উন্নয়ন ও নীতিসহায়তার কারণে সেই দৃশ্যপট এখন পুরোই পালটে গেছে। দেশের নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের ঘরে পৌঁছে গেছে ফ্রিজ। ফ্রিজ এখন দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ও নিত্যব্যবহার্য পণ্য। সাশ্রয়ী দাম ও প্রান্তিক পর্যায়ে কিস্তি সুবিধা, ক্রেডিট কার্ডে ইএমআই বা সহজলভ্য ব্যাংক ঋণের কারণে ফ্রিজ এখন ঘরে ঘরে। আর এ সবকিছুই সম্ভব হয়েছে দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর কল্যাণে। বাংলাদেশে ফ্রিজ উৎপাদন করছে ১৩টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপ অন্যতম। দেশের ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বাজারে প্রতিষ্ঠানটির অবস্থানও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী বাহারি ডিজাইন, সাশ্রয়ী দাম, স্থায়িত্ব, বিদ্যুৎ সাশ্রয়, কম্প্রেসর ও বিক্রয়-পরবর্তী সেবা দিয়ে গ্রাহকের আস্থা অর্জনে সফল মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপ আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে নিয়ে আসছে নতুন নতুন মডেলের ফ্রিজ।
এ বছর আবহাওয়া ও ঈদুল আজহা সামনে রেখে বর্তমান মার্কেটে ফ্রিজের চাহিদা বেশি হওয়ায় মিনিস্টার ফ্রিজের বেচাকেনাও বিগত বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে বলে জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, ঈদুল আজহা আসন্ন। এ মুহূর্তে বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে চেস্ট ফ্রিজার ও ফ্রস্ট রেফ্রিজারেটরের। অন্যান্য ফ্রিজের চাহিদাও বেশ ভালো। দেশজুড়ে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ফ্রিজ সরবরাহ করতে বেগ পেতে হচ্ছে কোম্পানিগুলোর। তবে মিনিস্টার কর্মীদের নিরলস পরিশ্রমে গ্রাহকের কাছে সঠিকভাবে পণ্য পৌঁছাতে পারছেন তারা।
জানা গেছে, কোরবানির ঈদ ঘিরে মিনিস্টারের প্রস্তুতিও বেশ রমরমা। এবার দাবদাহের কারণে ফ্রিজের চাহিদা বেড়েছে। এরই মধ্যে ঈদুল আজহা উপলক্ষেও সৃষ্ট বাড়তি চাহিদার বিষয়টি সামনে রেখে গ্রাহকদের জন্য মিনিস্টার নিয়ে এসেছে ‘ফ্রিজ কিনুন হাম্বা জিতুন অফার’। যেখানে ফ্রিজ কিনলেই গ্রাহক পাবেন ক্র্যাচকার্ড। আর কার্ড ঘষলেই গ্রাহক পেতে পারেন অসংখ্য গরু ফ্রি বা ফ্রিজ কিনে আরেকটি ফ্রিজ ফ্রি। এছাড়াও রয়েছে নিশ্চিত মূল্যছাড়সহ আকর্ষণীয় সব উপহার।
আসন্ন ঈদ উপলক্ষে অসংখ্য নতুন মডেলের ফ্রিজ বাজারে নিয়ে আসছে মিনিস্টার। এর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় সিরিজ হচ্ছে মিনিস্টারের এজলেস রেফ্রিজারেটর সিরিজ। বাজারের অন্যান্য রেফ্রিজারেটরের তুলনায় মিনিস্টার দিচ্ছে ৬৬ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় সুবিধা। এছাড়াও মিনিস্টার রেফ্রিজারেটরে রয়েছে হাইটেমপার্ড গ্লাস ডোর, যা অত্যধিক চাপেও ভাঙে না। রয়েছে বিল্ট ইন স্ট্যাবিলাইজার। এই রেফ্রিজারেটরগুলো সম্পূর্ণ ফুডগ্রেডেড এবং এতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে আর ৬০০এ গ্যাস, যা একইসঙ্গে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে মিনিস্টারের একটি দক্ষ টিমও দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে।
মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপের কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রাহকসেবা নিশ্চিতে ও সার্ভিসিং সুবিধা সরবরাহে দেশজুড়ে ৩০০টিরও বেশি সার্ভিস পয়েন্ট এবং নিজস্ব কল সেন্টারের মাধ্যমে ২৪/৭ গ্রাহক পরিসেবা, ওয়ারেন্টি কভারেজ ও নির্ভরযোগ্য বিক্রয়োত্তর সহায়তা প্রদান করছে মিনিস্টার। যে কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি হলেই গ্রাহককে দ্রুত সার্ভিস দিতে একটি দক্ষ টিম সার্বক্ষনিক কাজ করছে। বাজারে শুধু মিনিস্টারই দিচ্ছে ১২ বছর পর্যন্ত কম্প্রেসার গ্যারান্টি সেবা।
এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, বাংলাদেশে ফ্রিজের বাজার এখন প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশের ফ্রিজের বাজারের বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ২ শতাংশ হারে। গত কয়েক বছরে মিনিস্টারের মার্কেটও বেড়েছে। রেফ্রিজারেটরের চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশই বর্তমানে পূরণ হয় দেশি কোম্পানির রেফ্রিজারেটরে। বাকি ২০ শতাংশ আমদানির ওপর নির্ভরশীল। মিনিস্টার রেফ্রিজারেটর দেশি রেফ্রিজারেটরের মার্কেটে বিশেষ অবধান রাখছে। আন্তর্জাতিক মার্কেটেও পদার্পণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ সংযোজনশিল্পে খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হারে শুল্ক কমানো হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দেশি শিল্পগুলোর জন্য আরও এক থেকে দুবছর কর সুবিধা অব্যাহত রাখা হয়েছে। দেশি শিল্পের সক্ষমতা অর্জনে বিদ্যমান এসব সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ রাজ্জাক খান রাজ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বছর বাণিজ্যমেলায় ‘মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপ’ পরিদর্শনকালে আমাদের পণ্য রপ্তানির ওপর বিশেষভাবে আলোকপাত করেছেন। খুব শিগগিরই মিনিস্টার ব্র্যান্ড আন্তর্জাতিক বাজারে পা রাখতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে বিশ্বব্যাপী ফ্রিজের চাহিদা বাড়ছে। সে অনুযায়ী ফ্রিজের বাজারের আকৃতিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে আমরা উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত বিশ্বমানের ফ্রিজ উৎপাদন করছি। তিনি আরও বলেন, মানুষ তার কষ্টের টাকায় ফ্রিজ কিনবে, সেই ফ্রিজে মাংসসহ বিভিন্ন পণ্য রাখবে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে যেন ফ্রিজে রাখা মাংস বা পণ্য নষ্ট না হয় এবং মিনিস্টার ব্যান্ডের নাম নিয়ে যেন গালমন্দ করতে না পারে সেজন্য আমরা আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে এমনভাবে ফ্রিজ তৈরি করছি, যাতে ২০ বছরেও কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি না দেখা দেয়।